রূপসীবাংলা ঝালকাঠি ৮ নভেম্বর :র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুরেকলেজছাত্র লিমন হোসেনের মা হেনোয়ারা বেগম, বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ও ভাইহেমায়েত হোসেন সুমনসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে ফোরকান হাওলাদারকে পিটিয়েহত্যার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছিল মামলা। কিন্তু মামলার তদন্তে ফোরকানেরমৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবারসকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম ফোরকানেরমৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।এর ফলে, মামলায় লিমনসহ তার পরিবারের সদস্যরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।অর্থাৎ লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম, বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ও ভাই হেমায়েত হোসেন সুমনসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
ময়নাতদন্তরিপোর্টের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকেজানান, ফোরকানের শরীরে কোনো আঘাতের চিহৃ পাওয়া যায়নি। তার পিঠে যে দাগরয়েছে, তা অনেক আগের। তাছাড়া ফোরকানের শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপরীক্ষা-নিরীক্ষায় এমন কোনো আঘাত পাওয়া যায়নি, যার কারণে তার মৃত্যু হতেপারে।
তিনি আরও জানান, লিমন ও তার পরিবারের সঙ্গে ইব্রাহীমের যেঘটনা ঘটেছিল, তা-ও ইঁদুরবাড়ি ব্রিজ এলাকায়। ঘটনা শুনে ফোরকান বাড়ি থেকেইঁদুরবাড়ি ব্রিজ এলাকায় রওয়ানা দেন।এ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার দূরে মৃত হানিফ চৌকিদারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশের কাঁচামাটির রাস্তায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ফোরকানের মৃত্যু ঘটে।
সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ফোরকানের ওপরে কেউ হামলা চালায়নি। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট ঈদের দিন বিকেলে ঝালকাঠির রাজাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকেপিরোজপুরের ভাড়া বাড়িতে ফেরার পথে উপজেলার ইঁদুরবাড়ি ব্রিজ এলাকায় স্থানীয়রশিদ হাওলাদারের ছেলে কথিত র্যাবের সোর্স ইব্রাহীম হাওলাদারের নেতৃত্বেলিমন ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়।ওই হামলায় আহতহয়ে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাওনেন। এ হামলার ঘটনায় লিমনের মা রাজাপুর থানায় হামলার অভিযোগ দায়ের করলেপুলিশ তদন্ত করে হামলার সত্যতা পায়।
অপরদিকে, এ ঘটনাকে ভিন্নখাতেপ্রবাহিত করার জন্য ইব্রাহীমের শ্যালক সাতুরিয়া গ্রামের মফেজ উদ্দিনের ছেলেফোরকানের (৩৮) স্বাভাবিক মৃত্যুকে পুঁজি করে লিমন হোসেনের মা হেনোয়ারাবেগম, বাবা তোফাজ্জেল হোসেন ও ভাই হেমায়েত হোসেন সুমন, সাতুরিয়া ইউনিয়নেরসাবেক চেয়ারম্যান হেমায়েত হোসেন নুরু, লিমনের বড় মামা সিদ্দিক হাওলাদার, নৈকাঠি গ্রামের মফিজ সিকদারের ছেলে সুমন সিকদার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোর্সেদজমাদ্দার, ফিরোজ হাওলাদার, মোতালেব হাওলাদার ও শাহিন হাওলাদাকে আসামি করে২৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুসরাতজাহানের আদালতে ইব্রাহীম হাওলাদার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায়ইব্রাহীম হাওলাদার অভিযোগ করেছিলেন, ২০ আগস্ট ঈদের দিন বিকেলে রাজাপুরেরসাতুরিয়ার ফোরকানিয়া মাদ্রাসার সামনে লিমনের পরিবার তার ওপর হামলা চালায়।এখবর পেয়ে ফোরকান হাওলাদার বাড়ি থেকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা হন। পথেলিমনের মা-বাবা ও ভাই এবং অন্য আসামিরা তাকে মারধর করলে তার মৃত্যু হয় বলেঅভিযোগ করা হয়।
এদিকে, এ মৃত্যুর ঘটনায় ওইদিন রাতে রাজাপুর থানায়অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হওয়ায় বিষয়টি পুলিশ পরে আদালতকে অবহিত করলে আদালত এহত্যা মামলাটি এফআইআর না করে অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে তদন্তের নির্দেশনিয়েছিলেন।
ইব্রাহীমের মিথ্যা হত্যা মামলা, ভিসেরা রিপোর্ট এবংপুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে লিমন তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, “র্যাবের সোর্স পরিচয়ধারী ইব্রাহীমের এ মামলা যেমন মিথ্যা প্রমাণিত হলো, তেমনি র্যাবের দায়ের করা মামলাও মিথ্যা প্রমাণিত হবে।” তিনি বলেন, “এতদিন আমার ও আমার পরিবারের মাথার ওপর একটা মিথ্যা হত্যা মামলার বোঝাছিল। তা থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বলার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না!”লিমন আরও বলেন, “ঈদের দিন বিকেলে আমরা নয়, বরং ইব্রাহীমরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। এতে আমিসহ আমার মা ও ভাই আহত হয়।কিন্তু, হয়রানি করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ করা হয়।
নিউজরুম