রুপসীবাংলা, ঢাকা ২২ অক্টোবর :
অসাম্প্রদায়িক এবং একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপক্ষের সমমনা ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রোববার সন্ধ্যায় র্যাডিসন হোটেলে এক চা চক্রের মাধ্যমে বর্ষীয়ান এ দুই নেতা এ ঐক্যের ডাক দেন।
অনুষ্ঠানে তারা বলেন, “এ ঐক্য সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পক্ষে।”ড. কামাল হোসেন বলেন, “৯৩ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে এ ধরনের একটি ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিলো গণফোরাম সৃষ্টির মাধ্যমে। ২০০৪ সালে একটি ঐকমঞ্চ গঠিত হয়েছিলো। সে মঞ্চ থেকে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয় এবং ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখন আমরা তারই ধারাবাহিকতায় আজকের ঐক্য গঠনের শপথ নিলাম। জানুয়ারিতে মাঠের সমাবেশের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যে অংশ নেওয়ার আহবান জানানো হবে।” বি চৌধুরী বলেন, “যারা কোরান হাতে নিয়ে শপথ নিতে পারবেন যে- সন্ত্রাস করবেন না, দুর্নীতি করবেন না, তারাই আমাদের ঐক্যে অংশ নিতে পারবেন।”তারা বলেন, “আমরা জাতীয় মৌলিক বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যার আশু সমাধানে সব দেশপ্রেমিক জনগণ এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের এক ইস্পাত কঠিন জোরদার ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।”
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অনুষ্ঠানটির সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন। প্রবীন সংবাদিক এবিএম মুসা, লেখক-কলামিন্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, রাজনীতিবিদ সরদার আমজাদ হোসেন, গণস্বাস্থ্যের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নুরুল আলম, হুমায়ুন কবির হিরু, ফরোয়ার্ড পার্টির চেয়ারম্যান আনম মোস্তফা আমিনসহ রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরাও এতে উপস্থিত ছিলেন। যৌথ ঘোষণা দেওয়ার আগে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। তাদের বক্তব্যের পর এবিএম মুসা, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। সবশেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন দুই শীর্ষ নেতা। পরে দুই নেতার পক্ষে মাহমুদুর রহমান মান্না যৌথ ঘোষণা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মাহামুদুর রহমান মান্না ড. কামাল হোসেন এবং প্রফেসর ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সম্পর্কে বলেন, “রাজনীতির করুণ ইতিহাস, এই দুই প্রবীন রাজনীতিবিদ আজ তাদের শুরুর রাজনৈতিক দলে নেই। অথচ তারা রাজনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এদের একজনের বয়স ৮০ পার হয়েছে, আর একজন ৮০ ছুঁইছুঁই। তারা আগেও মিলিত হয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষ্যে পৌছুতে পারেননি। আবারো তারা এক হয়েছেন। এ প্রশ্ন করা অবান্তর, তারা কি করবেন। দুজন কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু যারা দেশের ১৬ কোটি মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারবেন, তাদেরকেই আজ তারা এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
যৌথ ঘোষণায় দলীয়করণের অসুস্থ ধারা থেকে মুক্ত হতে দেশবাসীকে স্বোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়ে দেশের প্রবীণ দুই রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেন বলেন, “অশুভের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আসুন আজ আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ি। দেশের তরুণ ও যুব সমাজ যারা দেশকে কিছু দিতে আগ্রহী তারা ঐক্যবদ্ধ হই। সামনের দিনগুলো উজ্জ্বলতায় ভরিয়ে তুলি। উপহার দেই একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।”তারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আজ জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। ২০০৮ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অর্জিত হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আজ দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের সম্মুখীন। গণতন্ত্র সাংবিধানিক শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করে। যেখানে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব ছিল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতা আদায় করা, সেখানে সাংসদদের নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য।”
