রুপসীবাংলা বিনোদন ডেস্ক : একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি শুধু নির্মাতা নন একজন অভিনেতাও। কবিতা লেখা এবং ছবির চিত্রনাট্যলেখাও তার নিয়মিত কাজ।
‘দি ফাদার’ ছবিটি দিয়েই তার নির্মাতা হিসেবে অভিষেক ঘটে। ‘তেজি’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘আম্মাজান’, ‘আব্বাজান’, ‘লুটতরাজ’, ‘ইতিহাস’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘অন্ধকার’, ‘কষ্ট’ সহ তার পরিচালনায় ডজনখানেক ব্যবসা সফল ছবি রয়েছে।
বর্তমানে তিনি নির্মাণের চেয়ে অভিনয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত। তবে ‘ইভ টিজিং’ নামে নতুন একটি ছবি নির্মাণ করছেন। ২৫ নভেম্বর গাজীপুরের সোহাগ পল্লী শুটিং স্পটে চলছিলো শাহীন সুমনের পরিচালনায় ‘জটিল প্রেম’ ছবির শুটিং। এ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। শুটিং স্পটে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর মুখোমুখি হন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্রের নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
আপনি তো এখন অভিনয়ই করছেন বেশি?
হ্যাঁ, অভিনয়টা বেশি করছি এ কথা ঠিক। কারণ যারাই আমাকে ডাকেন চরিত্র পছন্দ হলে আমি কাউকেই নিরাশ করি না। কারণ আমাদের দেশে ক্যারেক্টার আর্টিস্ট এর সংখ্যা কম।
কিন্তু আমরা তো আপনার কাছে ব্যবসা সফল ভালো ছবি আশা করছি। অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সে ছবি তো আমরা পাবো না…
আমারও তো ইচ্ছে করে ব্যবসায় সফল হিট ছবি নির্মাণ করতে। কিন্তু সামগ্রিক চিত্রটা উল্টে গেছে। একটা ভালো ছবির জন্য যে ধরনের সাপোর্ট দরকার সেটা নেই।
কি ধরনের সাপোর্ট নেই?
অনেক সংকট আমাদের। এখানে ভালো প্রযোজক নেই। হলের অবস্থা ভালো না। দর্শক কমে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতিটা ভালো না।
এর থেকে বের হবার পথ কি?
দর্শক তৈরি করতে হবে। প্রতিটি জেলায় ভালো মানের হল তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসা দরকার। দেখুন এখন বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা পিছিয়ে আছি। আধুনিক সিনেমা হল তৈরি করতে হবে। যাতে দর্শক আরাম করে ছবি দেখতে পারেন। নোংরা পরিবেশে বসে ছবি দেখতে দর্শকের ভালো লাগার কথা না।
কিন্তু ‘মনপুরা’ সিনেমা তো এসব ধারণা পাল্টে দিয়েছে…
এটা আমি স্বীকার করি ভালো সিনেমা হলে হল কোন বিষয় না। কিন্তু ‘মনপুরা’ সব সময় হয় না। আর সব সময় সিনেমা হলে যাতে দর্শক যায় সে পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে।
একটা অভিযোগ আছে যে, এফডিসিতে এখন যে সব সিনেমা তৈরি হচ্ছে তার অধিকাংশ সিনেমারই দৃশ্য, মিউজিক, লাইট এবং গল্প দক্ষিণের সিনেমা বা বলিউডের সিনেমার নকল করে তৈরি করা হচ্ছে। এবং সিডি দেখে দেখে শুটিং হয়…
দেখুন পৃথিবীর যে সকল দেশে ছবি তৈরি হয়। সব দেশেই নকল ছবি তৈরি হয়। এটা খারাপ কিছু না। কিন্তু কথা হল নকল করার জন্যও এক ধরনের মেধার দরকার হয়। যে কারণে দেখবেন এসব ছবির আগা মাথা খুঁজে পাওয়া যায় না। নকলটাও ঠিক মত করতে পারে না তারা।
তাহলে বাংলা সিনেমার উন্নয়ন সম্ভব কিভাবে?
মেধাবী নির্মাতাদের এফডিসির সিনেমা বানাতে আসতে হবে। একটু মেধাবী যারাই সিনেমা বানাতে আসেন তারাই দেখি এফডিসিতে আসলে কেমন নাক উঁচু করে থাকেন। নাক উঁচু করে রাখলে তো হবে না। তারাই তো পারে আমাদের সিনেমার চেহারা বদলাতে। আমার কথা হচ্ছে এইসব আর্ট ফিল্মের কথা বলে লাভ নেই। সিনেমা বানাতে হবে দর্শকের জন্য আপনার সিনেমা শিল্পের জন্য। এই সিনেমাকে ঘিরে যে বিশাল পরিবার তৈরি হয়েছে এ পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফিল্ম বানানো দরকার।
প্রযোজক সমিতি, শিল্পী সমিতি, পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি বলতে যে সকল সমিতি আছে। এ সমিতিগুলো কি ভূমিকা রাখছে আমাদের সিনেমার উন্নতির জন্য?
সমস্যা হয়েছে সংগঠন আছে কেবল মাত্র নামে। কাজে নেই। কারণ এ সমিতিগুলোর নেতা কারা? এদের কি কোন গ্রহণযোগ্যতা আছে। মেধাহীন মানুষগুলো এই সমিতি চালায়। এরা তো সরকার পক্ষের সঙ্গে কথা বলার সাহসই পায় না। এরা কি ভূমিকা রাখবে আমার জানা নেই।
যতটুকু জানি আপনি বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মনোনিতদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবারে যারা পুরস্কার পাচ্ছেন তারা কি সঠিকভাবে নির্বাচন হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
পুরস্কার পরিমাপ করার তো কোন মাপ কাঠি নেই। আর সকল পুরস্কার নিয়েই বির্তক থাকে এটাই স্বাভাবিক। পুরস্কার তো মূলত নির্ভর করে জুড়ি বোর্ডের মেধা ও রুচির উপর। জুড়ি বোর্ড যেটাকে ভালো মনে করবেন সেটাকেই পুরস্কার দিবেন। কিন্তু আমার কাছে একটি বিষয় খুবই লজ্জাজনক মনে হয়েছে। আলমগীর সাহেব [নায়ক আলমগীর] গত বার জুড়ি বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবং পুরস্কার নিয়েছেন। তিনি এবারও জুড়ি বোর্ডের সদস্য হয়ে পুরস্কার নিতে যাচ্ছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই।
জুড়ি বোর্ডের সদস্য নিজে পুরস্কার নেন। আলমগীর সাহেবের লজ্জা নেই। কারণ গতবার তার এ বিষয়টা বেশ সমালোচিত হয়েছিল। সেই একই কাজ এবারও করতে যাচ্ছেন তিনি।
নিউজরুম, ২৮.১১.১২
আপনার নতুন ছবি ‘ইভ টিজিং’ এর খবর বলুন?
ছবির কাজ প্রায় শেষ। ২০১৩ এর জানুয়ারিতে ছবিটি মুক্তি দেবার ইচ্ছে রয়েছে। এ ছবি মুক্তি দেওয়ার পর ‘রাজা-গোলাম’ নামে নতুন আর একটি সিনেমা বানানোর ইচ্ছে আছে।