রুপসীবাংলা, ঢাকা (১১ নভেম্বর) :চার্জশিট মাথায় নিয়ে দুই বছর ধরে উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাত পাইলট বা বৈমানিক।সংশ্লিষ্টরাবলছেন, চাকরিচ্যুত হওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ এনে গঠিত চার্জশিট নিয়েউড়োজাহাজ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও বিমান কর্তৃপক্ষ বিষয়টিরসুরাহার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বিমান কর্তৃপক্ষ এক প্রশাসনিক আদেশ জারি করে ছয় বৈমানিকের চাকরির বয়স ৫ বছর বাড়িয়ে ৫৭ থেকে ৬২ বছর করেন। তখনবিমান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলটঅ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। বাপা নেতারা এই সিদ্ধান্তকে অনিয়মতান্ত্রিক উল্লেখকরে তা বাতিলের দাবি জানান। এক পর্যায়ে ধর্মঘটের মতো নানা কর্মসূচিতে যায়বৈমানিকেরা।এ অবস্থায় বাপার অনেককেই শোকজ করা হয়। সাতবৈমানিকের বিরুদ্ধে বিমান বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তাদের চাকরিচ্যুতকরার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাত বৈমানিক বিমান বন্ধের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ অভিযোগএনে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় ওই বছরের নভেম্বরে।
চার্জশিটভুক্তবৈমানিকেরা হলেন- ক্যাপ্টেন এস এম হেলাল, ক্যাপ্টেন শাহ আলম, ক্যাপ্টেনমাহবুব, ক্যাপ্টেন জাকির, ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক, ক্যাপ্টেন মাকসুদ ও বাপারতৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন মাহতাব।এ বিষয়ে বিমানেরএকাধিক বৈমানিক বলেন, একজন বৈমানিক একটি উড়োজাহাজে কয়েক’শযাত্রী নিয়ে ফ্লাই করেন। চাকরিচ্যুত হওয়ার মতো এ ধরনের অভিযোগপত্র নিয়েমানসিকভাবে অনেকেরই ঠিক থাকার কথা নয়। যাত্রীরা যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়েনতার জন্য দায়ী হবেন বৈমানিক। এরপরেও শুধুমাত্র বিমান কর্তৃপক্ষেরস্বৈরাচারী আচরণের কারণেই শতশত যাত্রীর জীবন ঝুঁকি নিয়ে ছয় বৈমানিক দুই বছরধরে ফ্লাই করছেন। কোনো সমাধান করা হচ্ছে না।
বিমানের একজন পদস্থকর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এজন্য বৈমানিকেরাইদায়ী। কারণ চার্জশিট দেওয়ার পরপরই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়। যে কারণেবিষয়টি ঝুলে গেছে।অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারাচাকরিচ্যুত হতে পারতেন কি পারতেন না সেটি পরের বিষয়। একটি সিদ্ধান্ত আসারপরই তারা আদালতে যেতে পারতেন। তাহলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।এব্যাপারে অভিযুক্ত একজন বৈমানিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তারা যেন্যায্য আন্দোলন করেছিলেন এ বছরের ২৬ জুন আদালতের এক রায়ের মাধ্যমে তাপ্রমাণিত হয়েছে। আদালত বৈমানিকদের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণাকরেছে। ন্যায্য বিষয়ের ওপর আন্দোলন করতে গিয়েই তখন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগএনে আমাদের চাকরিচ্যুত করার উদ্দেশেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল।
তাই তখননিজেদের জীবিকার স্বার্থেই আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষযদি কোনো আপসের প্রস্তাব দেয় তবে তারা ভেবে দেখবেন। কিন্তু অন্যায় অভিযোগমেনে নিতে পারি না।’অন্য এক অভিযুক্ত বৈমানিক বলেন, কর্তৃপক্ষদমননীতির মাধ্যমে বিমানে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। আর একারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তার দায়-দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। ২০/২৫বছর চাকরি করেও যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠেনি আজ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগআনার অর্থ পরিষ্কার, যেকোনো মূল্যে বিমান থেকে তাদের বের করে দেওয়া। তিনিবলেন, ক্যাপ্টেন মাহবুব ওই আন্দোলনের সময় ফ্লাইট নিয়ে বিদেশে ছিলেন।তারপরেও তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক অন্যায় কাজ করেছেকর্তৃপক্ষ।
বৈমানিকদের তখনকার আন্দোলন বিমান কর্তৃপক্ষ না মানলেওআদালতের রায়ে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তা মানতে বাধ্য হয়। ২৬ জুনের ওই রায়েরওপর ভিত্তি করে বিমান চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ তড়িঘড়ি করেএয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন শেখ নাসিরউদ্দিনআহমেদসহ ছয় বৈমানিককে সরিয়ে দেন।
নিউজরুম