দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক জামায়াতে ইসলামী

0
677
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৪ নভেম্বর) :জনপ্রিয় লেখক শিক্ষক ড: মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তাররাজনীতি নিয়ে ভাবনা বইতে লিখেছেন, “আমরা সবাই জানি, এই দেশের সাথে সবচেয়েবড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল জামায়াতে ইসলামীর্জামানীতে নাসি বাহিনী নেই, ইতালিতে ফ্যাসিস্টরা নেই কিন্তু আমাদের দেশে কেমন করে জামাতে ইসলামী থেকেগেল?”

তিনি আরও বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারি না মুক্তিযুদ্ধ করেস্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেমন করেমুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন করে? কম বয়সী তরুণদের দেশনিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা, ষোলই ডিসেম্বর মাথায় লাল সবুজ পতাকা বেধে পথে নেমেযাবার কথা, একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে প্রভাতফেরী করার কথাঅথচ সেই বয়সের তরুণেরা এসব কিছু না করে কেমন করে দেশোদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকযুদ্ধাপরাধীদের নেতা হিসেবে মেনে তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করতে পারে?”

মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধীতা করে পাক হানাদেরদের যারা সহযোগিতা করতে সেই জামাতের তকালিনছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিরপ্রেক্ষাপটে তারা ইসলামী ছাত্র শিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে
 
হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুড়ো করে দেয়া, রিকশার স্পোক কানের ভেতরে ঢুকিয়েখুচিয়ে খুচিয়ে মগজ বের করে আনা, হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, কবজি কেটে নিয়ে হত্যা করার মতো নৃশংসতা শুধুমাত্র শিবিরের নামের সঙ্গেইযুক্তএসব কারনে শিবিরের নামও হয়েছে রগকাটা শিবির

আত্মপ্রকাশ করার তিন বছরের মাথায় হত্যার মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করে ইসলামী ছাত্র শিবির

দেশেরটগবগে তরুণরা কেনো ঝুঁকছে শিবিরের প্রতি সে প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, অনেকগুলিকারণ… একটা বড় সময় ধরে বিশেষ করে ৭৫ এর পর থেকে আমরা সামরিক শাসনের অধীনেছিলামএরশাদ এবং জিয়াউর রহমান দুজনেই রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহারকরেছেনএমনকি এরশাদ পতনের পরেও আমাদের কথিত গণতান্ত্রিক শাসনামলে মূলদু`টি রাজনৈতিক দল ধর্মকে ব্যবহার করে চলেছেফলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করারপক্ষে একটা মোটিভেশন সবসময়ই আছেতবে মূল কারণগুলোর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছেদারিদ্র্যএটাকে কাজে লাগিয়ে জামাত-শিবির ও অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিকদলগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেসাধারণ মানুষ তার সন্তানদেরমাদ্রাসায় পাঠায় কারণ তাতে খরচ কম, বলতে গেলে লাগে নাউচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয় বা অনার্স কলেজগুলিতেউচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানযেমন বিশ্ববিদ্যালয় বা অনার্স কলেজগুলিতে নিম্নবিত্ত ঘরের যেসব ছেলেমেয়েরাভর্তি হয় তারা বেতনের টাকাটি হয়ত কোনোভাবে জমা দিতে পারে কিন্তু বাদবাকীখরচ চালানো তাদের জন্যে দুস্কর হয়ে পড়েএ অবস্থায় ছাত্র শিবিরেরসহযোগিতাগুলি আশীর্বাদের মত হয়ে আসে তাদের জন্যমেসে থাকার ব্যবস্থা বাটিউশনি যোগাড় করে দেয়া অথবা যেকোনো ভাবে শিবিরে নাম লেখানো নতুন ছেলেটিরখরচের সংস্থান তারা করেএরপর চাকরির ব্যবস্থাতো আছেই

বৈষম্যহীন একটা একই ধারার শিক্ষা কাঠামো প্রবর্তন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান হবে, মত বাকী বিল্লাহর

ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ কল্যাণ বিভাগের ছাত্র হাবিবুর রহমানের মতে, জামাতধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের ছোট ছোট অংশকে পুঁজি করে মানুষের মগজ ধোলাই করেএরফলে ধর্মের কারনে অনেকে ওদের দিকে ঝুঁকে পড়ছেএরা ছাত্রদের এমন ব্রেইনওয়াশ করে যে, আমরা যে যুদ্ধাপরাধের কারনে জামাতীদের ঘৃনা করি, তারা সেটাবিশ্বাসই করতে চায় না, কারন তাদের সেভাবেই মগজ ধোলাই করা হয়েছে

