৭৬টি লাশ শনাক্ত করা যায়নি, ২৪টি শনাক্ত হয়েছে, ১১টি লাশ আত্মীয়রা নিয়ে গেছেন

0
227
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৫ নভেম্বর) মন্ত্রী এসে তথ্য দিলেন, ৭৬টি লাশ শনাক্ত করা যায়নি, ২৪টি শনাক্ত হয়েছে, ১১টি লাশ আত্মীয়রা নিয়ে গেছেনএই ঘোষণা দিতে মন্ত্রীকে কম কষ্ট করতে হয়নিদীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার পথ গাড়ি চেপে পৌঁছাতে হয়েছে আশুলিয়ায়নিশ্চিন্তপুরেপৌঁছেই যে নিশ্চিন্ত হয়ে গেলেন তাও নয়গাড়ি থেকে নেমে মন্ত্রী মহোদয়কেহাঁটতে হলো কোয়ার্টার কিলোমিটারমন্ত্রীতো যাবেনই, কারণ যে কারখানাটিরাতভর আগুনে পুড়লো তা তো অন্তত একবার নিজ চোখে দেখতে হয়সরকারের কেউ নাকেউ সেখানে না গেলে ব্যাপারটাও ভালো দেখায় নাতাই যেতে তো হবেইআর কিছুআনুষ্ঠানিক ঘোষণার বিষয় তো থাকেই!

বেয়াড়া জনগণকে সামলাতের‌্যাব-পুলিশকে ধকল কম পোহাতে হয়নিকিন্তু মন্ত্রীর জন্য রাস্তা ফাঁকা হবেসে তো অনিবার্যএকটু ত্রস্ত পায়েই হাঁটলেন মন্ত্রীকারখানার সামনে থেকেইচলে যাবেন তাও তো হয় না, তাই একবার ভেতরেও ঢুকলেনহায় হায় এইভাবেপুড়েছে!!৯ তলা ভবনের ৩য়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম তলায় মানুষ পুড়ে কয়লাহয়েছে তার কিছুই না দেখে স্রেফ নিচতলায় পুড়ে যাওয়া সুতোর লট দেখেই মন্ত্রীরএই কষ্টোক্তি

তবে এতকিছু যে করলেন তাতে মন্ত্রীর স্বস্তির অভাবছিলো নাকারণ তার সামনে মিডিয়ার ক্যামেরাতো সারাক্ষণই অনকারখানা দর্শনেরপর লাশ দর্শনও হলো ক্যামেরার সামনেঅতঃপর কাব্য দিয়ে শুরু- কিছু কিছুমৃত্যু আছে পালকের মতো হালকা… কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মতো ভারি

আমরাজেনে আনন্দিত ১১১টি লাশ মন্ত্রীর কাছে পাহাড়ের মতো ভারি লেগেছেমন্ত্রীআরো জানালেন, এতো লাশ এতো মৃত্যু সরকারকে ব্যথিত করেছেসরকার ভাবছে জাতীয়শোক ঘোষণা করার কথাকারণ তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের জন্য, মন্ত্রীর ভাষায়, ‘দুগ্ধবতী গাভীতাই এই গাভী জাতীয় ইস্যুঅতএব এই মৃত্যুতে জাতীয় শোকহতেই পারেপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়াহবেঘোষণা যাই হোক প্রশ্ন এভাবে কয়টি জাতীয় শোক করবে সরকার? কতবার করবে? দুগ্ধবতী গাভীর দুধটাই যে শুরু খায় এই দেশতার ভরণ-পোষণ কী করে?

