শারীরিক না, সম্পর্কটা ছিল আধ্যাত্মিক!

0
451
Print Friendly, PDF & Email

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে ভারতে শেষ বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডুইনা’র (লেডি মাউন্টব্যাটেন) সম্পর্কটা শারীরিক ছিল না বলে দাবি করেছেন মাউন্টব্যাটেন দম্পতির কন্যা পামেলা হিক্স। সম্প্রতি প্রকাশিত তার গ্রন্থ ডটার অব এম্পায়ার-এ তিনি লিখেছেন, মায়ের সঙ্গে নেহরুর সম্পর্কটা ছিল আধ্যাত্মিক প্রেমের।
 
ডটার অব এম্পায়ারে ৮৩ বছর বয়সী লেডি পামেলা জানিয়েছেন, নেহরুর প্রতি তার মায়ের দুর্বলতার বিষয়টি বাবা লর্ড মাউন্টব্যাটেন অবগত ছিলেন, তবে বাধ সাধেননি তাতে।

প্রসঙ্গত, ত্রিশের দশকে লন্ডনের অভিজাত মহলে এডুইনা ছিলেন চৌম্বকীয় আকর্ষণী ক্ষমতার এক নারী। বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তার সঙ্গলোভী অভিজাত পুরুষদের কমতি ছিল না ওই সময়ে।  

ভারতে আসার আগে নেভি ক্যাপ্টেন মাউন্টব্যাটেন কর্তব্যকাজে প্রায়ই বাইরে থাকতেন। এ সুযোগে ইয়ার-বন্ধুদের সঙ্গে মৌজ-মাস্তিতে সময় কাটাতেন এডুইনা।   

এদিকে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং আধুনিক ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে খ্যাত নেহরুর সঙ্গে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী লেডি মাইন্টব্যাটেনের পরিচয়ের শুরু থেকেই সম্পর্কটা গভীরে রূপ নেয়— এটা অনেকটা স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার। তবে এডুইনা কন্যা পামেলা বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন। তার মতে নেহরুর সঙ্গ তার মাকে মানসিক শান্তি দিত যার জন্য তিনি ব্যাকুল থাকতেন। তিনি মনে করেন, পণ্ডিতজীর বুদ্ধিবৃত্তিক সান্নিধ্যে তার মা ভাবজগতের খোরাক পেতেন। এ কারণে তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি অস্থির থাকতেন। তারা দু’জনেই একে অপরের নিঃসঙ্গতা পূরণে পারষ্পরিক সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন।

পামেলা আরো লিখেছেন, ভারতে বসবাসকালীন নেহরুর সঙ্গে আড্ডায় আমিও দীর্ঘ সময় পার করেছি। আমার মা এবং নেহরু পরষ্পরের জন্য গভীর আকর্ষণ বোধ করতেন। তাদের সম্পর্ক যেন ‘দুই দেহ এক আত্মা’র মত ছিল।

পামেলা লিখেছেন, স্বাধীনতার ১০ বছর পর নেহরু আমার মাকে একটি চিঠি লিখেন। ওই চিঠিতে নেহরু লেখেন, আমাদের দু’জনের মাঝে এমন কোনো এক আকর্ষণ ছিল যার কারণে আমরা পরষ্পর পরষ্পরের কাছাকাছি আসি।

ফ্রেড স্টেয়ারের চার্লটন স্টুডিও’র নৃত্যপটিয়সী এডুইনার জন্য অনেক তরুণ-যুবক পাগলপারা ছিল। তার কদমে সমর্পিত হওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া ছিল অসংখ্য। এদের কারও কারও সঙ্গে তার গভীর ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল। সেই এডুইনা ওরফে লেডি মাউন্টব্যাটেন ভারতে এসে স্থানীয় উদীয়মান নেতা বিপত্মীক পণ্ডিত নেহরুর প্রেমে বে-এক্তিয়ার হয়ে গেলেন।

মাউন্টব্যাটেন বিষয়টি নজর করেছিলেন, কিন্তু স্ত্রীর জীবনের নয়া এই অধ্যায়ে উল্টো তাকে নিমগ্ন হওয়ার সুযোগ করে দেন। এডুইনার নয়া এই সম্পর্ক লর্ড মাইন্টব্যাটেনের জন্য ছিল এক ধরনের স্বস্তিকর পরিত্রাণের মত।

কন্যা পামেলার ভাষায়, মাউন্টব্যাটেন স্ত্রীকে বুঝতে চাইছেন না, তাকে অবজ্ঞা করছেন— রাত-বিরাত জুড়ে চলতে থাকা এ ধরনের নিত্য-অভিযোগের পাহাড় থেকে মাইন্টব্যাটেনকে মুক্তি দিয়েছিল স্ত্রী এডুইনার এই নতুন পাওয়া সুখ।

তিনি লিখেছেন, আমরা চারজন (বাবা, মা, আমি ও নেহরু) কোথাও একসঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময়ে এডুইনা আর নেহেরু থাকতেন পাশাপাশি— সব সময়ে।

এসব সময়ে, যখন তারা দু’জন গভীর আলাপে মগ্ন থাকতেন, বাবা আর আমি কায়দা করে পিছিয়ে পড়তাম। তবে কখনোই নিজেদেরকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতাম না।

মাইন্টব্যাটেন তাদের দু’জনকেই বিশ্বাস করতেন, বলেন পামেলা।

তার মতে, নেহেরু-এডুইনার সম্পর্কটা ছিল আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃদ্ধিক, শারীরিক নয়। শারীরিক সম্পর্কে মগ্ন হওয়ার মত তাদের সময়ও ছিল না আর জনসাধারণের কাছে সদা উন্মুক্ত তাদের জীবন-যাপন একথাই বলে যে তারা একান্তে কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি ছিল, মাউন্টব্যাটেনের আত্মমর্যাদাবোধ আর সহনশীলতা। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যিন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। পামেলার মতে, “বাবার ভেতরে ঈর্ষাপরায়ণতার পরিপূর্ণ অনুপস্থিতি আমাদের পরিবারকে ভেঙ্গে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল।  

১৯৬০ সালে এডুইনা মারা যান ৫৮ বছর বয়সে। আর ১৯৬৪ সারের ২৭ মে মারা যান নেহেরু।           

পামেলা লিখেছেন, মায়ের জিম্মায় নেহরুর লেখা প্রায় এক স্যুটকেস ভর্তি চিঠি ছিল। মা যখন খুব অস্থির বোধ করতেন তখন রাতে ওই চিঠিগুলো খুলে পড়তেন। আমিও ওইসব চিঠি পড়েছি। চিঠিগুলো পড়ে এটা মনে হয়েছে যে দু’জন দু’জনকে অনেক ভালোবাসতেন।

প্রসঙ্গত, জনসমক্ষে এডুইনা আর মাইন্টব্যাটেনের আদর্শ দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল। তবে বাস্তবে তারা দু’জনই আনন্দ-স্ফূর্তি-হাসি-কান্নায় যার যার জীবন আলাদাভাবে উপভোগ করে গেছেন।  

ভারত বিষয়ে মাউন্টব্যাটেন কন্যা পামেলার লেখা ইন্ডিয়া রিমেম্বার্ড নামে আরেকটি গ্রন্থ রয়েছে। 

শেয়ার করুন