রুপসীবাংলা, ঢাকা (২৩ নভেম্বর) :বর্তমানে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে১২টি। আর যে ৩টি চিনিকল চালু রয়েছে তাতেও লোকসান গুণতে হচ্ছে সরকারকে।একইভাবে কমছে উৎপাদনও। গত চার বছরে দেশে চিনি উৎপাদন কমেছে ৯৪ হাজার চারশ৯৭ টন। ফলে চিনির আমদানি নির্ভরতা না কমে তা বেড়েই চলেছে দিন দিন।
বেশিরভাগচিনিকল বন্ধ থাকার কারণ বলতে গিয়ে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এক কর্মকর্তা বলেন, “আখ সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণেই মিলগুলোঅধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছে। উন্নতমানের আখের অভাবে একদিকে যেমন উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে বন্ধ থাকছে উৎপাদন। ফলে বছরের অর্ধেক সময় চিনিকলের কর্মচারীরাকাটায় অলস সময়। বেড়ে যায় মিলের স্থায়ী খরচ। লোকসান গুণতে হয় বেশি।পাশাপাশি মিলগুলোর ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা তো রয়েছেই।”
দেশে বতর্মানে প্রায় ১৫ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব মাত্র দুই লাখ টন।
বিএসএফআইসিসূত্রে জানা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো একলাখ ৬৩হাজার আটশ ৪৪ টন যা ২০১১-১২ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার চারশ ৪৭ টনে।আখের অভাবে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র তিনটি চিনিকলে।
এগুলো হলো-নর্থ বেঙ্গল চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল ও নাটোর চিনিকল। করপোরেশন আশা করছে, আগামী ডিসেম্বর মাসে আরো কয়েকটি মিল উৎপাদনে যাবে।
চিনিকল সূত্রেজানা যায়, এবার নাটোর চিনিকলে ১ লাখ ৬০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১২ হাজার টনচিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ১০৭ মাড়াই দিবসে চিনিআহরণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত মৌসুমে নাটোর চিনিকলে ১লাখ ৯ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৩৯০ টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল।
এছাড়া নর্থবেঙ্গল চিনিকলে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১৮ হাজার৭৫০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ১৫০ মাড়াইদিবসে চিনি আহরণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতমৌসুমে এ চিনিকলে ১ লাখ ৩৫ হাজার আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৮৭৪ টন চিনি উৎপাদিতহয়েছিল। গত ৩ বছরে মিল দুটিতে লোকসান হয় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
একইভাবেরাজশাহী চিনিকলে এবার ৯০ হাজার টন আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার ৫০০মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আখেরদাম মিলগেটে মণপ্রতি ৮৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।এছাড়া ক্রয়কেন্দ্রে আখের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০টাকা।
“বিগত মৌসুমে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১০হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৭২ হাজার ৭৫৫মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের পরই আখেরঅভাবে মাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
সর্বশেষ গত মৌসুমে মিলটি লোকসান দিয়েছে ১৪ কোটি টাকা। গত ২০ বছরে মিলটি মোট লোকসান দিয়েছে ১৪২ কোটি টাকা।
আখেরস্বল্পতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারেশনেরভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ বাদশা বলেন, “আখের গুণাগুণ কমেযাওয়ার মূল কারণ নিম্নমানের জমাটবাধা সার। স্বাধীনতার পর থেকে আখ উৎপাদনেযে সার দেওয়া হচ্ছিল তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বিগত দুই বছর নতুন এক ধরনেরসার দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে আখের গুণাগুণ। হচ্ছে না আশানুরূপউৎপাদন। তাছাড়া চিনিকলগুলো থেকে প্রতি মণ আখ কেনা হয় ৯২-১০০ টাকায়। এটাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচই হয় না।”
অন্যদিকে, গুড় উৎপাদকরা একই আখকিনছেন ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়। ফলে চাষীরা আখ বিক্রি করতে উৎসাহী হয়েউঠছে গুড় উৎপাদকদের কাছেই। আখের দাম বাড়ানোর জন্য অনেকদিন ধরেইশিল্পমন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চিনি উৎপাদনে আখ নির্ভরতা কমানোর জন্য নানা চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা যায় বিএসএফআইসি থেকে।
আখেরবিকল্প হিসেবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে সুগার বিট উৎপাদনের। এটি উৎপাদন করতেপারলে একদিকে যেমন আখের ওপর চাপ কমবে, তেমনি বাড়বে চিনি উৎপাদন। সুগারবিটের উৎপাদন সময় ও বীজ উভয়ই কম প্রয়োজন হয়।
ইক্ষু গবেষণাইন্সটিটিউটের তথ্য মতে, সুগার বিট উৎপাদনে সময় লাগবে ছয় থেকে সাতমাস। আর আখউৎপাদনে সময় প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১২ মাস। বীজের বেলায় দেখা যায় আখ চাষেহেক্টর প্রতি যে বীজ লাগে একই পরিমাণ জমিতে সুগার বিটের বীজ দরকার হয় অনেককম।
আরো জানা যায়, উৎপাদনেও হেক্টর প্রতি প্রায় ১৩ মেট্রিক টন থেকে১৫ মেট্রিক টন বেশি ফসল পাওয়া যাবে সুগার বিটের ক্ষেত্রে। বর্তমানে প্রতিহেক্টর জমিতে চাষ করে আখ উৎপাদন করা যায় ৫০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে সুগার বিটউৎপাদন করা যাবে ৬৩ মেট্রিক টন থেকে ৬৫ মেট্রিক টন।
নিউজরুম