রূপসীবাংলা, মনপুরা ১৩অক্টোবর :
টানা ৬ ঘন্টা যুদ্ধ করে প্রাণটা নিয়ে ফিরে এসেছি। প্রতি মুহূর্তেই যেন মৃত্যু আমাকে তাড়া করছিলো। সাতার কাটতে কাটতে যখন ক্লামত্ম হয়ে পড়ি তখন মনে হচ্ছিল, আর বুঝি বাড়িতে জীবিত ফিরে হলো না। বুধবার রাতের সেই ঝড়ের বিবরণ দিতে গিয়ে এভাবেই কথাগুলোই বলছিলেন মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফৈয়জউদ্দিন গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে বেলাল (৩০)। তিনি বলেন, ‘‘১৪ বছর ধরে নদী ও সাগর মোহনায় মাছ ধরছি।
এর আগে এতো বড় ঝড়ের মুখে পড়িনি’’। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জনতা বাজার মৎসস্যঘাট থেকে ১৩ জনের একটি জেলে দল নীরব মাঝির ট্রলার করে মাছ শিকার করতে যাই। রাত ৮টার দিকে আমরা যখন মেঘনায় অবস্থান করছিলাম, তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর থেমে থেমে বাতাস বইছিলো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পর রাত ১টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ আরো বেড়ে যায়। তখনও নদী থেকে ৪-৫ জন হাত ঢেউ আছড়ে পড়ছিলো।
রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অদূরে সামসুদ্দিন চর এলাকায় অবস্থান করি আমরা।’’মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা জেলে বেলাল অরো বলেন, ‘‘ঝড়ের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে বাধ্য হয়ে নদীর মাঝখানে নোঙ্গর দেই। এক পর্যায়ে উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারটি যখন ডান দিকে কাত হয়ে যাচ্ছিল, তখন সব জেলে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তার আগেই ঝড়ো বাতাস আর উত্তাল ঢেউ আমাদের সবাইকে নদীতে ফেলে দেয়।’’
‘‘এর আগেই ৩টি কন্টেইনার নিয়ে আববাস, রফিক, সালাউদ্দিন, হেলাল, বেলাল, আজাদ, বাবুর্চি মিজান নদীতে পড়ে যান। অপর ৫ জন আরেকটি কন্টেইনার নিয়ে নদীতে পড়ে যাই।’’
‘‘রাত ২টার পর থেকে সবাই এদিক-ওদিক সাতার কাটছিলাম।
অন্ধকার হওয়ায় একে অপরকে দেখতে পায়নি। তবে ৮ জন একসঙ্গে ছিলাম এটা নিশ্চিত ছিলাম আমরা। আববাস ও মান্নান একসঙ্গে থাকলেও শেষ পর্যমত্ম মান্নান নিখোঁজ হয়ে যায়। ‘‘রাত আনুমানিক ৩টার দিকেও আমরা বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। প্রতিটা মুহূর্তই যেন যুদ্ধ। এক পর্যায়ে জীবিত ফিরে আসার চেষ্টা ছেড়ে দেই। রাত সাড়ে ৪টার দিকে (বেলালের সঙ্গের ৮ জেলে) তারা মাঝ নদীতে ছিলেন। এতো সাঁতার কেটেও কোন কূল-কিনারা পাওয়া যায়নি।
ভাসতে ভাসতে অদূর থেকে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আমাদের উদ্ধার করেন অন্য মাছ ধরার জেলেরা।’’ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন বেলাল। মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম জানান, যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে নিখোঁজ জেলেদের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
নিউজরুম