নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ (২৮ নভেম্বর): নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চাঞ্চল্যকর এমরান হত্যা মামলার আসামী জাহিদুল ইসলামকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার রহস্য উম্মোচন করলো সিআইডি পুলিশ। গত ২২ নভেম্বর ধৃত আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়।
মামলার বিররনে জানা যায়, ২০০৭ সালের কোরবানী ঈদের পরদিন মহাদেবপুর উপজেলার জয়পুর বালুকা পাড়ার শমসের আলির ছেলে এমরান (১৮) কে এলাকার একটি আমবাগানে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে নিহত এমরানের বড় ভাই আঃ হাকিম মোল্লা বাদী হয়ে ২৭ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মহাদেবপুর থানায় অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামরা দায়ের করলে মামলাটি মহাদেবপুর থানায় তৎকালীন কর্মরত এস আই শহিদুল ইসলাম তদন্তভার পান। তিনি মামলায় সন্দেহভাজন আসামী হিসাবে তহিদুল ও দুলাল নামের দুই যুবককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ৩০/১১/২০০৮ তারিখে মামলাটির চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
মামলার চুড়ান্ত রির্পোটটির বিপরিতে আদালতে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি ১০ ফেব্রয়ারী ২০১০ তারিখে অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে প্রেরণ করেন। ওই সময় নওগাঁ সিআইডির পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁর বদলি জনিত কারণে মামলাটি পরবর্তী পরিদর্শক আব্দুর রশিদ ২০ নভেম্বর ২০১১ তারিখ থেকে তদন্ত শুরু করেন। কিন্তু তদন্তকালে তিনিও বদলি হলে মামলাটি গত ২১/০৭/১২ তারিখে বর্তমান পরিদশর্ক মাহাবুব আলমের হাতে পড়ে। পরিদর্শক মাহাবুব আলম মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে গত ২১ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন হামিম গার্মেন্টেসের সামনে থেকে মহাদেবপুর থানার রামচন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদকে গ্রেফতার করেন এবং ওই দিনই তাকে নওগাঁয় নিয়ে এসে সিআইডি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হন তিনি।
আদালতে গত ২২ নভেম্বর আসামী জাহিদের দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মতে জানা যায়, আসামী জাহিদ সহ মহাদেবপুর উপজেলার রবিউল, দুলাল, এমরান ও এমরানের ও দু‘বোন সুন্দরী এবং ফারজানা ঢাকার গার্মেন্টেসে চাকুরি করতো। এই সুত্রে রবিউল সুন্দরীকে এবং দুলাল ফারজানাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে। বিষয়টি এমরান জানার পর দুলাল এবং রবিউলকে এ ব্যাপারে অগ্রসর হতে নিষেধ করায় দুলাল ও রবিউলের সাথে এমরানের দ্বন্দ শুরু হয়। এরপর কোরবানী ঈদ চলে আসায় সকলে ঈদের ছুটিতে মহাদেবপুরে নিজ নিজ বাড়ীতে চলে আসে। বাড়ী আসার পর ঈদের পরেদিন রবিউল ও দুলাল মোবাইলে জাহিদকে ডেকে নেয় এবং মহাপদেবপুরের আত্রাই নদীর পাড়ে বসে এমরানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে তারা তাদের দলে রইচ উদ্দিন নামে আরো একজনকে সাথে নেয়।
পরে তারা পরিকল্পনা মতে ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে সন্ধ্যায় এমরানকে ডেকে নিয়ে গ্রামের বড় আমবাগানে নিয়ে যায়।
সেখানে গিয়ে আকস্মাৎ এমরানকে উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে এমরানকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের সময় জাহিদ একটি তোয়ালা দিয়ে এমরানের মুখ চেপে ধরে এবং অন্যেরা শরীরে বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। এ ভাবে খুন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং আসামী জাহিদুল ওরফে জাহিদ ওই রাতেই ঢাকা চলে যায়। মামলার আসামীরা বর্তমানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও রবিউল এখনো পলাতক রয়েছে।
সম্পাদনা, আলীরাজ/ রাফি, নিউজরুম