মোফাজ্জল হোসেন, নওগাঁ প্রতিবেদক: নওগাঁর খাদ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সাপাহার উপজেলায় এবার ধান কাটা মাড়াই কাজের শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। পুরুষ শ্রমিকের অবর্তমানে অতিরিক্ত বেতন লাভের আশায় ধান কাটা কাজে নারী শ্রমিকের উপস্থিতি ও কদর বেশ বেড়েছে। চলতি বছরের আবহাওয়া কৃষকদের অনুকুলে থাকায় এ উপজেলায় আমন ধানের চাষাবাদ খুব ভালো হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এবারে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ১৭০৫৫.০০ হেক্টর জমিতে উফসী ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন ছিল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ১৭৭৫০.০০ হেক্টর জমিতে উফসী ও স্থানীয় জাতের আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। বাজারে সদ্যউঠা আমন ধানের বর্তমান বাজার মুল্যে কম থাকার কারনে ধান কাটা মাড়াই কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরীতে পোশায় না। এলাকার শ্রমিকরা আমন ধান কাটা মাড়াই কাজ বাদ দিয়ে অধিক বেতনের আশায় দলে দলে ছুটছে নাটোর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফলে ধান কাটা মাড়াই কাজের জন্য শ্রমিক সংকট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন কৃষি শ্রমিক চলতি মৌসুমে সারা দিন ধান কাটা মাড়াই কাজ করে যে পরিমানের পারিশ্রমিক হিসেবে ধান পেয়ে থাকেন তার দ্বিগুন বেতন পান রবি শস্যের জমিতে কাজ করে। এদিকে ধান কাটার উপযুক্ত হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান প্রয়োজনীয় লোকজনের অভাবে মাঠে ফেলে রেখে চরম অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে উপজেলার আমন ধান চাষীরা। মাঠের ফসল ঘরে তোলার চিন্তায় চাষীরা এখন খুব ব্যস্ত। এদিকে পুরুষ শ্রমিকের সংকট থাকায় দু-পয়সা বেশী উপার্জনের লক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে আদিবাসী নারী শ্রমিকরা।
উপজেলা সদরের অদুরে ফুটকইল মাঠে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক উপজেলার কুচিন্দা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা সলোমনি, মিনতী, সুরবালা, ও নববধু নিলা জানান, প্রতিদিন ৩/৪শ টাকা করে তারা উপর্জন করছে। শ্রমিকের খোঁজে প্রতিদিন তাদের বাড়ীতে চাষীরা আসছে। মধইল গ্রামের কৃষক আবু দাউদ.কল্যান পুরের আশরাফ আলী,মাইপুরের সামছুল, কাশিতাড়ার সালউদ্দীন, আব্দুর সাত্তার, মানিরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, যে শ্রমিক সংকটের কারনে এবার সময় মতো আমন ধান কাটতে না পারায় গম, সরিষাসহ সকল প্রকার রবি শস্য চাষাবাদে বিলম্ব হবে। ফলে আগামী রবি মৌসুমে শস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে জমির পাকা ধান সময় মতো কাটতে না পারলে ধানের শীষ ঝড়ে পড়ে কৃষকের ক্ষতির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে বলেও অনেকে মনে করছেন। সময় মতো আমন ধান ঘরে তুলতে না পারা ও রবি শস্য চাষাবাদ করতে না পারায় উপজেলার কৃষক কুল চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ।