রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৭ নভেম্বর) : আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে শনিবার তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড এবং একই দিন চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে প্রাণহানির ঘটনায় মঙ্গলবার জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার দেশের সব সরকারি-আধাসরকারি কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ছুটি থাকবে দেশের সব পোশাক কারখানায়। তবে অন্যান্য অফিস-আদালত খোলা থাকবে।
এছাড়া নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে কেবিনেট সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, গার্মেন্ট কারখানায় ১১২ এবং চট্টগ্রামে গার্ডার ধসে নিহত ১২ জনের স্মরণে ২৭ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবস পালনের ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে শোক দিবস ঘোষণার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
অগি্নকাণ্ডে হতাহতের ঘটনার পর গত রোববার প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে জাতীয় শোক দিবসের ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তুবা গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও মধ্যরাতে ফের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তখন পর্যন্ত লাশের সংখ্যা ছিল ৯। এ ৯ জনের সবাই আগুন থেকে বাঁচতে ৯ তলা কারখানা থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
রোববার সকালে সবাইকে শোকে স্তব্ধ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানাতে থাকেন আরো লাশ উদ্ধারের সংবাদ। শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১১১ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায়। সোমবারও ছিল নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনের ভিড়।
বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় এর আগে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও এত বেশি প্রাণহানি আর কখনো ঘটেনি। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর নবাব কাটরায় বিয়েবাড়িতে আগুনই ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা। সে ঘটনায় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিলেন ১২৪ জন।
অগ্নিকাণ্ডটি কোনো দুর্ঘটনা নয়; পরিকল্পিতভাবেই এই তৈরি-পোশাক কারখানাটিকে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আর জড়িত সন্দেহে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে রোববার গভীর রাতে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
মামলায় অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ১১৩ জনের মৃত্যু ছাড়াও অসংখ্য শ্রমিকের সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে। কাজ শুরু করেছে সরকারের পক্ষে তদন্ত কমিটি।
পাশাপাশি একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের জন্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বেলার প্রধান নির্বাহীর কাছে নাম চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদের নাম দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটিও এ অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করবে।
একই দিনে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনায় ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে পুলিশ মামলা করেছে।
এ মামলায় ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ`র নির্বাহী প্রকৌশলী এএমএম হাবিবুর রহমানসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) একে আজাদ বাদী হয়ে ৩০৪,৩৩৭, ৩৩৮, ৩৪ দণ্ডবিধি ধারায় এ মামলা করেন।
নিউজরুম