নাটোর প্রতিবেদক :
সরকারী রাস্তার একটি আম গাছ নাটোরের বাগাতিপাড়ার জালালপুর গ্রামের মানুষকে ১০ বছর ধরে বিভাজন করে রেখেছে৷ চলছে মামলা মোকর্দ্দমা৷ পুলিশ আতঙ্কে গ্রামের অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷ এলাকাবাসী জানায়, বাগাতিপাড়া উপজেলার জালালপুর গ্রামে প্রবেশের এক মাত্র কাঁচা
রাস্তায় একটি আমগাছ নিয়ে গ্রামবাসীদের সাথে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে৷ গ্রামের প্রভাবশালী কাবিল সরকার গাছটি নিজের দাবী করে বেড়া দিয়ে রাখলে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়৷ এনিয়ে শুরু হয় বিরোধ৷ গ্রাম্য সালিসে কাবিল সরকার হাজির না হওয়ায় দির্ঘ ১০ বছরেও বিরোধের মিমাংশা হয়নি৷ উল্টো গাছের ডাল কাটা নিয়ে মামলা হওয়ায় অনেকেই এখন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷ কাবিল সরকারের ভাতিজা আব্দুস সাত্তার জানান, রাস্তার ওপড় আম গাছ থাকায় ওই রাস্তা দিয়ে ভারী কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না৷ এজন্য মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়৷ তাই গ্রামবাসি মিলে আম গাছের ডাল কাটার জন্য কাবিল সরকারকে অনুরোধ করে৷ কিন্তু সে অনুরোধ উপেক্ষা করে উল্টো রাস্তায় কাঁটা দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখে৷ এতে গ্রামবাসীর চলাচলে বাধাগ্রস্ত হলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে৷ গাছ কাটার বিষয় নিয়ে গ্রামে একাধিক বার সালিস ডাকা হলেও কাবিল সরকারের পরিবারের কেউ সালিসে হাজির হয় না৷ এক সময় গ্রামবাসি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দুর করতে গাছের একটি ডাল কেটে ফেলে৷ একই গ্রামের হাফিজুর রহমান হাবু জানান, রাস্তার ওপড় ওই আম গাছটি নিজের দাবী করে প্রভাবশালী কাবিল সরকার ৷ কিন্তু একাধিকবার মাপযোগ করেও গাছটি সরকারী জায়গায় পাওয়া যায়৷ কাবিল সরকার ও তার পরিবারের লোকজন গ্রামবাসীদের মাপ প্রত্যাখান করেন এবং গাছের চারিদিকে বেড়া দেয়৷ এতে গ্রামবাসির চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়৷ গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে গ্রামবাসির সাথে কাবিল সরকার ও তার পরিবারের বিরোধ চলে আসছে৷ চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ গ্রাম প্রধানরা একাধিকবার সমঝোতা বৈঠক ডাকলেও তারা না আসায় দির্ঘদিনেও এই সমঝোতা হয়নি৷ উল্টো গ্রামবাসিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানী করা হচ্ছে৷ স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, এ বিরোধ দির্ঘদিনের৷ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিস ডেকেও এক পক্ষ হাজির না হওয়ায় দিঘদিনেও ফয়সালা হয়নি৷
গ্রাম প্রধান সেকেন্দার আলী জানান, রাস্তার ওপড়ের আম গাছের কারনে কোন গাড়ি ঘোড়া গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না৷ এই আম গাছ নিয়ে মিথ্যা মামলা করায় গ্রামের অনেকেই এখন পুলিশ আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷
গ্রামের ৭৫ বছর বয়সের প্রবীন আব্দুর রশিদ জানান, গ্রামের সমাজ নিয়ে কোন গন্ডগোল নেই, রাজনৈতিক দলাদলি থাকলেও কোন ফ্যাসাদ নেই৷ অথচ রাস্তার ওপড়ের একটি আম গাছ গত প্রায় ১০ বছর ধরে গ্রামের মানুষদের বিভক্ত করে রেখেছে৷ এনিয়ে প্রায়ই মারামারির উপক্রম হয়৷
এব্যাপারে জানতে কাবিল সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি৷ তবে তার ভাতিজি নার্গিস বেগম জানান, রাস্তায় চলাচলে কোন বাধা নেই ৷ অথচ গ্রামবাসীরা জোর করে গাছের ডাল কেটেছে৷ গাছের ডাল কাটার প্রয়োজন হলে আমরাই কাটতাম৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, কখনই তাদের সালিসে ডাকা হয়নি এবং মাপের বিষয়টিও জানানো হয়নি৷ উপরন্তু তারা গাছ কাটার পর তাদের বাড়িতে চড়াও হয়৷ এসময় কেউ না থাকায় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা প্রানে রক্ষা পায়৷ পরে তার এক ভাতিজাকে মারপিট করা হয়৷
বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতর্া ফরিদুল ইসলাম খান জানান, আম গাছ কাটা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷ এ নিয়ে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানী করা হচ্ছে না৷