কই৯তলা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে তো ছিলো না কোনো ইমার্জেন্সি এক্সিটকারখানারসামনে দাঁড়িয়ে সে নিয়ে তো একবারও বিষ্ময় প্রকাশ করলেন না মন্ত্রীআসলে কিমন্ত্রী জানেন না প্রতিটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ইমার্জেন্সি এক্সিট থাকাবাঞ্ছনীয়এবং এটি কম্পøায়ান্সের অংশশুনেছি নন কম্পø্যায়ান্সের অভিযোগনাজরিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিলোসে দিকটা ঘেটে দেখাতাক্ষণিকভাবে সম্ভব হয়নিতবে এটিতো অবশ্যই সত্য, এই কারখানা ফ্যাক্টরিইন্সপেক্টরের লাইসেন্স নিয়ে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারলাইসেন্স নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলোকারণ, এগুলো না হলে রপ্তানি সামগ্রীপাদন ও তা রপ্তানি করার সুযোগ থাকার কথা নয়

এসব কারণেই কিমন্ত্রী বললেন অন্তর্ঘাতের কথা! কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তরে নয়, নিজেথেকেই তিনি বললেন, “এই অগ্নিকা- অন্তর্ঘাতমূলক কী না তা খতিয়ে দেখা হবেজানতে চাওয়া হলো মাননীয় মন্ত্রী কী ধরনের অন্তর্ঘাতের কথা বলছেনকোনোসন্দেহ রয়েছে কি না? হয়তো পাল্টা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন নাতাইউত্তরটি গোছানো হলো নাবললেন, না সেরকম নয়, কেউ কেউ এখানে অভিযোগ করছেন তোসেই জন্য বলা

যাই হোক হতে পারে অন্তর্ঘাত, সে সন্দেহ তো রয়েছেইরাতভর আগুনে পুড়লো কারখানাফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৯ ঘণ্টায়ও আগুন নেভাতেপারলেন নাকারখানার ভেতরের শেষ দাহ্যবস্তুটিতে পুড়িয়ে আর তার সঙ্গেশতাধিক তাজা দেহপ্রাণ পুড়িয়ে দিয়ে দানব আগুন হয়তো নিজেই নিভেছেমন্ত্রী নাহয় ১৬ ঘণ্টা পরে এসেছেনকিন্তু আগুন লাগার দেড় ঘণ্টার মধ্যে বাংলানিউজসহমিডিয়ার যেসব কর্মী সেখানে হাজির হয়েছিলেন তারা তো অসহায়ের মতো দেখেছেন, জ্বলছে আগুনরাত যত গভীর হচ্ছিলো আগুনের তীব্রতা ততই বাড়ছিলোতারাশুনেছেন ফটাস-ফটাস শব্দে ফুটছে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের মাথার খুলিবাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ নিয়ে তারা তো রাতভর জানিয়েছিলেন সেই বিভীষিকার কথা

মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলো, এত সময় কেনো লাগলো আগুন নেভাতে? তারও উত্তরে তিনি জানালেন- বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবেউদ্ধার কাজ শেষ হলেতদন্ত কমিটি গঠন করা হবেসেই কমিটিই তদন্ত করে বের করবে অন্তর্ঘাতেরবিষয়টিতারাই দেখবে নেভানোর সময় কেনো এত বেশি লাগলো

তবে মন্ত্রীকিন্তু জানাতে ভুললেন না, হতাহতের ঘটনায় সরকার ক্ষতিপূরণ দেবেকিন্তু কতদেবে তার উত্তর দিতে পারলেন নাবললেন- এটি জানানো হবেআর কাকে দেবেনক্ষতিপূরণ? যেখানে লাশই শনাক্ত করা গেলো নাসরকারের তথ্যেই ৭৬টি লাশ কয়লাচেনার উপার নেইআর প্রত্যক্ষদর্শীদের বা উদ্ধারকারী কর্মীদের ভাষায় -তারাফ্লোরে যা পেয়েছেন তা আস্ত লাশ নয়অনেক লাশের গলিত দলা

তাহলে কে মারাগেলো- কতজন মারা গেলো- তা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে? সরকার কী শ্রমিকদেররেজিস্ট্রার খাতাটি পাবে? কারখানার মালিকের সঙ্গে সরকারের কোনো পক্ষের কীকথা হয়েছে? কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি খুঁজছে দেলোয়ার হোসেন নামের সেইমালিককে? বিজিএমইএর কাছেই বা তার ব্যাপারে কি তথ্য আছে? এসব জানা এখনসত্যিই জরুরি

 

নিউজরুম

শেয়ার করুন