মোফাজ্জল হোসেনস, নওগাঁ ২২ অক্টোবর :
আধুনিকতার প্রতিযোগিতায় হার মেনে বন্ধ হতে চলেছে চালের জন্য খ্যাত নওগাঁ জেলার প্রায় বারশ হাসকিং বয়লার।
এ সকল বয়লার বন্ধ হলে বেকার হয়ে পড়বে প্রায় আট হাজার বয়লার শ্রমিক যার আশি শতাংশই নারী শ্রমিক বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বয়লার মালিক ও সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ জানান, চাতালগুলোতে কর্মরত নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই স্বামী পরিত্যাক্ত। নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করে বলেন এই নারী শ্রমিকেরা কোন কারণে বেকার হয়ে পড়লে জীবন ধারণের জন্য নানা প্রকার অবৈধ কাজের সাথে জড়িত হতে বাধ্য হবে।
হাসকিং বয়লার মালিক সিরাজুল ইসলাম, রহুল আমিন সহ আরো কয়েক জন জনান, অত্যাধুনিক অটো বয়লারের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা সহ অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের বয়লার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অভিমত, হাসকিং বয়লারের উৎপাদিত চালের মান অটো বয়লারের চালের সমমানের না হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা হাসকিং বয়লারের চাল কিনতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। এ ছাড়া পানির কারণে হাসকিং বয়লারের চাল গন্ধযুক্ত হয়।
অন্যদিকে অটো বয়লারের উৎপাদিত চালের ভাত স্বাভাবিক ভাবে রাখলে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ভাল থাকে কিন্তু হাসকিং বয়লারে উৎপাদিত চালের ভাত সবোর্চ্চ ৬ ঘন্টা ভাল রাখা সম্ভব হয়। এ কারণে ক্রেতারা বেশীদাম হলেও অটো বয়লারের চালের প্রতি আগ্রহী। নওগাঁর আড়ত মালিক আজাদ জানান, বর্তমানে নওগাঁর চাল দেশের পঞ্চাশভাগ ঢাকার নববইভাগ চাহিদা পূরণ করছে। আমাদের ক্রেতারা হাসকিং বয়লার চালের রং, গন্ধ ও ভাঙ্গা জন্য কিনতে চায় না। যদিও অটো বয়লারের চালের থেকে হাসকিং বয়লারের চালের খাদ্যগুন বেশী তবুও উপরে উলেস্নখিত কারণে ক্রেতারা অটো বয়লারের চালের প্রতি আগ্রহ বেশী।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারের মধ্যেই বিভিন্ন কারণে একবেলা ভাত রেঁধে দুবেলা খায়। এ ক্ষেত্রে হাসকিং বয়লারের চালের ভাত সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে না। একই মতামত প্রকাশ করে স্কুল শিক্ষিকা ওবায়দা খান জানান, চাকুরির স্বার্থেই তাকে একবেলা রেঁধে দুবেলা খেতে হয়। এ কারণে তিনি দাম বেশী হলেও অটো বয়লারের চাল কিনে থাকেন।
হাসকিং বয়লার মালিক কবির হাসান জানান, দুশমন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পূর্ণ একটি হাসকিং বয়লার চালাতে প্রতি শিফ্টে কমপক্ষে ৪ জন পুরম্নষ শ্রমিক সহ ১২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। পক্ষামত্মরে মাত্র ৪ জন শ্রমিক দিয়ে একটি অটো বয়লার প্রতি ঘন্টায় সমপরিমান চাল উৎপাদন করতে পারে।
শ্রমিক নেতা রেজাউল ইসলাম জানান, যে ভাবে নওগাঁয় দিনের পর দিন হাসকিং বয়লার গুলো বন্ধ হয়ে পড়ছে তাতে করে অচিরেই প্রায় সাড়ে আট হাজার মহিলা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এ সকল মহিলা শ্রমিকের সিংহভাগই স্বামী পরিত্যক্তা কিম্বা বিধবা। এই বিপুল পরিমান নারী শ্রমিক পেটের দায়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়াতে বাধ্য হবে। এতে করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব পড়বে। একারণে এ সকল মহিলা শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি এখনই সরকারের ভাবা উচিত।
সম্পাদনা আনোয়ার হোসেন আলীরাজ/ আনোয়ার হোসেন আরিফ, নিউজরুম