রুপসীবাংলা, ঢাকা (২১ নভেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও কবি নজরুল সরকারিকলেজের ছাত্রদের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।এতে পুলিশ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে।
এমুহূর্তে ঘটনায় দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজকরছে। পুনরায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেজানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা।
এদিকে, ঘটনার পেছনে শিবিরকে দায়ী করে করেছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারাবলছেন, গত কয়েকদিন ধরে যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসছেন তারাই এই ঘটনাঘটিয়েছে।
জবি ছাত্ররা জানায়, বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় নজরুল কলেজেরজনতা ব্যাংকের বুথে টাকা জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে জবির দুই ছাত্রের সঙ্গেনজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কবি নজরুলেরছাত্ররা জবির ছাত্র মাহীসহ দুই ছাত্রকে কুপিয়ে জখম করে।
মারধরের এই খবর জবি ক্যাম্পাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কয়েকশ শিক্ষার্থী বাহাদুর শাহ পার্কের গেটে অবস্থান নেয়।
এসময় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবংদফায় দফায় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হলে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা রণক্ষেত্রেপরিণত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোতয়ালি ও সূত্রাপুর থানাপুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এক সময় সূত্রপুর থানা পুলিশ কবিনজরুল কলেজের গেট ও কোতয়ালী থানা পুলিশ জবি গেটের সামনে অবস্থান নেয়। এরপরওনজরুল কলেজের ছাত্ররা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বেরিয়ে আসে। অপর প্রান্তথেকে জগন্নাথের ছাত্ররা ক্যাস্পাস থেকে বেড়িয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষছড়িযে পড়ে, এসময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্য করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করারচেষ্টা করে।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ২৪ রাউন্ড টিয়ারশেল (কাঁদানেগ্যাস) ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এসময় পুলিশের লাঠিচার্যে জবিরছাত্র শাওন, ইমরানসহ কমপক্ষে ১০/১২ জন ছাত্র আহত হয়। সংর্ঘষের এক পর্যায়ে উত্তেজিত জবি ছাত্ররা কবি নজরুল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা পাঁচটিপ্রাইভেটকার ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ও প্রশাসনিক ভবনেরদরজা-জানালার ব্যাপক ভাঙচুর করে। দুপুর ১টা ৩০সিনিটের দিকে দমকল বাহিনীরকর্মীরা কবি নজরুল কলেজে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
গাড়ির সিলিন্ডারবিস্ফোরণ হলে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক ও ছাত্ররা দিগ্বিদিকছোটাছুটি শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। এসময় জীবন রক্ষার জন্য দুইছাত্রী দুইতলা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়।
নজরুল কলেজের শিক্ষক মাজহারুলইসলাম ও শিক্ষিকা শায়লা নাসরিন বলেন, “ছাত্রদের মধ্যে এ ধরনেরতাণ্ডব এর আগে কখনো দেখিনি। আমরা সবাই ভীতসতন্ত্র ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়েপড়েছি।” এ সময় চারজন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন বলে তারা জানান।
গুরুতরআহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন নজরুল কলেজের ছাত্র নাদিম, সোহেল, পারভেজএবং জগন্নাথের ছাত্র মাহী, রুম্মন, জাহিদ। আহত ছাত্র-ছাত্রীদের আশপাশেরবিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।উভয় প্রতিষ্ঠানের মাসুম, পারভেজ,শফি, নাইম, দিনা, রুমা, লিপি, মিনা, সামাদ, মেহেদী, শায়লা, ওয়াহিদ, ইমন, আলম, জয়নাল, সজল, সানি, রাজন, জাহিদ আহত হয়েছে।
এছাড়া সংর্ঘষে আহতপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহআলম, রবিউল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুকখন্দকার, কনস্টেবল জোনায়েদ, হাবিলদার তাজুল ইসলামকে রাজারবাগ পুলিশহাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা আড়াইটায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরলালবাগ বিভাগের উপকমিশনার হারুন উর রশীদের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হারুন উর রশিদসাংবাদিকদের বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে জামায়াত শিবির পুলিশকে লক্ষ করে হামলা ওগাড়ি পোড়ানোর তাণ্ডব চালাচ্ছে। হঠাৎ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাতারই আলামত।”
তিনি বলেন, “আমার ধারণা জামায়াত-শিবির পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নাশকতা চালাতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
নিউজরুম