রুপসীবাংলা, ঢাকা ২১ অক্টোবর :
মাকে নিজ হাতে সাজানো খুব গর্বের কাজ। নিজের হাতে মাকে সাজাতে পারবো, কখনোভাবতে পারিনি। নিজের হাতে তৈরি প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই গৌরব আর অহঙ্কারের কথা বলছিলেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের এবারের দুর্গা প্রতিমার কারিগর সুকুমার পাল।
শনিবার দেবীকে বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের দুর্গা উৎসব। যখন দেবী প্রতিমার সামনে উছলে পড়ছিল ভিড়, তখন বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার। সুকুমার পাল বলেন, ‘‘একটি পূর্ণাঙ্গ সেট প্রতিমা তৈরিতে প্রায় চার-পাঁচ মাস সময় লেগে যায়। প্রতিমা তৈরি অসম্ভব পরিশ্রমের কাজ। তবে কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে সব কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়।’’ নিজে হাতে তৈরি করা দেবী দূর্গার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘মাকে নিজ হাতে সাজানো খুব গর্বের কাজও বটে। নিজের হাতে মাকে সাজাতে পারবো, কখনো ভাবতে পারিনি। তবে আমার বাবা যখন এ কাজ করতেন, তখন থেকে আমিও স্বপ্ন দেখতাম।’’
‘‘মাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার পর অদ্ভূত ভালো লাগা কাজ করে মনের ভেতর। নিজের কন্যা সন্তানকে সাজানোর পর একজন বাবার যেমন ভালো লাগে, তেমন আনন্দ পাই মনে মনে। আর এর একটা আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য তো আছেই। এটাকেও আমার পূজার অংশ বলে মনে করি’’-যোগ করেন সুকুমার। কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার প্রধানতম পূজামণ্ডপ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন সুকুমার পাল।
জানালেন, মাত্র দু’জন সহযোগী নিয়ে মোট তিনজনে এবারের শারদ উৎসবে সাতটি প্রতিমা সেট তৈরি করেছেন। এর প্রতিটির মজুরি ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা ধরেছেন তারা। তার অন্য দু’জন সহযোগী হলেন রুহি দাস পাল ও অখিল পাল।
এদিকে শনিবার ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির সঙ্গে ভক্তকুলের আবাহনের মন্ত্রোচ্চারণ নিয়ে শনিবার দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার স্বামীগৃহ কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আগমন ঘটেছে। বোধনে খুলে গেছে দশপ্রহরণধারিণী ত্রিনয়নী দেবীর স্নিগ্ধ নয়নের পলক।
১৫ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আগমনের ক্ষণগণনা। সেই ক্ষণগণনা শেষ করে শনিবার থেকে শুরু হয় শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন সকালে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের। পাঁচ দিনের উৎসবের প্রথম দিনে ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর অধিষ্ঠান হয়। সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। মণ্ডপগুলোতে পূজা ছাড়াও পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতির আয়োজন করা হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে রোববার মহাসপ্তমী। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। রোববার পূর্বাহ্নে ৮-১৫ মধ্যে দেবীর নব পত্রিকায় প্রবেশ, স্থাপন, কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা শেষে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতির আয়োজন থাকবে। এভাবে উৎসব চলবে আগামী ২৪ অক্টোবর বুধবার বিজয়া শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরম মমতা আর নিষ্ঠায় তৈরি দেবী প্রতিমাকে বিসর্জন দেবেন তার পূজারিরা। মায়ের আগমণ হবে আবার পরের বছর।
নিউজরুম