রুপসীবাংলা, ঢাকা (১৮ নভেম্বর) :নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামের মোরশেদ আলী।বছর দুয়েক আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেছিলেন। প্রায় এক বছর আগেতিনি হাজারিবাগের বস্তিতে পরিবার নিয়ে বাস করা শুরু করেন। শনিবার রাতেলোকজনের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। মুহূর্তেঘর থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
সেই যে রাত ৩টার দিকে বেরিয়েছিলেন ঘর থেকে, আর ঢুকতে পারেননি। জমানো টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় সবই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।রোববার সকালে বস্তির পাশে দাঁড়িয়ে শুধুই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন মোরশেদ।
স্থানীয়লোকজন জানালেন, হাজারিবাগের এই বস্তিতে প্রায় ৫ হাজার ঘর ঘরবাড়ি ছিল।প্রতি পরিবারে যদি সর্বনিম্ন ৩ জন করেও সদস্য থাকে, তাহলে সব মিলিয়ে প্রায়১৫ হাজার লোক বাস করতো এখানে।
মোরশেদের মতো হাজারিবাগের বউবাজারেরএই বস্তিতে প্রায় ৫ হাজার লোক এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তাদেরচোখের সামনে এখন শুধু হাহাকার।
মোরশেদের সঙ্গে নির্বাক দৃষ্টিতে তকিয়েছিলেন গোলাম আজম, মিজান, সেলিম, আতাউর, বাবু, আলমগীরসহ আরো বেশ কয়েকজন।মোরশেদ বলেন, “আমাদের আর কিছুই নেই। আমরা এখন নি:স্ব। আমার টাকা-পয়সা, জামা-কাপড় সহ যাবতীয় সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।”তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচবো?”
মিজান, গোলাম আজম, আতাউর রহমানের কণ্ঠেও একই সুরের কান্না।আতাউররহমান বলেন, “আমার কিছুই নেই। ঘরে আমার ৫ হাজারের মতো টাকাছিল। সেই টাকাগুলো নিতে পারিনি। লোকজনের চিৎকার শুনে বের না হলে আমরাসপরিবারে মারা যেতাম।”
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “বেঁচে যাওয়াটাই আমাদের সান্ত্বনা।”সর্বস্ব হারানো সালমা বাংলানিউজকে বলেন, “কিছুদিন আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আর এখন এই আগুন আমার ঘরে যা ছিল সবকিছু নিয়ে গেল।”
তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, “এখন আমি যাবো কোথায়?” বর্তমানেবস্তি পরিদর্শনে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যারাই আসছেন, বস্তির লোকজনছুটে যাচ্ছেন তাদের কাছে। একদিকে স্বজনহারাদের হাহাকার, অন্যদিকেক্ষতিগ্রস্তদের ছোটাছুটি, সবমিলিয়ে ভারি হয়ে আছে এলাকার পরিবেশ।
বস্তির লোকজনের সামনে এখন একটিই চিন্তা- কোথায় মাথা গুঁজবেন তারা? খাবেন কি?
রাজধানীরহাজারীবাগ এলাকার শিকদার মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন বস্তিতে শনিবার গভীর রাতেরওই ভয়াবহ আগুনে নারী-শিশুসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দিবাগত রাত ৩টার দিকেএকটি তেলবাহী ভ্যানগাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে প্রায় ৫ হাজারঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিউজরুম