সোনালী ব্যাংকের বিদায়ী পরিচালক হেনরীর কললিস্ট দুদকে!

0
175
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, ঢাকা (১১ নভেম্বর) : সোনালী ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী পরিচালক জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর গত এক বছরের কললিস্ট এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক)সোমবার একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির পক্ষ থেকে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের কাছে হেনরীর কললিস্ট ও এসএমএসের তথ্য জমা দেওয়া হয়েছেদুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হেনরীর কললিস্ট ও এসএমএসের (খুদে বার্তা) তথ্য পাঠায় কোম্পানিটি

 

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেনাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “হেনরিসহ প্রায় ত্রিশ জনের  বেশি ব্যক্তির কল লিস্ট সংগ্রহ করেছে দুদকআরো কয়েকজনের কল লিস্ট শিগগিরই পাওয়া যাবেদুদক সূত্র জানায়, গত একবছরে হেনরী কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন? এসএমএসে কি তথ্য আদান-প্রদান করেছেন? হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখবে কমিশন

 

দুদকের তদন্ত টিমের একাধিক সদস্য ধারণা করছেন হলমার্কসহ বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারিতে তার প্রভাব থাকতে পারেআর তার মোবাইল ফোনে থাকতে পারে দুর্নীতির তথ্য

 

সোনালী ব্যাংক-হলমার্কসহ বড় আরও একাধিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দুদকের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের কাছে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের কললিস্ট ও এসএসএসের তালিকা চেয়ে আবেদন করে দুদকএ পর্যন্ত ৩৫ ব্যক্তির কল লিস্ট দুদকে এসেছে বলে জানা গেছেসর্বশেষ হেনরীর কলের তালিকা হাতে পায় দুদক

হেনরী পেশা সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের একটি মধ্যমমানের হাইস্কুলে শিক্ষকতাবছর চারেক আগেও তার জীবন-যাপন ছিল খুবই সাদামাটাচলাফেরা করতেন রিকশায়মধ্যবিত্ত আর দশজনের মতোই সাদামাটা জীবন-যাপন ছিল তারকিন্তু মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরই রাতারাতি পাল্টে যেতে থাকে তার সবসিরাজগঞ্জ শহরের সবুজ কানন হাইস্কুলের শিক্ষক হেনরী ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক নিযুক্ত হনএরপরই মালিক হন বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্তেরগাড়ি-বাড়ি আর সামাজিক অবস্থানেরও হয় রাতারাতি পরিবর্তনহেনরীর এ উত্থান তার পরিচিতজনদেরকেই ফেলে দেয় এক ঘোরের মধ্যে

 

হেনরী বর্তমানে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকাজেলা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদারের পুত্রবধূ হিসেবে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২(সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে খুব সহজে মনোনয়ন পান হেনরীকিন্তু পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে

বলা হয় এ আসনের সাবেক সাংসদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের যথাযথ সমর্থন না পাওয়াতেই তাকে পরাজিত হতে হয়সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক করা হয়আর এ পুরস্কারপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই শুরু হয় তার নতুন পথচলা

 

গত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় স্কুলশিক্ষিকা জান্নাত আরা হেনরী তার মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছিলেনহলফনামা অনুযায়ী তাদের স্বামী-স্ত্রীর কাছে মোট নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিলস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৪ বিঘার কিছু কমযার মূল্য ৬ লাখ টাকারও কমবর্তমানে বাড়ি গাড়ি আর বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হেনরীচার বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে হেনরীর অবস্থান

 

অভিযোগ রয়েছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ঋণপ্রদান, চাকরি বাণিজ্য, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বদলি, ঋনমওকুফ, শাখা খোলাসহ বিভিন্ন তদবির-বাণিজ্য করেন হেনরীগত সাড়ে তিন বছরে হেনরী প্রায় শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেনসোনালী ব্যাংকের ঊর্ধতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় অংকের ঋণ পেতে হেনরীর দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকেতার সুপারিশে সোনালী ব্যাংক থেকে অনেকেই মোটা অংকের ঋণ পেয়েছেনবিনিময়ে একটা পার্সেন্টও তিনি পেতেন

 

 

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন