রাবি বিশ্ববিদ্যালয় তাকিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক : ছাত্রলীগের বিক্ষোভ আতঙ্কে ক্যাম্পাস ফাঁকা

0
155
Print Friendly, PDF & Email

নিজস্ব প্রতিবেদক রাবি (২২ নভেম্বর)

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার রাতে কয়েকজন দুস্কৃতিকারী তাকিমের মাথায় হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। বর্তমানে তাকিম রামেক  হাসপাতালে  রয়েছে।

 

রামেক হাসপাতালের শল্যবিদ (সার্জন) অধ্যাপক একরামুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তাকিম শঙ্কামুক্ত নন। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। হাত ও পায়ের রগ কেটে যাওয়ার তার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে।  প্রায় ১৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে তাকে। এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীরাই ছাত্রলীগ নেতা তাকিমের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে শহরে শিবির পরিচালিত রেটিনা কোচিং সেন্টারে অগ্নিসংযোগ ও ইসলামী ব্যংক হাসপাতালের সামনে রাখা ১০/১৫টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের সময় বেশ ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলির শব্দ  পাওয়া যায়।  বৃহস্পতিবার দুপুরেও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। তবে এ ব্যাপারে শিবির নেতাকর্মীদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে আতঙ্কে গতকাল ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে।

 

ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা তাকিম তার বান্ধবীকে এগিয়ে দিতে বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনে যায়। এসময় বিদ্যু চলে গেলে তিনটি মোটর সাইকেলে আরোহন করে ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার পথ অবরোধ করে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে মারধর করে। পরে তার বাম হাত ও বাম পায়ের রগ কেটে দেয় তারা। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি অস্ত্র (পিস্তল) উদ্ধার করে।

 

ঘটনার প্রতিবাদে ও শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করে। সমাবেশে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আহম্মেদ আলী, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শফিক, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ, রাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জাকির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রুবেল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। 

 

জানা যায়, আহত ছাত্রলীগ নেতা তাকিমের পুরো নাম এ কে এম তৌহিদ আলম আখেরুজ্জামান ওরফে তাকিম। তাকিম রাবি’র ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। তার রোল ০৮০৯০১২১। ক্লাসে উপস্থিত কম থাকায় তাকিম বিভাগের ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেনি। এর পর ২০০৯ ও ২০১০ সালেও পরীক্ষার ফরম পূরণ না করায় তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। ছাত্রত্ব না থাকলেও গত জুনে গঠিত ছাত্রলীগের ১৫২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সহ-সভাপতির পদ পান।

 

গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকিমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে। তারপরেও তাকিম সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু’র আস্থাভাজন হওয়ায় দলের সম্মুখভাগে থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে। এছাড়া গত ২ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় তাকিমকে শিবির কর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশের সামনেই গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। ওই সংঘর্ষেও সে আহত হয়।

 

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু তাকিমের উপর হামলার ঘটনায় শিবির কর্মীদের দায়ি করে সাংবাদিকদের বলেন, রগ কাটার রীতি ইসলামী ছাত্র শিবিরের। মৌলবাদী এই গোষ্ঠী আশির-দশকের তান্ডবলীলা চালানোর পাঁয়তারা শুরু করেছে। ছাত্রলীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার জন্য নেতাদের উপর হামলা করছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। 

 

রাজশাহী মহানগর পূর্ব উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ্ গোলাম মাহমুদ বলেন, পরিস্থি’তি এখন শান্ত রয়েছে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

 

ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মতিহার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহনাজ পারভিন জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। 

 

 

 

 প্রতিবেদক, এরশাদুল বারী কর্ণেল, সম্পাদনা আলীরাজ/ রাফি, নিউজরুম

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন