রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৬ নভেম্বর) : : সরকার বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত আগামী জাতীয়সংসদ নির্বাচনে এককভাবে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, এজন্যপ্রাথমিকভাবে শতাধিক আসনে তারা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বলে জানিয়েছে।
মানবতাবিরোধীঅপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে থাকা জামায়াত যে কোনপরিস্থিতি মোকাবেলারই প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই অংশহিসেবে তারা ১৮ দলীয় জোটে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বাঁধা গাঁটছড়াযেমন টিকিয়ে রাখতে চাইছে, তেমনি প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত গড়ে এককনির্বাচনে নামার জন্যও প্রস্তুত থাকতে চাইছে।
এজন্য নেগোশিয়েশনে দক্ষদলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা সম্ভাব্য সব পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেনবলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। নাম না প্রকাশ করার শর্তে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায়জামায়াতের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও এমন আভাসই দিয়েছেন।
এমনকি প্রয়োজনেবিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট থেকে অকস্মাৎ পীঠটান দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারেরঅধীনে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও প্রতিক্রিয়াশীল এ দলটিসহযোগীর ভূমিকা নিতে পারে বলেও আভাস মিলছে দলীয় পরিমণ্ডলের আলোচনা থেকে।বিষয়টি নাকি বুঝতে পেরেছে বিএনপিও। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াওনাকি জামায়াতের এমন পরিকল্পনার কথা জেনে গেছেন।
আর জেনেশুনেই গত ১০নভেম্বর রামুতে উগ্রপন্থি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ জনপদ ও বিহার পরিদর্শনেগিয়ে সরকার তলে তলে জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করছে বলে মন্তব্য করেন ১৮ দলীয়জোটনেতা খালেদা।
তার ওই বক্তব্যের পর মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করেবুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ যেমনজামায়াতকে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন, তেমনি জামায়াতও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগেঅবধারিত শাস্তি থেকে শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের ব্যাপারেমরিয়া হয়ে উঠেছে।
এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নতুন করে গোপন গাঁটছড়াবেঁধে তাদের প্রতিদ্বন্দ¡ী হিসেবে নির্বাচনে নেমে শীর্ষ নেতাদের বাঁচানোরপ্রতিশ্র“তি চাইছে তারা।
আর এ পরিস্থিতিতে জামায়াতকে নিজেদের সঙ্গেঝুলিয়ে রেখে টানা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটছে আওয়ামীলীগ। শরীয়া আইন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নমনীয় হওয়ার পেছনেও নাকি এ কারণইকাজ করেছে। এজন্য দু’দলের মধ্যসারির নেতা পর্যায়ে এরইমধ্যে কয়েক দফাযোগাযোগ হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, হঠাৎ করে যে তারাশতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নয়। বরং জোটের রাজনীতিতেদরকষাকষির সুযোগ কাজে লাগাতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তারা।
তাদেরবাছাই করা আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গত দু বছর ধরে দুই ঈদের সময় এলাকায়গেছেন। তাদের প্রতিশ্র“তি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণও হয়েছেতাদের নেতৃত্বে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে দরিদ্রদের মাঝে অতিরিক্ত ফিতরা ওযাকাতের টাকাও বিতরণ করেছেন তারা। তাদের এমন গণসংযোগ তৎপরতা আগের চেয়ে আরোবেড়েছে।
এমনকি তারা যার যার নির্বাচনী এলাকায় জামায়াত অনুসারী মসজিদেরইমাম থেকে শুরু করে মাদ্রাসা, মক্তব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রামেরধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জামায়াতের ওই নেতাদেরপক্ষ থেকে মসজিদে জায়নামাজ এবং মাদ্রাসা ও মক্তবে বিশেষ অনুদানও দেওয়াহচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিরসদস্য হামিদূর রহমান আযাদ এমপি বলেন, “আমরা শুধু শতাধিক আসনে নয়, তিনশ’ আসনের টার্গেট নিয়ে কাজ করছি।”
শতাধিক আসনের টার্গেট নিয়ে দলীয় সরকারেরঅধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরানির্বাচনে অংশ নেব। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষতত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।”
নিউজরুম