রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৭ নভেম্বর) : ‘আমরা কয়ডা ভাতের টাকা জোগাড় করার জন্য গার্মেন্টসে২ হাজার/ আড়াই হাজার টাকায় চাকরি করি। আমরা চাই না লাশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকিংবা বিরোধী দল রাজনীতি করুক। এই গরীবদের লাশ নিয়া রাজনীতি করলে তাজরীনগার্মেন্টেসের পুড়ে মরা শ্রমিকদের লগে তামাশা করা হইবো।
সোমবারসন্ধ্যার পর নিশ্চিন্তপুর রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছেসহিদুল জেনারেল স্টোরে বসে চা খেতে খেতে নিশ্চিন্তপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েবিভিন্ন মহলের বক্তব্য নিয়ে কথা বলছিলাম। এ সময় এখানকার লোকজনের ছিল এমনইপ্রতিক্রিয়া।
‘এত কিছু বুঝি না গার্মেন্টেসের মালিক, বসদেরখামখেয়ালী আর অবহেলার কারণে এত মানুষ মরছে। এদের বিচার চাই’ বলে সবাই দাবিজানালেন একযোগে।
প্রসঙ্গত, রোববার বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জাফখরুল ্বসিলাম আলমগীর আশুলিয়া পরিদর্শনে এসে কারও সঙ্গে কথা না বলে কোনোরকম তদন্ত হওয়ার ‘এ ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী’ বলে মন্তব্য করেন।
পাশাপাশি একইদিন বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে আবারও একই দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকেসোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে এক মানববন্ধনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যড. মঈন খান অভিযোগ করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। কিন্তুকেন ঘটাচ্ছে তার ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি।
অন্যদিকে সংসদেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ঘটনা পরিকল্পিত! এটার পিছনে বিরোধী দলজড়িত থাকলে অকল্পনীয় কিছু হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রামুরসাম্প্রাদায়িক হামলা, গত কয়েক দিনে পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে এইঅগ্নিসংযোগের ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে।
একই সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াত শিবিরের যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
আরিফহোসেন (২০/২১) নামের একজন শ্রমিক নিজেকে তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনেরঅপারেটর দাবি করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তুবা গার্মেন্টেসে আগুন লাগার পরেপিএম, এপিএম রানা বস আমাদের বাইরে বের হতে বাধা দিয়েছিল। ওগো কারণে এতমানুষ মরছে। মালিকরা ইচ্ছা কইরা এত মানুষ মারছে।’
রানা বসের আচার আচরণ ভালো না বলে দাবি করেন আরিফ।এজন্য শ্রমিকরা আড়ালে তাকে ‘’তেলাপোকা বস’ বলে ডাকেন।
তিনিআরো বলেন, তাজরীন গার্মেন্টসে যারা মারা গেছে তাদের ১ লাখ টাকা করে দিবোবলছিল, এখনো কেউ সে টাকা পায় নাই। অনেকের লাশ পাচ্ছে না তাদের আত্মীয়স্বজনরা। এ ঘটনায় আহত হইছে তাদের চিকিৎসা এবং তাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নাই। এসব নিয়া কেউ কথা বলে না। পত্রিকা, সাম্বাদিকদের ভালো মনে করছি।কিন্তু তারাও লেখে না।
মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ানিশ্চিন্তপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আহত জাহিদ (১৯) বলেন, ‘আমারমামাতো বোন হেনা আর আমি ৪র্থ তলায় কাজ করি। আমি এগজস্ট ফ্যান ভেঙ্গে বেরিয়েআসতে পারলেও আমার বোনটি বেরিয়ে আসতে পারেনি। তার লাশও আমরা খুঁজে পাই না।মালিকসহ যাদের দোষে এত মানুষ মরছে তাদের বিচার চাই।’
তাজরীনফ্যাশনের ৩য় তলার সি-লাইনের লাইন ইনচার্জ রাকিব হোসেন বলেন, ‘বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাবে। আবার আওয়ামী লীগ বিএনপি’র উপর দোষচাপাবে আমরা চাই না। বিচারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসনেরব্যবস্থা চাই।’
তার অধীনে কর্মরত অপারেটর আতিক বলেন, ‘গরীব লাশসস্তা হইয়া গেছে এ জন্য সবাই এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। নইলে এর আগেও কতবারগার্মেন্টেসে মানুষ পুইড়া মরছে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। ২০/৩০ হাজারটেকা দিয়া মাথা কিনা ফালাইছিল। এজন্য বারে বারে লেবারগো মরতে হইতাছে।’
সহিদুলজেনারেল স্টোরের মহিলা বিক্রেতা বলেন, ‘তুবা গার্মেন্টেস গোয়ালঘরের মতোকইরা বানাইছে। তিনডা সিড়ির মধ্যে দুইটাই বাইরের সঙ্গে কোন সংযোগ নাই।সিড়িগুলো চিকন চিকন। বাইরের দিকে সিড়ি থাকার কথা সেটাও রাখে নাই কসাইরা।শুধু লাভের চিন্তা করছে। এরকম গার্মেন্টসগুলো বন্ধ করা দেওয়া দরকার।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষিত একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,‘জীবনেকখনো এতটা বিকৃত লাশ দেখি নাই। নিশ্চিন্তপুর স্কুলমাঠ পুরোটাই লাশে ভরেগিয়েছিল। এতটা মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশেরশীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এলোমেলো বক্তব্য রাখবেন এটা জাতির জন্যলজ্জার। উনারা অনেক বড় হয়ে গিয়েছেন বলে গরীবের লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে পারেননা।’
তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয় বাসিন্দা এবং ক্ষতিগ্রস্তরা এরএকটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। অপরাধীদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদেরপুনর্বাসন চাই।
এখানকার এলাকাবাসী দাবি, এ সহিংসতা যদি কোনোহিংস্র্র ও নোংরা রাজনীতির ফলও হয়, তারপরও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর কঠোরবিচার হোক। কিন্তু এটা নিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা করতেহবে। সেই সঙ্গে এমনভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতেবাংলাদেশের কোথাও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
নিউজরুম