রুপসীবাংলা, ঢাকা(১৯ নভেম্বর): ‘ও আল্লাহরে পৃথিবীতে আমার আর কেউ রইলো নারে……আমি ক্যান বাঁইচা রইলাম রে… ক্যান মা ,পুলা ও স্বামীর লগে আমারে পুড়াইলোনারে ..খোদা …।’‘খোদা (আল্লাহ) আমি এখন কই যামুরে কি করমুরে…. ওদের সঙ্গে মইরা যাওয়াও ভালা ছিলোরে ,,,, ক্যান আমি এক লগে রইলাম নারে…’
এভাবেই হাজারীবাগের বস্তির অগ্নিকান্ডে শিউলি খাতুন মা,সন্তান ও স্বামীকে হারিয়ে শোকে বিহবল হয়ে আর্তনাদ করছিলেন।
শিউলিখাতুনের চোখ দিয়ে ঝরছে লোনা জল ও শোকে বুক চাপড়ানো আর্তনাদ। আশে পাশেরলোকদের দেওয়া সান্ত্বনাও দমাতে পারছিলো শিউলি খাতুনের আহাজারিকে।
রোববারহাজারীবাগের বউ বাজার বস্তির ভয়াবহ আগুনে শিউলি খাতুন(২৬), হারিয়েছে তারমা আয়শা বেগম (৫৫), শিশু
সন্তান আবদ্দুলাহ(৪) ও স্বামী সুমনকে(৩৫)।বাড়িতেস্বামীর সঙ্গে বিবাদের কারণে যে বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন সেই বাড়িতেই থেকেগিয়েছিলেন শিউলি খাতুন। এর ফলেই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের হাত থেকে প্রাণে বেঁচেযান তিনি।
চারিদিকে পোড়া গন্ধ ও স্বজন হারানোদের আহাজারিতে মুহ্যমান হাজারীবাগের বউ বাজার বস্তি।
ঠিক একই পাশে মা আনোয়ারা খাতুনকেও (৬০) হারিয়ে আর্তনাদ করছিলেন রহিমা খাতুন ও ঝর্ণা ।
রহিমা খাতুন ও ঝর্ণা থাকেন ট্যানারি মোড়ে, নিজেদের স্বামী সংসার নিয়ে। আর তাদের মা আনোয়ারা থাকতেন হাজারীবাগ বউ বাজার বস্তিতে।
মায়ের ব্যবহার করা বিছানা ও থালা বাসন দেখিয়ে দেখিয়ে কাঁদছিলেন রহিমা ও ঝর্ণা।
একইসময় বস্তির বাথরুমে পড়ে থাকা মাথার চুল নিয়ে নীরবে অশ্রু ফেলছিলেন পারভিনখাতুন(২৮), আর একটু পর পরই গুমরে উঠছিলেন অব্যক্ত বেদনায়, ‘এইডাই বুঝিআমার মাইয়া ময়নার(১২) চুল রে………………….।’
‘আমি আমার ময়নার চুল ঠিকই চিন্তে পারছি রে আল্লাহ……আমি এখন কার চুল বাঁধবো রে….. এই বুঝি আমার ময়নার চুল রে……………’
ততোক্ষণে অবশ্য নিহত ময়নার লাশ ঢাকা মেডিকেলে কলেজে নিয়ে গেছেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন।
একমাত্র মেয়ে ময়নাকে হারিয়ে পাগল প্রায় পারভিন ক্ষণে ক্ষণে নিজের মনেইবকছেন, ‘ময়না তুমি কই গ্যালা মা ……….. আমারে কে মা বলে ডাকবে মা…একবার আমাকে মা বলে ডাকো মা…….।’
বস্তির নিয়ন্ত্রণকারীকে দোষারোপ করে এ সময় পারভিন দাবি করেন, ‘বস্তির গেট খোলা থাকলে হয়তো আমার ময়না প্রাণে বেঁচে যেতো।’
আরেকমাতৃহারা জানু খাতুন তার মা আয়েশা খাতুনের(৫২) সন্ধান করছেন। ‘আমার মায়েরলাশটা অন্তত পাইতে চাই……….’ এভাবে প্রলাপ বকতে বকতে মায়ের অগ্নিদগ্ধলাশের সন্ধান করছিলেন পাগলপারা সন্তান জানু বেগম।
হাজারিবাগ বউ বাজার বস্তির একটি বাড়ির বাথরুমে পড়ে থাকা মাথার লম্বা চুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে ১৩টি লাশের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
পুরুষেরা লাফ দিয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে আগুনের শিখা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও বাচঁতে পারেনি নারী ও অবলা শিশুরা।এছাড়াবস্তির প্রধান গেট বন্ধ থাকার কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে ধারনাকরেন।৫ বছর আগেও এই বউ বাজার বস্তিতে আগুন লেগেছিল বলে জানান স্থানীয়রা।স্থানীয় বাসিন্দা ঈসমাইল হাওলাদার (৮১) বলেন,“৫ বছর আগেও বস্তিতে একবার আগুনলাগে।তবে ক্ষয়ক্ষতি এত ভয়াবহ ছিলো না।”তিনি বলেন,“তখন বস্তির লোক কম ছিল, কিন্তু এখন ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার লোক বাস করে বৌবাজার বস্তিতে।”
নিউজরুম