রুপসীবাংলা ঢাকা ৮ নেম্বর : পরিশোধিত মূলধন নিশ্চিত করে লাইসেন্সের জন্য আবেদনে ব্যর্থ নতুন দুই ব্যাংকের মেমো তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।গত অক্টোবরের ১৬ তারিখে পরিশোধিত মূলধন জমা দিয়ে লাইসেন্সের আবেদনের জন্য শেষ সময় থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় শেখ ফজলে নূর তাপস এমপির মধুমতি ব্যাংক ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম চৌধুরীর এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংক দুটি লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও প্রবৃদ্ধি বিভাগ ব্যাংক দুটি’র জন্য প্রয়োজনীয় মেমো তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকতা জানান, সময় বাড়ানো, না বাড়ানো নিয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্তে এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগামী পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সে বিষয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চলতি মাসেই এ নিয়ে পরিচালনা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও তিনি জানান।এ বিষয়ে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা নিজাম চেীধুরী বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু সময় বাড়াতে চাইছে। আশা করি সময় বাড়াবেই। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ের পর।
প্রায় ১১ বছর পর চলতি বছরের এপ্রিলে দৃশ্যত রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশীয় ছয়টি ও প্রবাসী তিনটিসহ মোট নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অনুমোদনের সময় অক্টোবরের ১৬ তারিখের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন নিশ্চিত করে লাইসেন্সের জন্য আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে মধুমতি ও এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড ছাড়া বাকি সবাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে যে সাতটি ব্যাংক পরিশোধিত মূলধন নিশ্চিত করে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে সেগুলো হলো- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল মান্নান চৌধুরীর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক, এম মনিরুজ্জামান খন্দকারের মিডল্যান্ড ব্যাংক, আওয়ামী লীগের এইচএস আশিকুর রহমানের মেঘনা ব্যাংক, মহাজোটের প্রধান শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইউনিয়ন ব্যাংক, ফরাসত আলীর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আহমেদের এনআরবি লিমিটেড।
ওই সময় দেশের অর্থনীতি ও বাজারের আকার, সঞ্চয় সৃষ্টি ও মূলধন গঠনের হার, ফিন্যান্সিয়াল ডিপেনিং প্রবৃদ্ধির হার, বিদ্যমান ব্যাংকিং অবকাঠামো ও ব্যাংকিং সেবার চাহিদা এবং ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বিবেচনা করে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।২০০১ সালে দেশে সর্বশেষ বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
এ নিয়ে দেশে সরকারি, বেসরকারি, বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংক মিলে মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে।
উল্লেখ্য, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে যথাযথ প্রক্রিয়া ও শর্ত মেনে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে অফেরতযোগ্য ১০ লাখ টাকার জামানতসহ আবেদন করতে বলা হয় আগ্রহীদের। আবেদন করার ক্ষেত্রে ৪শ’ কোটি টাকার মূলধন, একজন উদ্যোক্তার ১০ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী হওয়া, গত ৫ বছরে খেলাপী থাকলে বা এ বিষয়ে মামলা চললে তার আবেদন বিবেচনায় না নেওয়া, পরিচালনা পর্ষদে সর্বাধিক ১৩ সদস্য রাখা, উদ্যোক্তার আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পদ থেকে ব্যাংকের মূলধন সরবরাহ, উদ্যোক্তা বা পরিচালকের সততা ও যোগ্যতা যাচাইসহ বেশকিছু শর্ত বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মোট ৩৭টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১৬টি আবেদন বিবেচনার জন্য রাখা হয়। এরপর এসব আবেদন প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ঘুরে সেই তালিকা আরও যাচাইবাছাইয়ের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।
নিউজরুম