রুপসীবাংলা, (ময়মনসিংহ১০ নভেম্বর): ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক মৃত্যু উপত্যকায় রূপনিয়েছে। ঘাতক যন্ত্রদানব এ মহাসড়কের ত্রিশাল ও ভালুকায় গত ৬ মাসে কেড়েনিয়েছে কমপক্ষে ২৫ তাজা প্রাণ।ব্যস্ততম এ মহাসড়কে উদভ্রান্তচালকের কারণে বার বার হানা দিচ্ছে মৃত্যু। বিপন্ন হতে বসেছে স্বাভাবিকমৃত্যুর অধিকার।
আর ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে এ মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল।মৃত্যুরএ মিছিলে সর্বশেষ যোগ হয়েছে সম্ভাবনাময় তরুণ চিকিৎসক ডা. মুশফিকুর রহমানশুভ’র (৩১) নাম। প্রতিশ্রুতিশীল ও নন্দিত এ চিকিৎসকের বাবা ক্ষমতাসীন দলেরময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।এ দীপ্তপ্রাণের অনাকাঙ্খিত বেদনাদায়ক প্রস্থানের পর আবারো দাবি উঠেছে নিরাপদসড়কের। কিন্তু প্রাণের সেই দাবি পূরণে কোনো সরকারই কার্যকরী উদ্যোগ নিতেপারেনি। দিতে পারেনি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। ফলে স্বজন হারাদের শোক, কান্না, বেদনা ও বিষন্নতার অধ্যায় ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে।ত্রিশাল ওভালুকা মডেল থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে নভেম্বরের প্রথমসপ্তাহ সময় পর্যন্ত ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ত্রিশাল ও ভালুকায় কমপক্ষে ২৫জন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ‘এর মধ্যে ভালুকায় ১২ জন ওত্রিশালে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন ভালুকা মডেল থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোতালেব মিয়া ও ত্রিশাল থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার।
জানা গেছে, মহসড়কেচালকদের বেপরোয়া গতি, কান্ডজ্ঞানহীনতা ও সড়ক দুর্ঘটনায় দুর্বল আইনের কারণে এমৃত্যুর মিছিল থামছে না। ফলে এ মহাসড়কে যারা নিয়মিত চলাচল করেন তারাযানবাহনে উঠে দোয়া-দুরুদ পড়েন আর গন্তব্যে পৌছে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়াআদায় করেন।গত ৩ নভেম্বর ভোরে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনেরসংসদ সদস্য প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের ছোট ছেলে ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজহাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মোটরসাইকেলযোগে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ভালুকার ভরাডোবানামকস্থানে বাস চাপায় ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।অপ্রত্যাশিত ওমর্মান্তিক এ ট্রাজেডি’র ঘটনায় গোটা শহরে নেমে আসে শোকের ছায়া। শুভ’রমৃত্যু শোক স্পর্শ করে শহরের তরুণ-যুবাদের। প্রাণোচ্ছ্বল সাংসদের পরিবারেনিমিষেই নেমে আসে নিকষ কালো অন্ধকার।
‘সোনা মানিক’কে হারিয়েশোকস্তব্ধ, বেদনার্ত ও বিষন্ন বর্ষীয়াণ রাজনীতিক প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ওতার স্ত্রী বেগম নুরুননাহার শেফালী। বড় ভাই তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহিত উররহমান শান্ত ছোট ভাইয়ের কফিনে মোড়ানো মুখ নিজের চোখের সামনে ভেসে উঠলেইহাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
সূত্র জানায়, গত ৬ মাসে এ গুরুত্বপূর্ণমহাসড়কটিতে ২৫ তাজা প্রাণ ঝরে গেলেও পুলিশ একজন বাস চালককেও গ্রেফতার করতেপারেনি। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হলেও এ নিয়ে পুলিশের তেমন মাথাব্যাথা নেই।সর্বশেষ ‘শুভ ট্র্যাজেডি’র জন্ম দেওয়া ইসমাইল পরিবহনেরঘাতক বাস চালককে ৬ দিন পরেও পুলিশ ধরতে পারেনি। ফলে ঘাতক বাস চালকরাও হয়েউঠেছেন বেপরোয়া। ফলে নিরাপদ সড়কের দাবি ম্যাসেজ দিচ্ছে ব্যর্থতার পরিহাসহিসেবে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ত্রিশাল উপজেলা শাখার সভাপতি খোরশেদ আলমমুজিব বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কোন সরকারই আন্তরিক নয়। আন্তরিক হলেঅবশ্যই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হতো।’
ক্ষোভ নিয়েতিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার পর চালক নিজেকে অপরাধী মনে করে আতঙ্কেআরো জোরে গাড়ি চালিয়ে যান। যাত্রীদের মাঝেও এক ধরণের পলাতক প্রবণতা কাজকরে। তারাও নীরবে ঘাতক চালককে সমর্থন করেন। যাত্রীরা যদি মানবিক মূল্যবোধথেকে এমন ঘটনার প্রতিবাদ করতেন তবে চালকরা এমন হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠতে পারতেননা।’
প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খানবলেন, ‘ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের সূচনা পয়েন্টে যে কোনো আইল্যান্ডে নিরাপদসড়কের জন্য সচেতনতার ফলক স্থাপন করা উচিত। যাতে করে এ মহাসড়কে ডা.শুভ’র মতোআর কাউকে অশুভ পরিণতির শিকার হতে না হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনার পর চালকদেরকঠোর শাস্তির আওতায় আনা হলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব।’
নিউজরুম