ছাত্রশিবির ছাড়া অন্যান্য যে সব ছাত্র সংগঠন আছে সে গুলো হচ্ছে নিজেদের মধ্যেঅর্šÍকোন্দল, লুটপাট, চাঁদাবাজী ও অন্যান্য অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকায়সাধারন ছাত্ররা ওদের বিষয়ে হতাশএসব হতাশাকে কাজে লাগিয়ে শিবির সাধারনছাত্রদের বিভিন্ন কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে ভেড়ায়এ ছাড়াও প্রধানদুই রাজনৈতিক দলের কাছে মানুষ যা চায় সেগুলো পাচ্ছে নাএটাকেও শিবির কাজেলাগাচ্ছে

তিতুমীর সরকারী কলেজের গনিতের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীশাহাদা হোসেন সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বামসংগঠনগুলো খুবই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল, তাদের কাছে সাধারন মানুষেরপ্রত্যাশা অনেক বেশী ছিলএর পরবর্তীতে বামরা প্রথমেই প্রতিকুল পরিবেশমোকাবিলা করে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে, এর বাইরে বামরা তাদের আদর্শ থেকেবিচ্যুত হয়ে নানা শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েএবং প্রতিটি বাম দলইনিজেদের আদর্শিক দাবি করে অন্যদের আদর্শ বিচ্যুত বলে ঘোষণা করায় মানুষ থেকেদূরে সরে যায়

এর বাইরে জামাত শিবির রহস্যময় কিছু কৌশল ব্যবহারকরেছাত্রদের ক্ষেত্রে এরা গরীব এবং মেধাবী শিক্ষীর্থীদের টার্গেট করেলজিং টিউশনি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দিয়ে মানসিকভাবে নতজানুকরে ফেলেওরা ছাত্রদের ধরে রাখার জন্য নিজেদের ধার্মিক হিসেবে উপস্থাপনকরেএকই সঙ্গে বাংলাদেশে যে বেকারত্বের সমস্যা বিরাজ করছে, সেটাকে প্রধানহাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেজামাতের অস্যংখ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে তাদেও চাকরি দেয় কিংবা প্রলোভন দেখায়

ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুররহমান বলেন, শিবির প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিশু, কিশোরদের বেশিটার্গেট করেতাদের বিভিন্ন প্রকাশনীর মাধ্যমে শিশুদের আকৃষ্ট করে

কিশোরকন্ঠ, ছাত্র সংবাদ, এসো আলোর পথে, মুক্তির মোহনায়, মোরা বড় হতে চাই, ‘আমারা কী চাই, কেন চাই, কিভাবে চাই’, চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান, ইসলামীআন্দোলনের সাফল্যের শর্তীবলী, হাকিক সিরিজের মধ্যে রয়েছে হেদাযেত, দাওয়াত, রমযান, জিহাদের হাকিকতসহ অসংখ্য প্রকাশনী রয়েছে শিবিরেরএসবের মাধ্যমেশিশু কিশোরদের আকৃষ্ট করা জামাতের অন্যতম কৌশলআবার ছাত্র সংগঠনেরপাশাপাশি জামাত শিবিরের রয়েছে  কিশোরদের জন্য আলাদা সংগঠন ফুলকুঁড়ির আসর

অপরদিকে তরুণ সাংবাদিক আনিস রায়হান বলেন, আজকের তরুনরা শিবিরকরার কারন, ব্যক্তি স্বার্থবাংলাদেশে আর কোন ছাত্র সংগঠন একই সঙ্গে অর্থ, ক্ষমতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে নাএ জন্য যারা রাজনীতিমনষ্কব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী তারা শিবিরে যাচ্ছে

আরেকটা কারণ হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো শেষ না হওয়াএতে করে আমাদের সমাজেএটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অন্যায় করলে কোন সমস্যা নাই, বহাল তবিয়তে টিকেথাকা যায়জামায়াত শিবির টিকে আছে, বিকশিত হয়েছে, অনেকেই যাচ্ছে সেখান থেকেকিছু লাভের গুড় চেখে নিতেতবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, সেই অসেচতনতা, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা পদ্ধতির বিকাশ ও বিস্তার না ঘটাআমরা যত বেশিসুশিক্ষায় শিক্ষিত হবোততো বেশি এসব জনবিরোধী তপরতা থেকে দূরে থাকতেপারবোসুশিক্ষার আলোর অভাবটাকেই কাজে লাগাচ্ছে শিবিরতিনি আরও বলেন, দেশের এক দল প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ আজও রাজাকারদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুতএটাই সবচেয়ে অবাক করা বিষয়একটি স্বাধীন দেশে কী করে স্বাধীনতা বিরোধীদেরসমর্থক থাকতে পারেঅপর দিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং শিবিরেরসাবেক সম্পাদক মো. শিশির মনির মতে এখানে সততা, নিয়মশৃঙ্খলা স্বচ্ছতা এবংজবাবদিহিতা রয়েছে

 

 আর সে কারণেই তিনি শিবির করেন

 

 

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন