রুপসীবাংলা, ঢাকা (২২ নভেম্বর) :দুর্নীতি দমন কমিশনের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মকর্তাদেরমধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। আলোচিত কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে শীর্ষকর্মকর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। সম্প্রতি দুদকেরএকজন মহাপরিচালক (ডিজি) প্রত্যাহার এবং বহুল আলোচিত কয়েকটি মামলারঅনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু কারণে শীর্ষকর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।
দুদকের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলানিউজকে এতথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
গত৮ নভেম্বর জনপ্রশাসন মণ্ত্রণালয় থেকে এক আদেশে দুদকের মহাপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) খন্দকার আমিনুর রহমানকে আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (এনবিআর) বদলি করা হয়েছে।
দুদকের একটি পক্ষের অভিযোগ, একটি মহলেরতদবিরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যখন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বিদেশসফরে (ব্রাজিল) ছিলেন, তখন কৌশলে তাকে বদলি করা হয়। এর আগে রাজউক, বিআরটিএ, এনবিআর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়সহ ১১টি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করা হলে সেসময়ে প্রথমবারের মতো তাকে বদলি করা হয়েছিল। তখনও দুদক চেয়ারম্যান বিদেশসফরে ছিলেন। সে সময় চেয়ারম্যানের বিশেষ অনুরোধে এবং প্রধানমন্ত্রীরনির্দেশে তার বদলি আদেশ বাতিল করা হয়েছিল। দু`বারই বদলির আদেশ জারি করাহয়েছিল দুদক চেয়ারম্যানের বিদেশ সফরকালে।
ব্রাজিল থেকে দুদকচেয়ারম্যান দেশে এসেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে বদলির আদেশ বাতিলের বিষয়ে আলাপকরেন। এরপর সরকার বরাবর চিঠিও দেন দুদক চেয়ারম্যান।
চিঠিতে গোলামরহমান সরকারকে অবহিত করেছেন, দুদক বেশ কিছু শক্ত তদন্তের কাজে হাত দিয়েছে।বর্তমানে কমিশন শীর্ষ দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এ কাজের নেতৃত্বেআছেন বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের মহাপরিচালক। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেতাকে প্রয়োজন।
এ পক্ষটি বাংলানিউজকে আরও অভিযোগ করছেন, দুদকের এককমিশনার এবং অনুসন্ধান ও তদন্ত টিমের একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার ইন্ধনে ডিজিআমিনুরকে বদলি করা হয়েছে। আর এ ইন্ধনে যারা রয়েছেন তারা দুদক চেয়ারম্যানেরবিপক্ষে কাজ করছেন।
চেয়ারম্যান সমর্থিত দুদকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থক এক কমিশনার আলোচিত দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে বিভিন্নভাবেচেষ্টা করছেন। বিশেষ করে গত চলতি মাসের ৫ তারিখ রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানবাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বর্তমান সদস্য (রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা) মোহাম্মদ তৌফিকসহ ১৪জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।অবৈধ উপায়ে বিদেশি টেলিযোগাযোগ বা ভিওআইপির মাধ্যমে ২০৫ কোটি টাকা সরকারেররাজস্ব ক্ষতি ও আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদকমামলা করে। বিটিসিএলের প্রভাবশালী কয়েকজনকে যেনো এ মামলায় না জড়ানো হয়সেজন্য চেষ্টা করেছেন ওই কমিশনার। অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের ডিজিচেয়েছিলেন দুদকের তদন্তে ভিওআইপিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হোক।
তবেএসব অভিযোগকে মিথ্যা বলেছেন ওই কমিশনারপন্থী কর্মকর্তারা। এক ঊর্ধতন একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, “চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তেচলছে দুদক। তিনি যার বিরুদ্ধে ইচ্ছে তদন্ত করছেন, মামলার সুপারিশ করছেন এতেপ্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দুদক। চুপ্পুকে (কমিশনার মো: সাহাবউদ্দিন, চুপপুডাকনাম) এখানে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় তাকেজানানো হয় না।“
যোগাযোগ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান গোলামরহমান বাংলানিউজকে বলেন, “দুদকের আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিষ্ঠানেরস্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের থাকে। দেশ ও দশের স্বার্থেযা মঙ্গল তা করতে চেষ্টা করছি। কারো সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি বিষয় না।“
এদিকেবুধবার সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমীতে দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীঅনুষ্ঠানে প্রধান কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে দুদক কমিশনার মো:সাহাবউদ্দিন বলেছেন, “দুদকের আইনের একটি ধারায় আছে কমিশনাররা স্বাধীনভাবেকাজ করতে পারবেন। কার্যত তারা তা পারছেন না।“
ডিজির প্রত্যাহারেরবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কমিশনার সাহাবউদ্দিন চুপপু বলেন, “দুদক আইন অনুযায়ীকমিশনের সভার মাধ্যমে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে (ডিজি) রাখার জন্যএককভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশনারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করাহয়নি।“
প্রসঙ্গত, চেয়ারম্যানের পরের পদে দুদকে দুজন কমিশনার রয়েছেন। এদের একজন মো: বদিউজ্জামান, অপরজন মো: সাহাবউদ্দিন।
কমিশনারবদিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ডিজিকে কেন কি কারণেবদলি করা হয়েছে কিংবা তিনি পূণরায় দুদকে আসবেন কি-না এসব সরকারের ব্যাপার।এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।“
এসব বিষয়ে ডিজি আমিনুরের সঙ্গেএকাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দুদক সূত্র জানায়, আমিনুর বর্তমানে ভিয়েতনাম রয়েছেন।
নিউজরুম