মোফাজ্জল হোসেন, নওগাঁ (১১ নভেম্বর) : নওগাঁয় সিভিল সার্জন ডাঃ সোলায়মান আল-ফারুক মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে দাপটের সাথে চাকুরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নওগাঁ-৬ আসনের সাবেক এমপি’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সামসুল আলম মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে উলেখ করা হয় যে, নওগাঁ জেলা সদরের উকিল পাড়া মহল্লার মৃত তারিফ উদ্দীনের ছেলে ডা: সোলায়মান আল-ফারুক কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামে তার কোন ভূমিকাও ছিল না। এমনকি সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময়ও তিনি নিজেকে ‘‘মুক্তিযোদ্ধা’’ হিসেবে উল্লেখ করেন নি। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায়ের লক্ষে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেছেন। ওই সনদ দিয়ে অবৈধ পন্থায় গেজেটে নাম অন্তর্ভূক্ত করে চাকরির মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান জানান, প্রতারণা ও জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানির পর তারা সিভিল সার্জন ডাঃ সোলায়মান আল-ফারুককে চ্যালেঞ্জ করে গত ২ মে ওই অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে ২৪ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম অভিযোগটি আমলে নিয়ে দ্রুত তদন্তের জন্য ডিজিএফআই ও ডিজি এনএসআই বরাবর দায়িত্ব দেন।
তদন্ত প্রভাবিত হবার আশঙ্কায় তিনি গোয়েন্দা সংস্থার স্থানীয় কর্মকর্তার পরিবর্তে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শুধু সিভিল সার্জন ডাঃ সোলায়মান আল ফারুকই নয়, জেলার বড়-বড় ২টি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরাও একই কায়দায় মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ সংগ্রহ করে তা দিয়ে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ করে নিয়েছেন এবং মেয়াদের সময়ও শেষ হয়েছে।
কিন্তু স্থানীয় একটি বড় প্রভাবশালী শক্তির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে অথবা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।’’ তারা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধির সরকারী ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই সিভিল সার্জন ডাঃ সোলায়মান আল ফারুক সনদ তৈরি ও গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য এখানে-সেখানে ধর্ণা দেন। কিন্তু বড় ওই শক্তি হাতে থাকায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।
নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হারুন-অল-রশিদ বলেন, ‘‘ডা: সোলায়মান আল-ফারুকের নাম নওগাঁ জেলার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন।’’ কী করে এবং কোন পন্থায় তিনি গেজেটভুক্ত হলেন এবং চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলো এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’’ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সিভিল সার্জন ডাঃ সোলায়মান আল-ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
সম্পাদনা, আলীরাজ/ রাফি, নিউজরুম