রুপসীবাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ঢাকা:পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণ করার অনুমতি নেই সৌদিআরবের নারীদের, গাড়ি চালানোও তাদের জন্য নিষিদ্ধ। এবার আরও এক ধাপনিরাপত্তার জালে আবদ্ধ হয়েছেন ইসলামি শরিয়াভিত্তিক দেশটির নারীরা। নারীদেরচলাফেরা নজরদারিতে (মনিটর) রাখার জন্য নতুন এক ইলেকট্রনিক সিস্টেম চালুকরেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এর ফলে গত সপ্তাহ থেকে সৌদি নারীদের পুরুষঅভিভাবকরা মোবাইলফোনে এসএমএস পাচ্ছেন তাদের নারীদের চলাফেরার ব্যাপারে।মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা নারীরা দেশ ছেড়েযাচ্ছেন কিনা। এমনকি সঙ্গে অভিভাবক থাকলেও তার মোবাইলে এ মেসেজ আসবে।
একদম্পতির কাছ থেকে এসব তথ্য জানতে পেরে টুইটারে দ্রুত ছড়িয়ে দেন মানালআল-শেরিফ, যিনি ২০১১ সালে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞাতুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
ঐ স্বামী তারস্ত্রীকে নিয়ে রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানমন্দর ছেড়ে যাওয়ার সময় কর্তৃপক্ষেরকাছ থেকে স্বামীর মোবাইলে একটি এসএমএস আসে, যাতে জানানো হয় যে তার স্ত্রীরিয়াদ বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন।
সৌদি আরবের নিয়মানুযায়ী, পুরুষ অভিভাবকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সৌদি নারীরা দেশত্যাগ করতে পারেন না।
প্রখ্যাতকলামিস্ট বদ্রিয়া আল-বিশর এ ব্যাপারে বলেছেন, “কর্তৃপক্ষ নারীদের মনিটরকরার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।” তিনি রক্ষণশীল দেশটিতে নারীদেরপরিস্থিতিকে দাসত্বের সঙ্গে তুলনা করে এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।
নারীদেরওপর নজরদারি করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ নিন্দার ঝড় তুলেছেসামাজিক যোগাযোগ সাইট টুইটারে। এই সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করে আসছে একের পর একটুইট।
একটি টুইটে লেখা হয়েছে, “হ্যালো তালেবান, এখানে তোমরা সৌদি ই-সরকারের কাছ থেকে কিছু টিপস পেতে পারো!”
আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তোমরা তোমাদের নারীদের পায়ে বেড়ি পরাচ্ছো না কেন?”
হিশামনামে অপর ব্যক্তি টুইট করেছেন, “আমার স্ত্রী সৌদি আরব ছাড়ছে কিনা সেটাজানার জন্য যদি আমার এসএমএস দরকার হয়, তাহলে হয় আমি ভুল নারীকে বিয়ে করেছিকিংবা আমাকে পাগলের ডাক্তার দেখানো দরকার।”
কলামিস্ট বিশর তার টুইটে বলেন, “নারীদের বন্দি করে রেখে পেছনে ফিরে যাওয়ার জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, কঠোরভাবে শরীয়ত আইনের অনুসারী সৌদি আরবই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ।
২০১১সালে সক্রিয় নারী কর্মীরা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সভা-সমাবেশকরেছিলেন, যার ফলে অনেক নারীকে গ্রেফতার করে তাদের দিয়ে ‘আর কখনো গাড়িচালাবো না’ মর্মে একটি প্রার্থনায় সই করা হয়। যদিও নারীদের গাড়ি চালানোরবিষয়ক সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা সৌদি আইনে নেই, তারপরও দেশটিরস্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৯৯০ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ হয়।
২০১১সালে সৌদি বাদশা কিং আব্দুল্লাহ প্রথমবারের মতো সৌদি নারীদের ভোটাধিকারপ্রদান করেন ও ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন।
চলতিবছরের জানুয়ারিতে দেশটির শরিয়ত আইন কার্যকরী করার প্রধান মাধ্যম পুলিশবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শেখ আব্দুল্লাতিফ আব্দেল আজিজআল-শেখকে। তিনি পুলিশ বাহিনীর সৌদি নারীদের হয়রানি করার উপর নিষেধাজ্ঞাজারি করেন।
দেশটিতে পুরুষ ও নারীদের পারস্পরিক মেলামেশার ওপর কঠোরনিষেধাজ্ঞা রয়েছে, পাশাপাশি নারীদের জন্য পর্দাসহ কালো আলখেল্লা (আবায়া)পরা বাধ্যতামূলক।
এরকম কঠোর বাধা-নিষেধের কারণে দেশটিতে ক্রমে নারী বেকারত্ব বাড়ছে, যা বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
নিউজরুম