রূপসীবাংলা, নওগাঁ ১৬ অক্টোবর :
নওগাঁ সদর উপজেলার কাদোয়া গ্রাম থেকে ২ মাস ১৮ দিন পর ববি আকতার (২২) এর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। রোববার দুপুরে নওগাঁর নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট দীপংকর রায়, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, মামলার তদমত্মকারী কর্মকর্তা ইকবাল পাশা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, মেয়ের মা বাবাসহ এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।
জানা গেছে, ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে কাদোয়া গ্রামের ভ্যান চালক আকরাম হোসেনের ছেলে কাঠ মিস্ত্রী রাববী ওরফে ধলুর সাথে একই উপজেলার পার বোয়ালিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের কন্যা ববি আকতারের সাথে বিয়ে হয় । বিয়ের সময় ছেলের পরিবারকে এক বছরের মধ্যে যৌতুক হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেওয়ার চুক্তি হয়। এরই মধ্যে ববির বাবা ধলুকে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও সমূদয় টাকা পরিশোধের জন্য ববির বাবাকে চাপ দিতে থাকে। টাকা নিয়ে প্রায়ই রাববী ববিকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৪ জুলাই মঙ্গলবার রাতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধলে একপর্যায়ে রাববী তার স্ত্রী ববিকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। মেয়ে মৃত্যুর খবর শুনে কাদেয়া গ্রামে ছুটে আসলে হত্যাকান্ডটিকে ধামা চাপাদিতে ঘটনার দিন পুলিশ ও এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান রাববীর বাবার কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফায় বৈঠক বসে কোন সুরাহা না হওয়ায় পুলিশ ও চেয়ারম্যান মেম্বাররা কৌশলে এক লাখ দশ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংশার কথা বলে কোন টাকা না দিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়ে গেলে তাকে জোর পূর্বক পাঠিয়ে দেন। পরে থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২০/১২ তারিখ ২৫/০৭/১২ইং। একদিন পর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদমেত্মর পর লাশ বাবা মাকে দেখতে না দিয়ে স্বামীর গ্রামেই তড়িঘড়ি করে ববির লাশ দাফন করে। পরে ববির বাবা আমজাদ হোসেন ৩০ জুলাই বাদী হয়ে নওগাঁ নারী ও শিশু আদালতে ৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৬৯/১২ইং তারিখ ৩০/০৭/১২ইং। আদালতের বিচারক এটিএম আলী আজম মামলাটি আমলে নিয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসিকে মামলাটি গ্রহনের নির্দেশ দেন। ওসি মামলাটি ৬ আগষ্ট মামলাটি গ্রহন করেন। মামলা নং ১১, জি,আর নং- ৫১৪। মেয়ের ন্যায় বিচারের স্বার্থে ময়না তদমেত্মর জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট নজরম্নল ইসলামের নিকট আবেদন করলে বিচারক ৮ অক্টোবর লাশ উত্তোলনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট দীপংকর রায়কে নির্দেশ দেন।
এই প্রেক্ষিতে ১৪ অক্টোবর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়। লাশ উত্তোলনের সময় নিহত ববির বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশ ববির হত্যাকান্ডকে আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এলাকার ইউপি মেম্বার সোহেল রানা আমাকে এক লাখ দশ হাজার টাকার প্রলেভোন দিয়ে চুপচাপ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। পুলিশের ভূমিকা রহস্বজনক উলেস্ন¬খ করে ববির স্বজনরা জানান, মামলার তদমত্মকারী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে আসামীদের হয়ে কাজ করছেন। তারা ওই কর্মকর্তার পরিবর্তে অন্যকে দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এদিকে মামলার আসামীদের গ্রেফতার করার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মামলার তদমত্মকারী কর্মকর্তা এস, আই ইকবাল পাশা সাংবাদিকদের জানান, মামলার সঠিক তদমত্ম চলছে। আসামীরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না।
নিউজ, মোফাজ্জল হোসেন. সম্পাদনা : আলীরাজ/ আরিফ/ সালমা, নিউজরুম