ভুমি দস্যুরা অপ্রতিরোধ্য নাটোরে রেলের জমি জবর দখল করে পাকা স্থাপনা নিমার্ন

0
205
Print Friendly, PDF & Email

রুপসীবাংলা, নাটোর ২০ অক্টোবর :
নাটোরে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে রেলওয়ে সম্পত্তি জবর দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে। থানায় অভিযোগ করার পরও অবৈধ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ,রেলওয়ের ভু-সম্পদ বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে জবর দখলকারীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়,২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ বাহিনীর সহায়তায় নাটোর রেল স্টেশন সংলগ্ন ফ্রেন্ডস পেট্রোলিয়াম ফিলিং স্টেশনের উত্তর পার্শের ৩৩শ’বর্গফুট জায়গার অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দখল মুক্ত করে রেল বিভাগ। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় ৫ ব্যাক্তি ওই দখল মুক্ত করা রেল ভুমি জবর দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মান কাজ শুরু করে। বিষয়টি জানার পর সান্তাহার রেলওয়ের ভুমির ফিল্ড কানুনগো মনোয়ারুল ইসলাম সরেজমিন গিয়ে অবৈধ নিমার্ন কাজে বাধা প্রদান করেন। কিন্ত জবর দখলকারীরা বাধা উপেক্ষা করে নিমার্ন কাজ অব্যাহত রাখলে ফিল্ড কানুনগো মনোয়ারুল ইসলাম গত ১৬ অক্টোবর শহরের দক্ষিন বড়গাছা এলাকার মাসুদ পারভেজ,স্টেশন বাজার এলাকার দীল মোহাম্মদ কাজল,বড়গাছা এলাকার কাজী সেলিম এবং চক বৈদ্যনাথ এলাকার সোহেল ও রাজু নামে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে নাটোর থানায় একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। থানায় ওই অভিযোগ করার পরও স্থাপনা নিমার্ন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ইতিপুর্বে রেল স্টেশন ভবন সংলগ্ন রেল ভুমিতে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই জবর দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় গত মাসে নাটোর থানায় অপর তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সান্তাহার রেলওয়ে ভুমি অফিস। কিন্ত এসব অভিযোগ করেও জবর দখলকারীদের স্থাপনা নিমার্ন কাজ বন্ধ করা যাচ্ছেনা। তারা অপ্রতিরোধ্যভাবেই জবর দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সান্তাহার রেলওয়ে ভুমি অফিস অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নিলেও পশ্চিমাঞ্চল রেলের ভু-সম্পদ বিভাগের পাকশী অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে ভুমিদস্যুরা রেলের জমি জবর দখল করছে।
ইতিপুর্বে রেলের জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন, মিজানুর রহমান,রতন কুমার সহ কয়েকজন জানান, ফ্রেন্ডস পেট্রোলিয়াম ফিলিং স্টেশনের উত্তর পার্শের রেল ভুমির ৪১ ও ৪২ নং বানিজ্যিক প্লটের দোকান ঘরের তারা বৈধ মালিক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। তারা ওই প্লট দু’টির মুল মালিক ইসমাইল হোসেনের ভাড়াটিয়া ছিলেন। আব্দুল মজিদ নামে এক ভাড়াটিয়া মুল মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে। বিষয়টি জানার পর রেলওয়ে বিভাগ পাল্টা মামলা করে। রেল মামলায় ডিগ্রি পেলেও মন্টু ওই সম্পত্তি জবর দখল করে রাখলে রেল পুনরায় মামলা করে। ২৮ বছর ধরে ওই মামলা চলা অবস্থায় বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ বাহিনীর সহায়তায় জায়গায়টি দখলমুক্ত করে রেল বিভাগ। কিন্ত রেলের হেফাজতে থাকা অবস্থায় সম্প্রতি রেলের ওই ভুমি জবর দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে। অথচ উচ্ছেদ হওয়া প্রকৃত ভাড়াটিয়ারা রেলওয়ে প্রশাসন সহ মন্ত্রনালয়ে ঘর করার অনুমতি সগ লাইসেন্সের জন্য দীর্ঘদিন ধর্না দিয়েও অনুমতি পাওয়া যায়নি। বর্তমানে যারা ঘর করছে তারা কিভাবে অনুমতি পেল। ক্ষতিগ্রস্থ এসব ব্যবসায়ীরা তাদের ঘর করার অনুমতি দিয়ে পুনর্বাসনের আবেদন জানিয়েছে।
নাটোর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার রেজাউল করিম ডালিম জানান, রেলের সম্পত্তির ওপর স্থাপনা নিমার্ন সহ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয় কিছুই জানেননা। বিষয়টি ভু-সম্পদ বিভাগের। ওই বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঝে মধ্যেই আসেন। তবে অবৈধ ও জবর দখলের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। অবৈধ দখল সহ স্থাপনা নির্মানের জন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন তিনি। এবিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম ফেরদৌস আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা যায়নি।
পরে পাকশী অফিসের ডিইও কীরন কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্থানীয়দের অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবী করে জানান, ওই সব জবরদখলকারী ভুমি দস্যুদের বিরম্নদ্ধে নাটোর থানায় ইতিপুর্বে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোন ধরনের সহায়তা ও ভুমিকা না থাকায় তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা।
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রেলের দাখিল করা অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ওই অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে রাতের অন্ধকারে পুলিশের নজর এড়িয়ে কেউ কাজ করলে তা পুলিশ কিভাবে ঠেকাবে। তিনি রেল কর্মকর্তার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেন।

প্রতিবেদক, সম্পাদনা আলীরাজ/ আরিফ, নিউজরুম

শেয়ার করুন