রুপসীবাংলা, অর্থনীতি ডেস্ক: কর্তৃপক্ষের ‘অন্যায় আচরণের’ কারণে দুই বছর ধরেঅনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ছয়জন ক্যাডেট পাইলট।অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতায় সিনিয়রিটি পেলেও তাদের কোনো কাজ নেই। অথচ তাদেরডিঙ্গিয়ে জুনিয়র চারজন পাইলটের প্রশিক্ষণ করিয়ে নিয়েছে বিমান।
নিয়োগদেওয়ার পর এই ১০ জন পাইলটকে এক সঙ্গে ট্রেনিং করানোর কথা ছিল– এটাই নিয়ম।কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ জুনিয়র চারজনকে আগে ট্রেনিংয়ে পাঠায়।এচারজনের মধ্যে একজন বর্তমান পাইলটের ছেলে, একজন বিমান বাহিনীর পাইলটেরছেলে, একজন কেবিন ক্রুর ছেলে এবং অন্যজন এক বিশিষ্ট শিল্পপতির সন্তান বলেজানা গেছে। মেধাতালিতায় পেছনে থাকলেও মূলত পিতার পরিচয়ের জোরেই সামনেরসারিতে চলে এসেছেন তারা।
যে প্রশিক্ষণ ৬ মাসে শেষ হওয়ার কথা ওইজুনিয়র পাইলটরা তা শেষ করেছেন প্রায় দুই বছরে। এর মধ্যে একজন এখনো ট্রেনিংশেষ করতে পারেননি। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।এদিকেট্রেনিং না করে বসে থাকার কারণে সিনিয়র পাইলটদের নতুন করে ফ্লাইট ক্লাবথেকে আবার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। দুই বছর বসে থাকায় তাদের নতুন করে লাইসেন্সওনিতে হবে। দুই বছর ধরে এই পাইলটরা মাসে ১৫ হাজার টাকার ভাতা পাচ্ছেনমাত্র। ট্রেনিং নিতে না পারার কারণে বিমানে তাদের নিয়োগ হলেও চাকরি স্থায়ীহয়নি। এর ফলে মানসিক ও সামাজিকভাবে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন এই ৬ পাইলট।
জানাযায়, ২০১০ সালে এই ১০ ক্যাডেট পাইলটকে নিয়োগ দেওয়ার আগে বিমান লিখিতপরীক্ষার পাস নম্বর কমিয়ে ৫০ করে। এর আগে লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর ছিল ৭০।লিখিত পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জনকে পেছনে ফেলে কর্তৃপক্ষ বেসিকঅ্যান্ড টাইপ পরীক্ষার মাধ্যমে পরের দিকের চারজনকে প্রথম দিকে নিয়ে আসে।
লিখিত, বেসিক অ্যান্ড টাইপ, জিটিসির (গ্রাউন্ড ট্রেনিং সেন্টার) নম্বর যোগ করেপরবর্তী সময়ে ক্যাডেট পাইলটদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বিমানকর্তৃপক্ষ লিখিত পরীক্ষা, বেসিক অ্যান্ড টাইপ ও জিটিসির পরীক্ষার নম্বর একসঙ্গে যোগ না করে শুধুমাত্র বেসিক অ্যান্ড টাইপ পরীক্ষার মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতানির্ধারণ করে দু’জন করে একেবারে নবিশ চারজন পাইলটকে সিমুলেটর ট্রেনিংয়েপাঠায়। আর এটা করা হয় মূলত স্বজনপ্রীতির কারণেই। সিমুলেটর শেষে এদের বোয়িং৭৩৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অথচযাদের বসিয়ে রাখা হয় তারা লিখিত পরীক্ষায় প্রথম দিকে ছিলেন।এদেরপ্রত্যেকের ৫০০ থেকে ১৫০০ ঘণ্টা ট্রেনিং ছিল।অন্যদিকে ওই ৪ জনের কারোই ১৫০ঘন্টার বেশি ট্রেনিং ছিল না।এ ব্যাপারে বিমানেরই একজন সিনিয়র পাইলট ‘বাংলানিউজ’-কে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী যেসব ক্যাডেটের মাল্টি ইঞ্জিনউড়োজাহাজ ফ্লাইংয়ের অভিজ্ঞতা আছে তাদেরই সিমুলেটর ট্রেনিং এ পাঠানো উচিত।
কেননা বোয়িং ৭৩৭ খুবই উন্নতমানের উড়োজাহাজ।”তিনি বলেন, “কিন্তবিমান কর্তৃপক্ষ তাদের না পাঠিয়ে যাদের অভিজ্ঞতা নেই, সদ্য ফ্লাইং ক্লাবথেকে সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিশিষ্ট ছোট উড়োজাহাজে মাত্র ১৫০ ঘন্টা ট্রেনিং করেছেতাদের আগে পাঠিয়েছে। যে কারণে অনেক ঘন্টা ফ্লাই করেও ৬ মাসের ট্রেনিং শেষকরতে তাদের প্রায় দুই বছর লেগেছে।”ওই সিনিয়র পাইলট আরো বলেন, “এতে বিমানের ট্রেনিং বিভাগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অর্থের অপচয় হয়েছে।
বিশ্বেরকোনো এয়ারলাইন্সে এমনকি বিমানের ইতিহাসেও এ ধরনের নজির নেই।এ ধরনের ব্রেকঅব ট্রেনিং ক্যাডেট পাইলটদের কাজের মনোবল এবং কাজের দক্ষতা নষ্ট করে দেয়।এধরনের বিষয় পাইলট ও এয়ারলাইন্সের জন্য ক্ষতিকর। বিমান সম্পূর্ণ অন্যায় ওঅযৌক্তিকভাবে ৬ পাইলটের জীবন নষ্ট করছে” বলে মন্তব্য করেন তিনি।বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্যএবিষয়ে বিমানের পরিচালক(ফ্লাইট অপারেশন)ক্যাপ্টেন ইশরাতের সঙ্গে যোগাযোগকরা হলে তিনি বলেন, “নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে। আর বসেথাকলেও তাদের লাইসেন্স বাতিল হবে না। ট্রেনিং করলে তারা আবার লাইসেন্স ফিরেপাবে। প্রয়োজন হয়নি তাই তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়নি।”
‘প্রয়োজন নাথাকা সত্ত্বেও ওই ৬জনকে তাহলে কেন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল’ –এ প্রশ্নের জবাবেতিনি বলেন, “তখন প্রয়োজন হয়েছিল বলেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
নিউজরুম