রুপসীবাংলা কৃষি ডেস্ক :
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ঘেষে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলা। মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত তোরা এলাকা ঘেষে ঝিনাইগতী উপজেলার গুমরা, সন্ধ্যাকুড়া, ফাকরাবাদ, হলদিগ্রাম, বাড়–লা, রাংটিয়া ও ডেফলাই গ্রাম। গ্রামগুলোর সরকারী খাস,বন বিভাগ ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন শত শত হেক্টর জায়গা জুড়ে দেখা যায় শীতের সব্জির হাতছানি। সারা গ্রামের বিস্তির্ণ এলাকার চারদিক জুড়ে শোভা পাচ্ছে টসটসে সীম, বেগুন, টমেটো,বরবটি, লাউগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি গাছ। কোন কোন গাছে আগাম ফল আসা শুরু হলেও আবার কোন কোন গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। কদিন পরই উঠবে আগাম সবজি। সবজি গাছের আগাম ফসলের হাত ছানিতে কৃষকরা আশায় বুক বাঁধছে। মাস খানেক আগে বর্ষা মৌসুমের সবজিগাছ গুলো কেটে দিয়ে শত শত ঐ মাচাতেই উঠানো হয়েছে সীম গাছ। এদিকে ঝিনাইগাতির সীমান্তে সেচের অভাবে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি পতিত হয়ে আছে বলে জানা গেছে। সেচের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারী ভাবে কিছু কিছু জায়গায় পাকা ড্রেন খনন করে দিলেও অর্থের অভাবে এখন তা বন্ধ হয়ে আছে। গুমরা গ্রামের মোজাম্মেল হক জানায় ৪০ শতক জমিতে বেগুন লাগিয়েছি । আগাম কিছু সবজি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। আল্লায় রহমত করলে আরো অনেক টাকা বিক্রি করতে পারবো। হলদি গ্রামের কৃষক নওয়াব মিয়া জানিয়েছেন সীম গাছে কদিন পরই জোয়ার আসবে। গাছগুলোকে সন্তানের মত লালন করছি। গাছ দেখে মনে মনে হাসি। কদিন পরেই কচকচা টাকা গুনতে পারবো। সারা এলাকা জুড়ে কৃষকদের মনে আশার সঞ্চার করছে শীতের সবজি। জানা গেছে, অনেক দিন আগে থেকেই এসব এলাকায় সবজি উৎপাদন হয়ে আসছে। তবে ২/৩ বছর ধরে এটা ব্যাপক হারে হচ্ছে। এলাকাতে একটি বাজার আছে। শীতের সময় বাজারে প্রতিদিন সকাল বেলায় হাজার হাজার মন নানা প্রজাতির সবজি উঠে।
রাতে অপেক্ষামান শত শত ট্রাক দিয়ে পাইকাররা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব সবব্জি কিনে নিয়ে যায়। এসব জমিতে আর কোন ফসল না হওয়ায় সীমান্তের কৃষকরা সারা বছর ধরে সবজি উঠার সোনালী দিনের অপেক্ষায় থাকে। কার্ত্তিক মাসেই সবজি উঠার সোনালী দিন শুরু। টাকা গুনবে এমন প্রত্যাশায় কৃষক-কৃষাণীসহ পরিবারের সকলেই এখন ব্যস্ত সবজি গাছের পরিচর্যায়। কৃষক এমদাদ মিয়া জানিয়েছেন আবহাওয়া এবার অনুকূল হওয়ায় সবজি চাষ ভাল হয়েছে। তবে ঐ এলাকার কৃষকরা জানিয়েছে এখানে সবব্জি চাষে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সেচ সংকট ও সরকারী কৃষি ঋণ না পাওয়া। পাশের মারশি নদী থেকে হাড়ি দিয়ে পানি টেনে এনে শত শত হেক্টর জমির পানির চাহিদা মেটানা হয়। ফলে কৃষকদের অমানুবিক পরিশ্রম ও সময় পেন হয় আবার বেশীর ভাগ সময়ে নদীতে পানি থাকে না তখন পানির অভাবে গাছ মারা যায়। আর বেশীর ভাগ জমি সরকারি হওয়ায় জমি জামানত দিয়ে কৃষি ঋণ পাওয়া যায়না। সরকার যদি কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা ও প্রয়োজনের সময় সামান্য ঋনের ব্যবস্থা করে দিত তবে এলাকাটি সবজি উৎপাদনে দেশে মডেল এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হতো। এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কুরবান আলী জানিয়েছেন এখানে সবজি উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে।
এখানকার কৃষরা ব্যাপক পরিশ্রমি এবং ভূমিও সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ঝিনাইগাতি সীমান্তে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হয়েছে। সেচের অভাবে আরও সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি সবসময় পতিত থাকছে। সরকার একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপন করলে হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যেতো। এখানের সবজি ক্ষেতে কৃষকরা রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সার ব্যবহার করে। ফলে সবজি খুব সুস্বাদু হয়। তাই এখানকার সবজির চাহিদাও রয়েছে বেশ। এ ব্যপারে ঝিনাইগাতি উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা জানিয়েছেন মারসি নদী থেকে সেচের মাধ্যমে পানি তোলার জন্য এডিবি থেকে কিছু টাকা বরাদ্ধ পেয়ে কিছু পাকা ড্রেন করেছি কিন্তুু এখন অর্থের অভাবে তাও বন্ধ আছে।
মারসি নদীতেই এখন পানির সংকট সুতারাং নদী থেকে পানি তোলা যাবেনা। এজন্য বর্তমানে সেচের আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ছালবাসেল পাম্প সরকার করে দিলে কৃষকদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এবং পতিত সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আসবে। কৃষকদের প্রয়োজনের সময় সহজ শর্তে কিছু কৃষি ঋণ দিলে কৃষরা ব্যপক উৎসাহিত হতো। বিষয়টি আমি শেরপুর-২ আসনের এমপি কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে আলোচনা করেছি।
নিউজরুম