রুপসীবাংলা, বরিশাল (১৯ নভেম্বর) :বিএনপির চেয়ারপার্সন বিরোধী দলীয় নেতাখালেদা জিয়া বলেছেন, পদ্মাসেতু আওয়ামী লীগের দুর্নীতির জন্যই হয়নি। বিএনপিসরকার যমুনা সেতুসহ বড় বড় সেতু করেছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে দু’টি পদ্মাসেতুকরবো।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সেতুসহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজ সম্পূর্ণ করি, আর আওয়ামী লীগ সেগুলোর নামফলক তুলে দিয়ে তাদের কৃতিত্ব দাবি করে। আমিক্ষমতায় আসার আগে যা যা করবো বলেছিলাম সবই করেছি। এবার বিএনপিসহ আঠারো দলীয়জোট ক্ষমতায় এলে সব করবো।’’সোমবার বিকেলে বরিশাল বিভাগীয় জনসভায়প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। বরিশাল নগরীরবেলস পার্ক মাঠের এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যনগর বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান সরোয়ার।খালেদা বলেন, ‘‘এই সরকার অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। অনেক কিছু করবে বলেছিল। কিছুই করেনি। যা করেছে নিজেদের জন্য।’’
‘‘বরিশালেও কোনো উন্নয়ন আমি দেখতে পাচ্ছি না। এই সরকার চার বছরে বরিশালের জন্য কিছুই করেনি।’’
খালেদাআরো বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের লক্ষ্য লুটপাট করা। এই সরকারের বিরুদ্ধে এখনবিদেশিরাও দুর্নীতির তদন্ত করছেন। চোরদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয় না। এইসরকারকে দিয়েও কোনো উন্নয়ন হবে না।’’১৮ দলীয় জোটপ্রধান খালেদা জিয়াআরো বলেন, ‘‘এই সরকার মিথ্যাবাদী। এই চার বছরে ক্ষমতায় আসার পর কোনো ওয়াদাপালনতো করেই নাই, বরং কৃষি উপকরণের দাম তিনগুণ বাড়িয়েছে।
এই সরকার আসলেজনগণের সরকার নয়, এরা জনগণের রক্তচোষা সরকার।’’‘‘কুইক রেন্টালপাওয়ার প্লান্টের নামে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতেরউৎপাদন বাড়েনি। মানুষ এখনো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এর মধ্যে ছয়বার বিদ্যুতেরদাম বাড়িয়েছে তারা। আবারো বাড়াবে। কুইক রেন্টালের নামে জনগণের পকেট কেটেনিজেদের পকেটে ভরছে। এর সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জড়িত।’’ খালেদাজিয়া আরো বলেন, ‘‘আজ প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিচার বিভাগকেপর্যন্ত দলীয়করণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।সেজন্যই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী অপরাধীদের ধরা হয় না। আরআমাদের নেতাকর্মীদের কিছু না হতেই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, গ্রেফতার করাহয়। এমনকি জামিনও দেওয়া হয় না।’’
আওয়ামী লীগ দুর্নীতিবাজ ও বিশ্বচোরের সরকার বলে অভিযোগ করে খালেদা বলেন, ‘‘সারা দেশে এখন একই শোর, আওয়ামী লীগ হলো বিশ্ব চোর।’’
‘‘এইসরকারের মূল নীতি হচ্ছে, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম আর খুন। তাই তাদের হাতেশুধু রক্ত আর লুটপাট করা সম্পদ।’’ বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় নেতা।তিনিবলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তার কিছুই করেনি। তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হলেআন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনে যুবকদের শরিক হতে হবে। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশে যারা চাকরি করতেন তাদেরও খালি হাতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জমি জমাবিক্রি করে তারা সেখানে গিয়েছেন। এই সরকার দুর্ল সরকার। তাদের ওপরবিদেশিদেরও কোনো সমর্থন নেই।পদ্মাসেতু হবে না উল্লেখ করে তিনিবলেন, এই সরকার পদ্মাসেতুর কথা বলছে। কিন্তু এদের সময়ে এই সেতু আর হবে না।কারণ, সেতু হওয়ার আগেই টাকা লুট করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বোনেরা আরজামাই।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার আদালতের দোহাই দিয়ে মিথ্যা কথাবলে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। অথচ আদালতও আরোদুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কথা বলেছিলেন। এখন আবার তাদের দলীয়সরকারের অধীনে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। এমনকি বর্তমান এমপিরাওপদত্যাগ না করেই নির্বাচন করতে চাচ্ছে এই সরকার।
এ ধরনের ব্যবস্থাবিশ্বের কোথাও নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে এ দেশেকোনো নির্বাচন দেওয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবেনা। তিনি বলেন, এই মহাচোর, খুনি, সন্ত্রাসীদের সরকারক্ষমতায় থাকলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই একমাত্রসমাধান হচ্ছে, এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল এবং তারঅধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটকে ক্ষমতায় আনা।
বিএনপিকেমুক্তিযোদ্ধাদের দল ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে উল্লেখ করে ক্ষমতায়গেলে উন্নয়ন, সন্ত্রাস দূর, জঙ্গি নির্মূলসহ সব ধর্মের মানুষেরশান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশগড়ারও প্রতিশ্রুতি দেন খালেদা জিয়া। বস্তি ও হকার উচ্ছেদ বিএনপি করবে নাউল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জন্য ভালোভাবে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করবেবিএনপি। পাশাপাশি বেকার যুবকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশে সুশাসনপ্রতিষ্ঠা করাও হবে বিএনপির কাজ।তিনি কুয়াকাটা ও কক্সবাজারেআন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা, বরিশাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি কলেজনির্মাণসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জনসভায়আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইসমার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির চেয়ারম্যান শওকত হোসেন নীলু, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলঅধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী।স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতিআহসান হাবিব কামাল ও সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং বরিশাল উত্তরজেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আকনকুদ্দুসুর রহমান প্রমুখ।
নিউজরুম