রামু (কক্সবাজার, ১১ নভেম্বর): জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।শনিবারবিকেলে রামুর খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিতসম্প্রীতি সমাবেশে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদাজিয়া বলেন, “এই জামায়াত ছিলো তাদের (আওয়ামী লীগ) দোসর। তারা ১৯৯৫-’৯৬ সালেজামায়াতকে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ’৮৬ সালে জামায়াতকে নিয়েএরশাদ নির্বাচন করেছেন। নিজামীকে পাশে বসিয়ে হাসিনা আমাদের বিরুদ্ধেআন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করেছেন।”<br>
“তখন কোথায় ছিলো যুদ্ধাপরাধী” প্রশ্নতুলে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে সেটা হতেহবে নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের।” “এখনো জামায়াতের সঙ্গে তলে তলেতাদের (আওয়ামী লীগ) সম্পর্ক আছে কি না তা কে জানে” বলে সংশয় প্রকাশ করেতিনি বলেন, “তারা চেষ্টা করছে কিভাবে জামায়াতকে পক্ষে নেওয়া যায়। জামায়াতএখন সন্ত্রস্ত। কিভাবে আপোষ করে তাদের নিয়ে নির্বাচন করা যায় সে চেষ্টাকরছে। এজন্য তাদের (জামায়াত) ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে।<br>
রামুর বৌদ্ধ বসতি ও বিহারে হামলার ঘটনায় প্রশাসন, গোয়েন্দা ও সরকারকে দায়ী করেন খালেদা জিয়া।
“জনগণেরটাকা লুটপাট করে তারা এখন (আওয়ামী লীগ) মোটাতাজা হচ্ছে” মন্তব্য করেখালেদা জিয়া বলেন, “আপনাদের নাওয়ের তলা ফুটা হয়ে গেছে। পালাতে পারবেন না।”এ সময় সরকারকে রামুতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার আহবান জানিয়ে ওই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান বিরোধী দলীয় নেতা।তিনি বলেন, “রামুর ঘটনায় জড়িতদের বিচার না করলে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের বিচার করা হবে।”<br>
তিনি বলেন, “দেশে তৈরি সম্ভব না হলে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে মূর্তি এনে ক্ষতিগ্রস্ত বিহারে স্থাপন করা হবে।”সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করারও আহবান জানান তিনি।খালেদা জিয়া বলেন, “এক দিকে নাফ নদী, আরেক দিকে সাগর, পালাবে কোথায়। আওয়ামী লীগ পালাতে পারবে না।”প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনার দিকে ঈঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তাদের খায়েশ হয়েছে যতদিন বাঁচবেক্ষমতায় থাকবে। এজন্য সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করে নিয়েছে। এখনআমাদের সামনে পথ দু’টি-নিজেরাই তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহালকরবে অথবা আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।”<br>
তিনি বলেন, “আমরা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। বৌদ্ধরা নিরীহ। তারা শান্তিময়জীবন-যাপন করতে পছন্দ করেন। ২৯ সেপ্টম্বর ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তদন্তকমিটি গঠন করেছিলাম। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা উচ্চ পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার করেনি, কারণ এতেআওয়ামী লীগ জড়িত। ওই তদন্ত কমিটি করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতো।”খালেদাজিয়া বলেন, “এখান থেকে থানা মাত্র দু’শ গজ দূরে। অথচ ঘটনার সময় পুলিশআসেনি। কারণ, সরকার নির্দেশ <br>
দেয়নি। এই একই ঘটনা তারা বিডিআর এ ঘটিয়েছিল।এখন সরকারের লোকের এসে মায়াকান্না করছে। গত দুই মাসে তারা কিছু করেনি। আমরাআসবো শুনে তাড়াহুড়া করে কিছু ঘরবাড়ি বানাচ্ছে।”বিরোধী দলীয় নেতাবলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) চায়নি আমরা এখানে আসি। এ কারণে আমি ফেনী থেকেআসার পর সেখানকার গডফাদার ককটেল মেরে ভয় দেখিয়েছে। যাতে আমরা ভয় পেয়েরামুতে না আসি।”তিনি বলেন, “এই আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করেছে। আমি তরুণদের বলবো, তোমরাপুরানো বইপত্র ঘেঁটে দেখ, তাহলে দেখতে পাবে ১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত তারা কিকরেছিল। তোমাদের সামনে আওয়ামী লীগের মুখোশ খুলে যাবে।”খালেদা জিয়াবলেন, “আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় এসেছে লুটপাট, নির্যাতন আর খুন-গুম করতে।আওয়ামী লীগ নাকি ধর্ম নিরপেক্ষ! মূলত এটা তাদের মুখোশ, বাহ্যিক আবরণ।বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলে। আওয়ামী লীগকে যদি দেখেন বুঝতে পারবেনপ্রতিদিন গুম আর খুন তাদের কাজ। জিনিসপত্রের দাম বেশি, তাদের কাছে মানুষেররক্তের দাম নেই। ৪ টাকার লবণের দাম এখন ৩২ টাকা।”<br>
খালেদা জিয়াবলেন, “ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের দয়ায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কিসেরভয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে। ফুটবল খেলায় দু’টি দল থাকে। আমাদের দেশে অনেকদল আছে। প্রধান দল হলো দু’টি। খেলতে গেলে মাঠ সমান থাকতে হবে। লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। পদত্যাগ করেতত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।”পুলিশ প্রশাসনেরউদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগই চিরস্থায়ী সরকার নয়। তাদের কথা শুনবেননা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অন্যায় আদেশ মানবেন না। এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৭বছর জেল হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নামে যতগুলো মামলা রয়েছে তার নিরপেক্ষবিচার হলে শাস্তি হতে পারে। অথচ তার নামের মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আরআমাদের নামে হয়রানির মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে লগি-বৈঠাদিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেইসব ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। এর বিচারহলে প্রধানমন্ত্রী কি করবেন।”বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াবৌদ্ধদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা আপনাদের ক্ষতি করেছে তাদের বিচার হবে। আমরাসরকারে এলে বৌদ্ধদের ঘরগুলো সুন্দর করে গড়ে দেব। বিদেশ থেকে মূর্তি এনেসাজাতে পারবেন।”<br>
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিএনপি সভাপতিআহমেদুল হক চৌধুরী। আরো বক্তব্য রাখেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, এম মোরশেদ খান, ড. সুকোমল বড়ুয়া, স্থানীয় বিএনপি দলীয় এমপি লুৎফর রহমান কাজল, জামায়াতেরএমপি আ. ন. ম শামসুল ইসলাম, বৌদ্ধভিক্ষু শুদ্ধানন্দ মহাথেরো প্রমুখ।মির্জা ফখরুল বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনার রসনা সংযত করুন। নইলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।”মওদুদবলেন, “এখানে তদন্ত করতে এসে জেনেছি আওয়ামী লীগ প্রভাবিত এলাকায়বৌদ্ধবিহার ও মন্দির, বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু বিএনপি প্রভাবিত এলাকায়কোনো বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস হয়নি।<br>
”সুকোমল বড়ুয়া বলেন, “ম্যাডাম বৌদ্ধসম্প্রদায় আপনার সঙ্গে আছে। প্রধানমন্ত্রী এখানে এসেছিলেন। তার সমাবেশেবৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ আসেনি।”<br>
নিউজরুম