দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ১২টি

0
672
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৩ নভেম্বর) :বর্তমানে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে১২টিআর যে ৩টি চিনিকল চালু রয়েছে তাতেও লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারকেএকইভাবে কমছে উপাদনওগত চার বছরে দেশে চিনি উপাদন কমেছে ৯৪ হাজার চারশ৯৭ টনফলে চিনির আমদানি নির্ভরতা না কমে তা বেড়েই চলেছে দিন দিন

বেশিরভাগচিনিকল বন্ধ থাকার কারণ বলতে গিয়ে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এক কর্মকর্তা বলেন, “আখ সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণেই মিলগুলোঅধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছেউন্নতমানের আখের অভাবে একদিকে যেমন উপাদন কমছে, অন্যদিকে বন্ধ থাকছে উপাদনফলে বছরের অর্ধেক সময় চিনিকলের কর্মচারীরাকাটায় অলস সময়বেড়ে যায় মিলের স্থায়ী খরচলোকসান গুণতে হয় বেশিপাশাপাশি মিলগুলোর ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা তো রয়েছেই
 
দেশে বতর্মানে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও দেশীয়ভাবে উপাদন করা সম্ভব মাত্র দুই লাখ টন

বিএসএফআইসিসূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চিনি উপাদনের পরিমাণ ছিলো একলাখ ৬৩হাজার আটশ ৪৪ টন যা ২০১১-১২ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার চারশ ৪৭ টনেআখের অভাবে বর্তমানে উপাদন হচ্ছে মাত্র তিনটি চিনিকলে
এগুলো হলো-নর্থ বেঙ্গল চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল ও নাটোর চিনিকলকরপোরেশন আশা করছে, আগামী ডিসেম্বর মাসে আরো কয়েকটি মিল ‍উপাদনে যাবে

চিনিকল সূত্রেজানা যায়, এবার নাটোর চিনিকলে ১ লাখ ৬০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১২ হাজার টনচিনি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছেমোট ১০৭ মাড়াই দিবসে চিনিআহরণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশগত মৌসুমে নাটোর চিনিকলে ১লাখ ৯ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৩৯০ টন চিনি উপাদিত হয়েছিল

এছাড়া  নর্থবেঙ্গল চিনিকলে চলতি মৌসুমে  ২ লাখ ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১৮ হাজার৭৫০ টন চিনি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছেমোট ১৫০ মাড়াইদিবসে চিনি আহরণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ

গতমৌসুমে এ চিনিকলে ১ লাখ ৩৫ হাজার আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৮৭৪ টন চিনি উপাদিতহয়েছিলগত ৩ বছরে মিল দুটিতে লোকসান হয় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা

একইভাবেরাজশাহী চিনিকলে এবার ৯০ হাজার টন আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার ৫০০মেট্রিক টন চিনি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে

আখেরদাম মিলগেটে মণপ্রতি ৮৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছেএছাড়া ক্রয়কেন্দ্রে আখের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০টাকা

বিগত মৌসুমে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১০হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন চিনি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলকিন্তু ৭২ হাজার ৭৫৫মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন চিনি উপাদনের পরই আখেরঅভাবে মাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়

 সর্বশেষ গত মৌসুমে মিলটি লোকসান দিয়েছে ১৪ কোটি টাকাগত ২০ বছরে মিলটি মোট লোকসান দিয়েছে ১৪২ কোটি টাকা

আখেরস্বল্পতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারেশনেরভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ বাদশা বলেন, “আখের গুণাগুণ কমেযাওয়ার মূল কারণ নিম্নমানের জমাটবাধা সারস্বাধীনতার পর থেকে আখ উপাদনেযে সার দেওয়া হচ্ছিল তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছেবিগত দুই বছর নতুন এক ধরনেরসার দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে আখের গুণাগুণহচ্ছে না আশানুরূপপাদনতাছাড়া চিনিকলগুলো থেকে প্রতি মণ আখ কেনা হয় ৯২-১০০ টাকায়টাকায় কৃষকের উপাদন খরচই হয় না

অন্যদিকে, গুড় উপাদকরা একই আখকিনছেন ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়ফলে চাষীরা আখ বিক্রি করতে উসাহী হয়েউঠছে গুড় উপাদকদের কাছেইআখের দাম বাড়ানোর জন্য অনেকদিন ধরেইশিল্পমন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি
 
চিনি উপাদনে আখ নির্ভরতা কমানোর জন্য নানা চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা যায় বিএসএফআইসি থেকে

আখেরবিকল্প হিসেবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে সুগার বিট উপাদনেরএটি উপাদন করতেপারলে একদিকে যেমন আখের ওপর চাপ কমবে, তেমনি বাড়বে চিনি উপাদনসুগারবিটের উপাদন সময় ও বীজ উভয়ই কম প্রয়োজন হয়

ইক্ষু গবেষণাইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, সুগার বিট উপাদনে সময় লাগবে ছয় থেকে সাতমাসআর আখপাদনে সময় প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১২ মাসবীজের বেলায় দেখা যায় আখ চাষেহেক্টর প্রতি যে বীজ লাগে একই পরিমাণ জমিতে সুগার বিটের বীজ দরকার হয় অনেককম

আরো জানা যায়, পাদনেও হেক্টর প্রতি প্রায় ১৩ মেট্রিক টন থেকে১৫ মেট্রিক টন বেশি ফসল পাওয়া যাবে সুগার বিটের ক্ষেত্রেবর্তমানে প্রতিহেক্টর জমিতে চাষ করে আখ উপাদন করা যায় ৫০ মেট্রিক টনঅন্যদিকে সুগার বিটপাদন করা যাবে ৬৩ মেট্রিক টন থেকে ৬৫ মেট্রিক টন

 

 

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন