রুপসীবাংলা, ঢাকা ৮ নভেম্বর :
কাঁচা চামড়া রফতানির ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও খুচরা ব্যাবসায়ীরা।কাঁচা চামড়া রফতানি আড়তদার ও ফড়িয়ারা মেনে নিলেও মন্ত্রীর কথাকে আত্মঘাতী বলছে ট্যানারি মালিকেরা।
রাজধানীর হাজারিবাগের ট্যানারি কারখানা ও লালবাগের পোস্তায় আড়ত ঘুরে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।কাঁচাচামড়া রফতানির ভাগ ট্যানারি মালিক আড়তদারকে দিতে চান না।
আবার আড়তদার চাননা ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হতে। এই জন্য কাঁচা চামড়া রফতানিতেআড়তদারদের সম্মতি থাকলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্যানারির মালিক পক্ষ।উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, ‘‘প্রয়োজনে শর্তসাপেক্ষে কাঁচা চামড়া রফতানির চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।” দামকম ও চামড়ার বাজারে অস্থিরতার কারণে বানিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেছিলেন।এদিকে ট্যানারি মালিকেরা বলছেন, মন্ত্রীর এই বক্তব্য অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। মন্তব্যটি মন্ত্রীর বয়কট করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
মন্ত্রীরকথা অনুযায়ী ট্যানারি মালিকেরা বেশি দামে চামড়া কিনছে। তাছাড়া ট্যানারিমালিকেরা বলছেন, সরকার যদি বিদেশে কাঁচা চামড়া রফতানি করে তবে ট্যানারিশিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ কাঁচা চামড়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে দেশেরট্যানারি শিল্প।কিন্তু ট্যানারি মালিকদের দাবি চামড়ার বাজারেঅস্থিরতার জন্য মৌসুমি ব্যাবসায়ীরা দায়ী। কোরবানির দিন আলু, পাট ও শাড়িকাপড়ের ব্যাবসায়ীরা একদিনের জন্য চামড়ার ব্যাবসায়ী বনে যায়। এছাড়া এলাকারপ্রভাবশালীরা অল্পদামে ক্ষমতার বলে চামড়া সংগ্রহ করে বলে তাদের অভিযোগ।ট্যানারি মালিকদের দাবি তারা গত বছরের থেকে বেশি দামে চামড়া কিনছে।এইবিষয়ে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা শাহীনআহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, “মন্ত্রীর কথা আমরা কোনোদিন মেনো নেবো না। কারণট্যানারি শিল্প গড়ে উঠেছে কাঁচা চামড়াকে কেন্দ্র করে। আর যদি কাঁচা চামড়ারফতানি করা হয় তবে আমাদের সবকিছু গুটিয়ে পথে বসতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকেকোনোদিন কাঁচা চামড়া রফতানি হয়নি।”
ট্যানারি মালিকরা আরো বলছে, “চামড়ার দাম কমেনি আমরা বেশি দামে চামড়া কিনছি। গরুর ভালোমানের চামড়াকিনিছি ৭০ থেকে ৮০ টাকা বর্গফুট দরে। লোয়ার চামড়া কিনছি ৫০ থেকে ৬০ টাকাবর্গফুট দরে। এছাড়া ছাগলের চামড়া কিনছি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা বর্গফুট দরে।”তাদেরঅভিযোগ তারা ঠিকই বেশি দামে চামড়া কিনছেন। কিন্তু মাঝখানে লাভবান হচ্ছেমৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়তদাররা। আড়তদাররা চামড়া স্টক করে রেখেছে বলেওতিনি অভিযোগ করেন।
‘পুবালি’ ট্যানারির মালিক মাহবুবুর রহমান পান্নাবলেন, “আমরা বেশি দামে চামড়া কিনছি। কাঁচা চামড়া রফতানির করাকথা বলে হটাৎ করে চামড়ার দাম বেড়ে গেছে। আমরা গরুর চামড়া ৭০-৮০ টাকা ফুটকিনছি। ছাগলের চামড়া কিনছি ৫০-৬০ টাকা স্কয়ার ফুট।”তিনি আরো বলেন, “প্রতি স্কয়ার ফুটে ৪০ টাকার কেমিক্যাল লাগে। পাশাপাশি ১০ টাকা শ্রমিক খরচআছে। আমরা জার্মানি ও ইতালি থেকে দামি কেমিক্যাল আমদানি করে থাকি। বর্তমানেপ্রতি স্কয়ার ফুট গরুর চামড়াতে আমাদের খরচ হয় ১৩০ টাকা।”
ট্যানারিমালিকদের কাছ থেকে আরো জানা যায় ঈদুল আযহার চামড়া সংগ্রহের জন্য তাদের দুইথেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার দরকার। কিন্তু সরকার ঋণ দিয়েছে মাত্র ৩৬৫ কোটিটাকা। ফলে ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে বাধ্যহয়।অপরদিকে ট্যানারি মালিকের কাছ থেকে চামড়ার টাকা পেতে অনেকভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেছে আড়তদাররা। এই জন্য কাঁচা চামড়ারফতানির সিদ্ধান্তে মন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আড়তদার এবং ফড়িয়ারা।
লালবাগের পোস্তায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ চামড়ার আড়ত ঘুরেট্যানারি মালিক এবং আড়তদারদের পরস্পরবিরোধী এসব বক্তব্যের সত্যতা পাওয়াগেছে।আড়তদাররা বলেন, “টাকা আটকে রাখলেও বাধ্য হয়ে ট্যানারিমালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়। কারণ দুই মাসের বেশি সময় কাঁচা চামড়াআড়তে রাখা যায় না। কাঁচা চামড়া যদি রফতানি করা হলে আমরা সরাসরি বিদেশেচামড়া রফতানি করতে পারবো। ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি থাকতে হবে না।”
লালবাগেরপোস্তার দুই শতাধিক আড়তদারের অধিকাংশের মত কাঁচা চামড়া যেন রফতানি করা হয়।মন্ত্রীর কথা যেন বাস্তবায়ন করা হয় যত দ্রুত সম্ভব।পোস্তার চামড়ারআড়তদার নওয়াব হোসেন এই ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, “সরকার যেন কাঁচা চামড়ারফতানি করে। কারণ ট্যানারি মালিকেরা আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচারের মতো আচরণকরে।এক কোরবানি ঈদের চামড়ার টাকা পরের কোরবানিতে দেয়। কয়েকটি ট্যানারিমালিকের কাছে আমরা হাজার হাজার আড়তদার ও ফড়িয়ারা জিম্মি।” তিনি আরো বলেন, সরকার যদি কাঁচা চামড়া রফতানি করে তবে আমাদের জন্য এর চেয়ে খুশির সংবাদ আরকিছু হতে পারে না।
নিউজরুম