রুপসীবাংলা, ঢাকা (২১ নভেম্বর) : নিজের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে আগত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বের হলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কয়েক মিনিট পর ওই পথ ধরেই হাঁটতে শুরু করলেন।
দু’জনেই বিনিময় আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। পথ একই, মাত্রই কয়েক গজের দূরত্ব। তবু দু’জনার মধ্যে দেখা হলো না, হলো কথাও না। ভাব বিনিময়তো নয়ই।
এ দৃশ্য বুধবার বিকেলে সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের।
একজন তাকালে অন্যজনকে দেখতে পেতেন। কিন্তু এরপরও কেউ কারো দিকে দৃষ্টি দিলেন না। তাই তো, এত কাছে তবু কত দূরত্ব! কয়েক মিনিটের মধ্যেই দু’জনার মাঝের পথের দূরত্ব ও দিক পাল্টে যেতে থাকলো।
ঠিক বিকেল ৪টায় বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আসেন। এর ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেখানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিউগলে প্রধানমন্ত্রীকে সামরিক কায়দায় অভিবাদনের পর জাতীয় সঙ্গীত। এরপরই প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করলেন। ১৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ হলো সরকার প্রধানের বক্তব্য। এরপর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যাগতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে বের হলেন।
ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পাশের প্যান্ডেল থেকে প্রধানমন্ত্রীর হেঁটে যাওয়া ধরেই খালেদা জিয়া হাঁটা শুরু করলেন। একই পথ ধরে দু’জন এগিয়ে গেলেন বেশ কিছুটা পথ। এরপর প্রধানমন্ত্রী ডান দিকে মোড় নিলেন। আর খালেদা জিয়া বাম দিকে মোড় নিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করলেন।
এতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর ওপর গণমাধ্যমের স্পট লাইটটা যেন মুহূর্তে বিরোধী দলীয় নেত্রীর ওপর আছড়ে পড়লো।ঘিয়ে রংয়ের শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রাখলেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা। আর খালেদা জিয়াকে ঘিরে রাখলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, মারুফ কামাল খান প্রমুখ।
খালেদা জিয়াকে যেদিকে যাচ্ছেন, গণমাধ্যমই কর্মীরাও সেদিকে।সামরিক কর্মকর্তারা সালাম দিচ্ছেন। আর তাদের স্ত্রীরা একটু এগিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এরই এক পর্যায়ে বেশকিছু সামরিক কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও নারী অতিথিরা তাকে ঘিরে ধরে এক মিনিটের মতো কথাও বললেন।
এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী সবিনয়ে তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, “আজ কোনো কথা বলবো না।”
গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরে বিএনপি চেয়ারপার্সন যখন হাঁটছিলেন নৌবাহিনীর এক নারী কর্মকর্তা তাকে ধরে পথ চলতে সাহায্য করছিলেন।
এরই মধ্যে ঘোর আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সামনে এসে পড়লে তিনি তাকে সালাম দিয়ে পাশ কেটে গেলেন।
কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী যেন বিষয়টি খেয়াল করেননি- এমনই এক ভঙ্গিতে হাঁটতে থাকলেন।
এর মধ্যে একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খালেদা জিয়ার খুব কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলেন। সাবেক ডিআইজি প্রিজন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করতে লাগলেন।
এই সিদ্দিকীর ডিআইজি প্রিজন থাকাকালেই খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাগারে থাকতে হয়েছিল। পুরো সেনাকুঞ্জ প্রাঙ্গণ ঘুরে বিকেল পৌনে পাঁচটায় বিএনপি চেয়ারপার্সন অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখনও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। বিদেশি কুটনীতিক, বিদেশি সেনা কর্মকর্তা ছাড়া বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় মঞ্চে ওঠেন। পুনরায় জাতীয় সঙ্গীত বিউগল। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জ ত্যাগ করেন।
দুই নেত্রীর মধ্যে কথা হয়নি, দেখাও হয়নি। তবু অনুষ্ঠানস্থলে আগত সবার মাঝেই যেন একটা আনন্দের বারতা বয়ে গেল।
দুই নেত্রীকে এক অনুষ্ঠানে সচরাচর দেখা না গেলেও দুই বছরের আগের সময়গুলোতে বরাবরই সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে এক হতেন তারা। গত দুই বছর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালে সর্বশেষ দুজনের একসঙ্গে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে দেখা হলে কুশল বিনিময়ও হয়।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই অনুষ্ঠানে দেশের রাজনীতিক, বিচারপতি, কূটনীতিক, সম্পাদক ও ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তারা যোগ দিয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২১ নভেম্বর সশস্ত্রবাহিনী দিবস। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করেন। ফলে বিজয় ত্বরান্বিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়।
এবছরও যথাযথ মর্যাদা ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে সশস্ত্র বাহিনী। এ উপলক্ষে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনীর ঘাঁটির মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি।
নিউজরুম