রুপসীবাংলা ডেস্ক: ভূয়া কাগজপত্র দাখিল করে একটি ব্যাংক থেকে ৫লাখ ১০হাজার দেরহাম ঋণ জালিয়াতি চেষ্টার দায়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরের একটি ফৌজদারি আদালত দুই ভারতীয়কে দণ্ডিত করেছে। সোমবার (১৯ নভেম্বর) আমিরাতের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ব্যাংককে ধোঁকা দিয়ে ঋণ নিতে দুবাইয়ে অবস্থানরত ভারতীয় বেকার যুবক এফকেবি (৩৭) ও বিক্রয় কর্মকর্তা এবিএম (৪৪) স্যালারি স্টেটমেন্ট ও স্যালারি ট্রান্সফার রিসিট কপি জালিয়াতি করে। তারা ওইসব ভূয়া কাগজপত্রে ভূয়া রাবার স্ট্যাম্পও ব্যবহার করে। তারা লেবার কার্ডে ভূয়া ঠিকানাও ব্যবহার করে। এমনকি পাসপোর্ট জালিয়াতিও করে।
আমিরাতি নাগরিক ব্যাংক কর্মকর্তা এসএকে জানান, ব্যাংকের একজন কর্মী ঋণ নিতে আসা ওই দুই ভারতীয়র আচার-আচরণে সন্দেহ করেন।ঋণ আবেদন পর্যারোচনা সূত্রে যতবারই কোনো নথি চাওয়া হয়, তারা ওইদিন তা দাখিল না করে পরদিনের জন্য সময় চায়। এ পর্যায়ে ব্যাংক তাদেরকে বলে তাদের আগের ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারেন্স লেটার আনতে। ক্লিয়ারেন্স লেটার জমা দেওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওই দাখিল করা ক্লিয়ারেন্স লেটারটি জাল।
ব্যাংকের কর্মী সিরিয়ার নাগরিক এমবিএম জানান, কিছুদিন আগে এটি নামে এক ব্যক্তি ফোন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নিয়ম কানুন জানতে চায়। এসময় সে জানায়, স্যাভিও নামে একজনকে পাঠাবে এবং তার সেল নাম্বার ই-মেল করে পাঠায়। পরে সেভিওর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। স্যাভিও জানায়, গত ১১ বছর ধরে সে আমিরাত গ্রুপে কর্মরত আছে এবং তার মাসিক বেতন ৩৫হাজার দেরহাম। সে সূত্রে ৬লাখ দেরহাম ঋণ নিতে চায়। আমি তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি দিতে বলি। পরের তারিখে কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর তার জন্য ৫লাখ ১০হাজার দেরহাম ঋণের প্রাথমিক অনুমোদন হয়। তবে এ পর্যায়ে আমি তার কাছে সকল সনদের মূলকপিগুলো চাই। আমি তার অফিসে গিয়ে কাগজগুলো এবং তাতে তার স্বাক্ষর নেব বলে জানাই। এ পর্যায়ে সে আমাকে বিভ্রান্ত করে জানায়, তার অফিসে স্টাফ ব্যতীত অন্য কারও প্রবেশাধিকার নেই।এ পর্যায়ে তার অনুরোধে পাশের একটি মলে সাক্ষাৎ করি। স্যাভিও আমাকে ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ মূল কাগজপত্র দেয় এবং ঋণ আবেদনের মূল দরখাস্তে স্বাক্ষর করে। এসময়ে আমি তাকে বলি, তার ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারেন্স লেটার দরকার। পরদিন সে তাও দেয়। এরপর আমি তাকে বলি, তার ব্যাংক থেকে স্যালারি ট্রান্সফার লেটার আনতে। পরের দিন সে আমাকে এটি ও তার নিজের স্যালারি ট্রান্সফার লেটার হস্তান্তর করে। এসব কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় তাদের ওপর আমার সন্দেহ হয়। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানাই এবং পুলিশকেও খবর করি। পুলিশ জানায়, তাদেরকে বুঝতে না দিয়ে ফাঁদের মধ্যে আনতে।
দুবাই পুলিশের লেফটেন্যান্ট আহমেদ সোহাইল সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ধৃত দু’জন তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে এবং কাগজপত্র জালিয়াতির কাজে জড়িত পিটার নামে তৃতীয় এক ব্যক্তির কথা জানায়।গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, ঋণ জালিয়াতির উদ্দেশ্যে স্যাভিও’র নামে ব্যবহৃত পাসপোর্টটি জাল, এর ছবি, রেসিডেন্সি স্ট্যাম্প এবং প্রবেশ ও নির্গমণ স্ট্যাম্পও জাল। এছাড়া আমিরাত গ্রুপের নামে জমা দেওয়া নথিগুলোও ছিল জাল। এমনকি ব্যাংক সংক্রান্ত যত কাগজপত্র তারা জমা করেছিল, সেগুলোও ছিল জাল করা।
এফকেবি এবং এবিএম আদ্যাক্ষরের ওই দুই ভারতীয়কে দুবাই’র দ্রুত বিচার ফৌজদারি আদালত জালিয়াতির দায়ে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে।
নিউজরুম