রাজশাহী প্রতিবেদক, ০৫ অক্টোবর:
গত তিন দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে ঘটছে একের পর এক সহিংস ঘটনা৷ আর এসব ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন প্রাণ, কেউ হয়েছেন পঙ্গু আবার কেউ হারিয়েছেন ছাত্রত্ব৷
তারপরেও থেমে নেই রাবি ক্যাম্পাসে আধিপত্যের লড়াই৷ ১৯৮২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যনত্ম তিন দশকে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত্ এবিদ্যা পিঠে আধিপত্যের লড়াইয়ে হারিয়ে গেছে ২৭ শিক-শিাথর্ীর প্রাণ৷ এদের মধ্যে ১৬ জন ছাত্রশিবির, ৭জন ছাত্রলীগ এবং ৩জন ছাত্রদলের নেতাকমর্ী৷ এই আধিপত্যের নেপথ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার, নিয়োগ, ভর্তি, হোস্টেল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি৷ আর এ সবকিছু ঘটেছে রাজনৈতিক দল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুবিধাভোগী মহলের ছত্রছায়ায়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা, শিক কর্মচারী, কর্মকতর্াদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিসত্মার করে চলেছে ছাত্র সংগঠনগুলো৷ ক্যাম্পাসের অধিপত্য নিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ঘটিয়েছে একের পর সহিংসতা ঘটনা৷ আবার কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক-কর্মচারীরা থেকে শুরু করে বহিরাগত একটি স্বাথর্ান্বেষী মহল ছাত্র সংগঠন গুলোকে আধিপত্য নিতে মদদ দিয়েছেন৷ যেমনটি হয়েছে ২০১০ সালের ৮ ফেরুয়ারি রাতে৷ ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে আধিপত্য ফিরিয়ে আনতে মধ্যরাতে সশস্ত্র্র হামলা চালায় ছাত্রলীগের
নেতাকমর্ীদের উপর৷ ্এতে ক্যাস্পাস ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারুক হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করতে ফেলে রাখে ট্যাংকে৷ ছাত্রশিবিরের এই নৃশংস হামলার মদদ যুগিয়েছেন জামায়াতে স্থানীয় ও শীর্ষ নেতারা৷ ফারুক হত্যা মামলার চার্জশীটে তা উলেস্নখ করা হয়েছে৷ এ মামলার সর্বশেষ তদন্ডকারী কর্মকতর্া জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের আধিপত্য নিতে ছাত্রশিবির গভীর রাতে ছাত্রলীগের উপর ওই হামলা চালায়৷ এ ঘটনার দীর্ঘ তদনত্মে তা পাওয়া গেছে৷ মামলার তদনত্ম প্রতিবেদনে তা উলেস্নখ করা হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শতে বলেন, ‘প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগলো আধিপত্য বিসত্মার করে থাকে৷ এতে তারা লাভবানও হয়৷ ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বানিজ্য, হোস্টেলের সিট ও ভর্ঞ্চি বানিজ্য থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি করে থাকে ছাত্র সংগঠনগুলো৷ এই অবস্থায় জিম্মি হয়ে পড়ে সাধারণ শিাথর্ীরা৷ আর ঘটে একের পর এক সহিংসতা৷ কিন্তুু প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে থাকে বরাবরই৷ এ কারণেই একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে৷’ তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে যেসব ঘটনা ঘটছে, তার সবগুলোই আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে৷ ছাত্র ইউনিয়ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিপন আহম্মেদ জানান, ‘ৰমতার পালাবদলে ক্যাম্পাসের আধিপত্যেরও পালাবদল ঘটে৷ এরই ধারাবহিকতায় এখন নেতৃত্বে রয়েছে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগ৷ ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রশিবিরের সঙ্গে লাড়াই করে আধিপত্য নেয় ছাত্রলীগ৷ এর পর থেকেই তাঁরা ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিসত্মার করে চলেছে৷ আর তাঁদের নিকট থেকে এখন এই সরকারের একেবারে শেষ সময়ে এসে আবারো আধিপত্য ফিরিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে ইসলামী ছাত্রশিবির৷’ এর আগে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার মতায় আসার পর ক্যাম্পাসে লাড়াই করে আধিপত্য নেয় ছাত্র শিবির৷ তাদের আমলের পাঁচ বছর ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য ছিল ছাত্রশিবিরের৷ যার কারণে এখন পর্যনত্ম কোন হত্যাকান্ডেরই তদনত্ম প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি৷’
