রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৬ নভেম্বর) : ‘‘মাসে ২৫ থেকে ২৬ দিন চাকরি করে ৩হাজার ৮শ’ টাকা পাওয়ার চাইতে কয়েকদিন চাকরি না করা ভালো। খুঁজলে আরেকটাপাওয়া যাইবো। আমাগো গার্মেন্টসে কারো মনে অত কষ্ট নাই। আগুন লাগছে ভালোহইছে।’’
কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণখানে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ গার্মেন্টস ‘স্যার ডেনিম’র নারী শ্রমিক সুপ্তি (ছদ্মনাম)।
সুপ্তি জানান, স্যার ডেনিমের মালিকের নাম খলিলুর রহমান।
তিনিআরও জানান, এ গার্মেন্টসে জিন্সের প্যান্ট তৈরি হতো। শ্রমিক ছিলেন প্রায়৬শ’ জন। কিন্তু মালিকপক্ষ নিয়মিত বেতন দিতেন না। তাদের ব্যবহারও ভালো ছিলোনা। ওভারটাইম করলেও অর্ধেক টাকা দিতেন।
একই ভবনের ম্যাককয়াসুয়েটারে কাজ করছেন কুমিল্লার মেয়ে রাশিদা(২২)। তার বেতন মাসে ৪ হাজারটাকা। তার চোখে-মুখে অবশ্য অনিশ্চয়তা। এখানে আর চাকরি করতে পারবেন, নাকিনতুন কোনো কাজের সন্ধান করবেন তা নিয়েও দ্বিধান্বিত তিনি।
সোহানগার্মেন্টসের শ্রমিক রতন (ছদ্মনাম) জানান, পুড়ে যাওয়া ভবনে ছিলো সোহানগার্মেন্টসের গোডাউন। সোহান গার্মেন্টসের যে শ্রমিকরা ডাইয়িংয়ের কাজ করতেনতারা মাসে পেতেন ৮ হাজার দুশ’ টাকা।
রতন জানান, কারো পক্ষে মাস শেষেপুরো বেতন তোলা সম্ভব হয় না। কারণ, একদিন না এলে বেতন কাটা হয় দু’দিনের।আর দেরিতে ঢুকলে অনেক সময় পুরো দিনের বেতনই কাটা হয়।
এখানে অসুস্থতার জন্য কোনো ছুটি দেওয়া হয় না বলেও রতন জানান। আবার সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও কাজ করানো হয়।
সোহানগার্মেন্টসের মালিক চীনা নাগরিক হং। তবে হং ভালো মানুষ। তিনি কয়েকবারএখানে এসেছিলেন। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিলেন বলে রতন জানান।
তবে ম্যানেজার মুখলেসসহ অন্যান স্যারেরা উঠতে বসতে গালি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দক্ষিণখানেবেশ কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোল্লারটেকের ওইগলির পাঁচটি বিল্ডিংয়ে যে কয়েকটি গার্মেন্টস রয়েছে একটিতেও শ্রমিকদেরন্যায্য পাওনা দেওয়া হয় না। সবারই অভিযোগ, গার্মেন্টস ম্যানেজমেন্টেরবিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণখানে গার্মেন্টস রয়েছে প্রায় ৩০টি। এরমধ্যে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আফরান প্লাজা নামে যে ভবনটিতে আগুন লাগে, সেখানে চারটি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় সোহান গার্মেন্টসের গোডাউন, ৫ম তলায় স্যার ডেনিম ফ্যাশনস লিমিটেড, ছয়তলায় জেজে ফ্যাশন এবং সাত থেকে দশ তলা পর্যন্ত ম্যাককয়া ফ্যাশনসলিমিটেডের কারখানা রয়েছে।
নিউজরুম