যৌথ ইশতেহারে দেশের আর্থিক খাতের বিপর্যয়ে জাতীয় অর্থনীতি এখন মহাসংকটে দাবি করে এই দুই রাজনীতিবিদ বলেন, “প্রথমত শেয়ার বাজারের মাধ্যমে জনগণের পুঁজি লোপাট করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এমন কি সাধারণ মানুষের কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এরপরেই ব্যাংকের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক, ডেসটিনি, বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির নামে, মালটি লেভেল ব্যবসার নামে জনগণের কাছ থেকে অনেকটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতির ব্যবসা করা হয়েছে।”তারা আরো বলেন, “নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন? রেলমন্ত্রীর এপিএস টাকাসহ ধরা পড়েছে এবং এপিএস-এর ড্রাইভার তৎকালীন রেলমন্ত্রীর সরাসরি নিয়োগ বাণিজ্য ও দুনীর্তিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি, পার্লামেন্ট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয়ে নীরব। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়- এসব লুটপাট মামুলি ঘটনা, তাদের করার কিছুই নেই। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে এবং চিিহ্নত দুর্নীতিবাজদের সাফাই সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
” দুই নেতা বলেন, “দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ে যথেচ্ছাচার শুরু হয়েছে। জনগণের নিত্য ভোগপণ্য যথা- তেল, ডাল, আটা, চিনি, পেয়াজ, লবণ নিয়ে বাণিজ্য করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল পাওয়ারের নামে একদিকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংকট নিরসন হচ্ছে না। গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের আন্দোলনের ফসল ঘোষিত বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন এখনও করা হয় নাই। রাজধানী ঢাকায় যানযটের ভয়াবহতা জনজীবনকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন বলেন, “আজ বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত, দারিদ্রমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে দেশের সব ছেলে-মেয়ের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ও ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।”
দুই নেতা বলেন, “সরকারের দিন বদলের প্রতিশ্রুতিতে ছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু যা ঘটেছে তা হলো শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং তাদের প্রার্থনাস্থল ধ্বংস করা।”
তারা বলেন, “সর্বশেষ ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী কক্সবাজার জেলার রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মঠ, মন্দির, বিহার ও আশ্রম এবং বসতবাড়িতে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মর্মস্পর্শী ঘটনাবলীতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই জঘন্যতম ঘটনায় দেশের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে আমরা মর্মাহত ও লজ্জিত। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য আমরা বহুকাল থেকে ধারণ করে আসছি এ ঘটনায় সেই ঐতিহ্য আজ হুমকীর সম্মুখীন। স্থানীয় প্রশাসনের সঠিক এবং সময়মত পদক্ষেপ নিতে নিরবতা এবং সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারীর প্রতিরোধ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘৃণ্য ঘটনাবলীতে জড়িতদের সঠিকভাবে চিিহ্নত করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। দল নিরপেক্ষভাবে ঘটনাবলীর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানাই।”
দুই নেতা বলেন, “সাংবাদিক সমাজ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিরুদ্ধ মত নিষিদ্ধ। ঘরের মধ্যে খুন হয়ে যান সাগর-রুনিসহ অসংখ্য সাংবাদিক। সাংবাদিকদের মামলা দিয়ে, হামলা দিয়ে কন্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে। দেশে গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের মানবাধিকার সংস্থা ও বিদেশি হিউম্যান রাইট সংস্থাগুলো এসব গুম-খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকদের উপর চালানো হয়েছে মামলা ও পুলিশি নির্যাতন। দলীয়করণের কারণে পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ১৮৬১ সালে গঠিত পুলিশ আইনের সংস্কার করার কথা রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে এটি বিবেচনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে জনগণ জানে না।”বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ¢¢। এটিকে বিভিন্ন কায়দায় লংঘন করা হচ্ছে। অতীতের সরকার যখন কোনো যোগ্যতা ছাড়াই ১৯ জন বিচারককে নিয়োগ করেছিল তারমধ্যে একজন আইনের ডিগ্রি না নিয়েও নিয়োগ পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে কঠোর সমালোচনার পর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১০ জনকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। এ রায়ে বিচার বিভাগে স্বচ্ছ লিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জজ নিয়োগ করার কথা থাকলেও তা না করে ৫০ জন বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
