দেশের রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে উঠছে চীন

0
211
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, ঢাকা ২১ অক্টোবর :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিবেশী ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা পর্যায়ক্রমে চীন সফর করছেন। সেদেশের সরকারের প্রভাবশালী নেতারাও এদেশ সফরে আসছেন। ফলে দেশের রাজনীতিতে চীন সাম্প্রতিককালে আলোচিত হয়ে উঠছে।
বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ দিনের চীন সফর শেষে শনিবার দুপুরে দেশে ফিরেছেন। আর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে শনিবার দুপুরেই ঢাকায় এসেছেন চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য এবং পার্টির পঞ্চম সর্বোচ্চ নেতা লি চ্যাং তার বাংলাদেশ চুন সফরকালে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন। রোববার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীনা নেতার বৈঠকের কথা রয়েছে।
এদিকে লি চ্যাং চুনের সফর উপলক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত শনিবার এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট পাটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে। সরকারি পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্কও গড়ে তোলোর চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে প্রায় প্রতি বছরই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল চীন সফর করছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন। এ বছরের জুনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে।
এর আগে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেন। গত বছর আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের একটি দল চীন সফর করেন। ওই টিমে সদ্য বিদায়ী ছাত্রনেতারা ছিলেন। এ বছরের শেষে দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করতে পারে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চীন সফর করে এসেছেন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা নেতিবাচক হলেও বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সামরিক, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে চীন প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। এ কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের কাছে দেশটির গুরুত্ব বাড়ছেই।
এ কারণে দেশের রাজনীতিতেও চীনের প্রকটা প্রভাব লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠছে। দেশের নেতা-নেত্রীরাও পর্যায়ক্রমে ভারতের পাশাপাশি চীন সফর করছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও প্রকাশ্যেই বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দুই সামরিক পরাশক্তি ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।
এ বছরের আগস্টে চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এ সময় তার চীন সফর এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের দিক তুলে ধরেন তিনি। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সৈয়দ আশরাফ ৫ দিনের সফরে নয়াদিল্লি যান। এ সময় তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে চীন সফর সফরের এক সপ্তাহ পরই আগামী ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ভারত সফরে যাচ্ছেন। এ সময় ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। আবার এ বছরের আগস্টে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভারত সফরও রাজনীতিতে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। হঠাৎ করেই এরশাদ জরুরি ভিত্তিতে ভারত সফর করেন। এ সময় তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশের শীর্ষ নেতাদের এভাবে পর্যায়ক্রমে ভারতের পাশাপাশি চীন সফরের কারণে ভারতের মতো চীনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর পঞ্চম শীর্ষ নেতার চলমান ঢাকা সফরও এ গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সফর উপলক্ষে শনিবার রাতে আয়োজিত ভোজসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য টেলি যোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আসাদুজ্জামান নূর এমপি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, শমসের মোবিন চৌধুরী, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চীনের এ শীর্ষ নেতার সফর এবং বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমরা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চাই। চীনও বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা দিতে যথেষ্ট আগ্রহী। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের কয়েকটি টিম চীন সফর করেছে। আমি নিজেও চীনে গিয়েছিলাম। আগামীতেও হয়তো আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে।’

’ নিউজরুম

শেয়ার করুন