ভিসি বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও ছাত্রলীগের আন্দোলনে অচল রুয়েট

0
165
Print Friendly, PDF & Email

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি (২৭ নভেম্বর):ভিসি বিরোধী আন্দোলনে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত সেশনজটের কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

পরীক্ষার ফল জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষার্থী ঐক্যপরিষদের ব্যানারে গত ১৩ নভেম্বর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মসূচী শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে গতকাল রুয়েট প্রশাসনের হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধানসহ আরও ৬ ব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন। এর আগে পদত্যাগ করেন রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. শামীমুর রহমান। এ নিয়ে মঙ্গলবারও আন্দোলনকারীদের কর্মসূচী অব্যাহত ছিল। তবে আন্দোলনে অংশ নিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এক অনুসন্ধানে ভিসি বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যের অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ভিসির অপসারণে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ঐক্যপরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের টেন্ডার না পাওয়া, আত্মীয়-স্বজনরা শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের অনিয়ম করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া প্রোভিসি নিজেই আন্দোলনে উস্বানী দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার ফল জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে গত ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেয়। পরেরদিন পৃথক সংবাদ সম্মেলনে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগও আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে। এর আগে গত ৫ নভেম্বর রুয়েটের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। মূলত ১৩ নভেম্বর থেকেই লাগাতার আন্দোলনে রুয়েটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর রুয়েট প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় ভাংচুরের পেছনের কারণ ছিল পরের দিন মঙ্গলবার রুয়েটের নির্মিতব্য গ্লাস এ্যান্ড সিরামিক ভবনের ৬ কোটি টাকার টেন্ডার ও ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হলের প্রায় কয়েক কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্য। নিজস্ব ঠিকাদারকে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দিতেই মূলত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ওই ভাংচুর চালায়।

কিন্তু সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছাত্রলীগের পছন্দের ওই প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ কোটি টাকার ওই টেন্ডার দুটি’র কাজ পেলে ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা এতে ভিসির উপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। সেই থেকেই মুলত ভিসি বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

অভিযোগ রয়েছে, ভিসি বিরোধী আন্দোলনে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের যোগ দেয়ার পেছনে আরও একটি কারণ হচ্ছে ছাত্রলীগের আহবায়ক হারুন অর রশিদ তার ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়া। জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা হারুনের একাডেমিক দিক থেকে অযোগ্য হওয়ার শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে অসৎ পন্থা অবলম্বন করে তিনি ভাইবা কার্ডের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু একাডেমিক রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় সে নিয়োগ হতে বঞ্ছিত হন।

তারও আগে একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান হারুনের স্ত্রী। এরআগে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল আজিজ খান নিহতের ঘটনায় রুয়েট প্রশাসন ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর ছাত্রত্ব বাতিল এবং রুয়েটে অবস্থিত অগ্রনী কলেজে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় মূলত রুয়েট ভিসির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের জড়িয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে, বিভিন্ন সময় রুয়েটে্ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে পরিষদ নেতাদের কোটা পূরণ না করা। তছাড়া প্রশাসনের একটি

সূত্র জানায়, সম্প্রতি রুয়েটে গ্লাস এন্ড সিরামিকসহ নতুন দুটি বিভাগ খোলায় ওই দুই বিভাগের কোর্স কারিকুলাম তৈরীর জন্য ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোর্স-কারিকুলাম দেখতে যান বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা ও রুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. শামীমুর রহমান।

অভিযোগ রয়েছে, ভারত সফর বাবদ ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ দেখিয়ে টাকা গায়েব করে দেন। রুয়েট ভিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদের ওই নেতার একজনের সফরে এত টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে তার একটি হিসাব দিতে বললে তাতে ক্ষুব্ধ হন ড. শামীমুর রহমান।

অন্যদিকে ভিসি বিরোধী আন্দোলনে রুয়েট প্রোভিসি প্রফেসর ড. মর্ত্তুজা আলী’র পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে বলেও প্রশাসনের একটি সূত্র দাবি করেন। সূত্রটি জানায়, মূলত ভিসিকে সড়িয়ে নিজেকে ওই পদে আসিন করতেই তিনি ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের দিয়ে ভিসির অপসারণ আন্দোলন চাঙ্গা করেন। তাছাড়া আন্দোলনকারীরা ভিসি ড. সিরাজুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক ছাত্রের পরীক্ষার ফল জালিয়াতির যে অভিযোগ তুলেছেন তার সাথে মূলত জড়িত ছিলেন রুয়েট প্রোভিসি। এর আগে ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষে প্রোভিসি তার এক কন্যাকে রুয়েটের সিএসই বিভাগে অসৎ উপায় অবলম্বন করে ভর্তি করান যা সে সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন তিনি।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য রুয়েট প্রোভিসি প্রফেসর ড. মর্ত্তুজা আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পরীক্ষার ফল জালিয়াতির বিষয়টি আমি জানতাম এবং তার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু উল্টো ভিসিই আমাদেরকে সরাসরি জীবনের হুমকি দিয়েছে। ফল জালিয়াতির সাথে ভিসি প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষাভাবে জড়িত বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে রুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অভিযোগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি ঢাকায় আছি, ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে তা জনসমুক্ষে প্রকাশ করা হবে। তিনি প্রোভিসির সম্পর্কে বলেন, উনি আমার ছাত্র হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র ভিসি হওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। ৭জন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগ বিষয়ে তিনি বলেন, এত বড় প্রশাসন চালাতে গেলে দু’একজন পদত্যাগ করতেই পারে। শিঘ্রই শুন্য পদ পূরন করা হবে বলেও তিনি জানান। #

 

 

প্রতিবেদক, এরশাদুল বারী কর্ণেল, সম্পাদনা, আলীরাজ/ রাফি, নিউজরুম

শেয়ার করুন