রাবি সূত্র মতে, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে ১৯৮২ সালের পর থেকে সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই পর্যনত্ম তিন দশকে নিহত হয়েছেন ২৬ শিাথর্ী ও এক শিক৷ এদের মধ্যে ১৬ জন ছাত্রশিবির, ৭জন ছাত্রলীগের ও ৩জন ছাত্রদলের নেতাকমর্ী৷ এছাড়াও ২০০৬ সালের ১ ফেব্রয়ারি আধিপত্য বিসত্মার কেন্দ্র করে খুন হন ভূতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এস তাহের আহম্মেদ৷ এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রশিবিরের তত্কালীন সভাপতি মাহাবুবুল আলম সালেহীসহ জামায়াত শিবিরের ৫জনকে গ্রেপ্তারও করেছিল৷ সূত্র মতে, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানান ধরনের নিমর্াণ কাজ করানো হয়৷ এসব কাজ পাওয়ার জন্য দলীয় ঠিকাদারসহ অনেকেই ছাত্র-সংগঠনগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে থাকেন৷ এবং কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়৷ গত বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০০৫ সালে বিতর্কিতভাবে ক্যাম্পাসে ৫৪৪ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়৷ এই নিয়োগ নিয়ে তখন বাণিজ্য করে শিবির ও ছাত্রদল৷ ওই সময় ছাত্রদলের নেতা-কমর্ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে নিয়োগ দেয়ার জন্য একটি বুথ তৈরি করে৷ যেখানে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি দেয়ার ব্যবস্থা করা হতো৷ এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও তত্কালীন প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি
এরপর ১৯৮২ সালে ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আগমন ঘটে৷ ওই বছর ছাত্রমৈত্রীর হাতে নিহত হন শিবির কমর্ী সাবি্বর, আব্দুল হামিদ, আইয়ুব আলী এবং আব্দুল জব্বার৷ ১৯৮৯ সালে শিবির ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিসত্মার করতে থাকে৷ যা চলে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যনত্ম টানা প্রায় ১৯ বছর ধরে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে অনেকটায় একচ্ছত্র প্রভাব বিসত্মার করে রাখে৷ এ সময়ে তাঁদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ঢুকে পড়েন শতশত শিক কর্মচারী৷ যাঁরা এখনো রয়েছেন অনেকেই বহাল-তবিয়তে৷ আবার কারো হয়েছে উচ পযর্ায়ে পদন্নতি৷ এই সময়ে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে শুধু নিয়োগ বাণিজ্য করেই থেমে থাকেনি৷ হোস্টেলে সিট দখল, ফি\” থাকা খাওয়া ও হোস্টেলের সাধারণ শিাথর্ীদের নিকট থেকে ১০ টাকা করে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন নানা অপকর্মে৷ কিন্তুু বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা-কমর্ী অনেকটায় ক্যাম্পাসে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কমর্ী ফারুক হোসেন হত্যকান্ডের ঘটনায় কোনঠাসা হয়ে পড়ে শিবির৷ সর্বমোট ১৭টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় অর্ধশতাধিক নেতাকমর্ীকে৷ শিবির নিধন ও বিতাড়ন করতে তাঁদের চিহি্নত নেতা-কমর্ীদের বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেল, পরীৰা হল, শ্রেণীক থেকে শুরু করে বাইরের বিভিন্ন মেস থেকেও গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের নেতাকমর্ীকে৷ ফলে ওই ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে আর কখনোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি৷ কিনত্মৃ ভর্তি পরীৰা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে শুরু করে শিবির নেতা-কমর্ীরা৷ দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবারের সহিংস ঘটনার আগে গত কয়েক দিন ধরেই ছাত্র শিবির ক্যাম্পাসে ৮-১০ জনের দলে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করতে থাকে৷ তারা সংঘটিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে ক্যাম্পাসে৷ কিন্তুু বিষয়টি আচ করতে পারে ছাত্রলীগ৷ তারাও প্রতিরোধে এগিয়ে আসে৷ এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এতে ৩জন গুলিবিদ্ধ হন৷
প্রতিবেদক, সম্পাদনা আলীরাজ/ আরিফ