রুপসীবাংলা, ঢাকা (১২ নভেম্বর) :সোমবার বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। সারাবিশ্বেচতুর্থবারের মতো এ দিবসটি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশেরমতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন পদযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
সেভদ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৩০ থেকে১৪০টি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে সারা বছরে দেশে এই রোগেপ্রাণ হারাচ্ছে ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু।
ঢাকা শিশু হাসপাতালেরপেডিয়েট্রিক রেসপাইরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘বিশ্বে প্রতিবছরই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় ২০ লাখ শিশু।এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই মারা যায় প্রায় ৫০ হাজার শিশু।’
তিনিবলেন, ‘বিশ্বে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশেরঅবস্থান পঞ্চম। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছরই প্রায় ৬০ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায়আক্রান্ত হয়।’
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিউমোনিয়াতে শিশুদেরআক্রান্ত হওয়ার সময়ও পাল্টে যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালেখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েইচলেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জাতীয়অধ্যাপক এম আর খান বলেন, ‘শিশু মৃত্যু হার কমানোর প্রধান অস্ত্র সচেতনতা।এছাড়া ঠিক সময়ে ওষুধ দিলে শিশু মৃত্যু শতকরা ৬০ ভাগ কমানো যায়। এছাড়া মায়েরবুকের দুধ, পরিচর্যা ও সেবা দিয়ে একটি শিশুকে সহজেই সারিয়ে তোলা যায়।’
তিনিবলেন, ‘টিকা দেওয়ার মাধ্যমে দেশে পোলিও, ধনুষ্টংকার এবং অন্যান্য মারাত্মকসংক্রামক ব্যাধি বিলুপ্ত করা গেছে। একইভাবে নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন বা টিকাদিয়ে ব্যাপকভাবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা এবং শিশুদের জীবন রক্ষা করাসম্ভব।”
শিশুর পুষ্টিহীনতাকেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতমকারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে নিউমোনিয়া রোধ করতে হলে সবার আগেশিশুর অপুষ্টি রোধ করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি শিশুকে জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেইমায়ের সাল দুধ খাওয়াতে হবে। পাশা্পাশি শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত তাকে কেবলমায়ের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। এই প্রক্রিয়ায় নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত অনেক রোগথেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
অধ্যাপক রুহুল আমীন বলেন, ‘নিউমোনিয়াপ্রতিরোধে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ৬মাস অতিক্রম করলেই কেবল তাকে ঘরের স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।’বাংলাদেশশিশু চিকিৎসক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘শীতকালেসাধারণত নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। এছাড়া অন্যান্য জীবাণুরসংক্রমণ এ সময় বৃদ্ধি পায়।’
তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হাসপাতালেরতথ্যানুযায়ী গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশী।এরমধ্যে নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।’ বাংলাদেশপেডিয়েট্রিক অসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘হাসপাতালেভর্তির পর নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়। তাই হাসপাতালেনিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। তবে সবচেয়ে বেশি মারা যায়কমিউনিটি পর্যায়ে। গ্রামের অনেক শিশু দারিদ্রের কারণে হাসপাতালে আসারসুযোগ পায় না। এমন প্রায় ৩৭ শতাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেও প্রয়োজনীয়সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।