তারা বলেন, “সবশেষে বলতে চাই, দেশের ১৬ কোটি মানুষ ও সাড়ে আট কোটি ভোটারের অংশ গ্রহণে নির্বাচন হোক। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক দেশ আমরা দেখতে চাই। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেভাবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল, আজ সময় এসেছে এমনিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার। বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় আমাদের মধ্যে ঐক্য হয়ে আছে।”এর আগে অনুষ্ঠনটির আয়োজনের পেক্ষাপট বর্ণনা করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “আমাদের জেগে উঠতে হবে। শত্রু মিত্র চিনতে হবে। আমাদের শত্রু হচ্ছে লোভী রাজনীতিবিদ, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, কিছু লোভী আমলা। এরা দেশকে এগিয়ে নিতে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের শক্তি হচ্ছে যুবক, ছাত্র শ্রমিক, বঞ্চিত কৃষক সমাজ এরাই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, হত্যা গুমের বিরুদ্ধে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে আমাদেরও অর্থনৈতিক, সামাজিক, গণতান্ত্রিক মুক্তি কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিন বছরের মধ্যে আমরা মালয়েশিয়ার কাছাকাছি যেতে পারবো।”সাবেক এই রাষ্ট্রপতি এসময় সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, “এতো বাধা সত্ত্বেও যারা দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তারা হলেন দেশের কৃষক ও শ্রমিক। অথচ কৃষক ফসলের মূল্য পাচ্ছেন না। শ্রমিক শ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের সার্জারি প্রয়োজন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে।”
তিনি জানান, যার যার রাজনৈতিক অবস্থান থেকেও এ ঐক্য সম্ভব।
সংবিধান প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, “সন্ত্রাস-দুর্নীতি সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্পদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ঐক্যের রাজনীতি। বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।” তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করি। কিন্তু যারা নির্বাচিত হয়, তারা সর্বগ্রাসী লুটপাট শুরু করে। জনগণের কথা তারা ভাবে না। তাই দেশ বাঁচাতে দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ঐক্য জরুরি।”
দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের পর মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেন, “৪২ বছর ধরে আমরা শুধু প্রত্যাশাই করে গেলাম। কিন্তু আজো প্রত্যাশিত বাংলাদেশ দেখলাম না।” তিনি বলেন, “আমাকে বিষিষ্ট সাংবাদিক বলা হয়। কিন্তু ইদানিং আরো একটি শব্দ যোগ হয়েছে, আমি মধ্যরাতের সিঁধেল চোর। সে যাই হোক, আমরা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি, আপনারা যারা তরুণ, আপনারা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।” গণস্বাস্থ্যের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “দুই-এক কোটি টাকার জন্য অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপী হয়ে পথে বসছেন। অন্যদিকে অনেকে ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলছেন, চার হাজার কোটি টাকা কোন টাকা নয়। এর চাইতে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের আজ রাস্তায় নামতে হবে। তা নাহলে সবকিছু পরিষ্কার হবে না। এ ঐক্যর আহবান কারীদেরও তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে পুরাতন মদ নতুন বোতলে বাজারজাতের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু হবে না।”
সৈয়দ আবুল মকসুদ তার বক্তব্যে বলেন, “বর্তমানে দেশের অবস্থা কি তা একজন বালককে জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবে। তার মানে এই নয় যে, দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। আন্দোলন-সংগ্রাম যা হচ্ছে, তা সব গণতান্ত্রিক দেশেই হয়। তবু রাত থেকে সকাল, আবার সকাল থেকে রাত মানুষ আশঙ্কায় থাকে। অনিশ্চয়তায় ভোগে। এজন্য জনগণ দায়ী নয়। এজন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা।”
নিউজরুম