বদলে যাচ্ছে চলনবিলের দৃশ্যপট

0
318
Print Friendly, PDF & Email

আনোয়ার হোসেন আলীরাজ
অতিতের গল্প আর কল্পকথার ইতিহাস বির্জরিত চলনবিলে এক সময়ে ঢেউয়ের গর্জনে ঘুম ভাঙ্গতো বিল পাড়ের মানুদের। অন্ধকার এক জনপদের নাম ছিল চলনবিল। পদ্মা-যমুনার সম্মিলিত পস্নাবন ভূমিতে অপরিকল্পিত বাঁধ-কালভাট এবং বিল ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলায় ধীরে ধীরে বদলে যাচেছ চলনবিলের দৃশ্যপট। পুরনো সেই পস্ন¬াবন ভূমি আর নেই।
চলনবিলের জলরাশি বদ্ধ বিলের ন্যায় স্থির না হয়ে গতিশীল ছিল বলেই এর নাম করণ করা হয় ‘চলনবিল’ এখন আর পদ্মার স্রোতধারা বড়াল, চিকনাই, ইছামতি, করতোয়া, পদ্মাবতী, নন্দকুজা, গুমানী ও আত্রাই নদীতে প্রবাহিত হয় না। ১৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯ বিল, ৪২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ১৬ নদী এবং১২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২টি খাল ও ৭৭টি নদীতে পলি পড়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যেতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। চলনবিল অঞ্চলের কৃষক আবদুল লতিফ জানান,পানি উন্নয়ন বোডের্র অপরিকল্পিত বাঁধ-কালভাট এবং নিয়মিত ড্রেজিং না করায় শুকনো মৌসুমের শুরম্নতে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ সংকট দেখা দেয়।
চলনবিলের নদী গুলোর গড় প্রসস্থ ছিল ১৫’শ থেকে ২ হাজার বর্গফুট। বর্তমানে আত্রাই নদীর দৈর্ঘ্য ২’শ ৫০ বর্গমাইল, নাগর নদী ১৫’শ বর্গমাইল, কড়াল ৩২’শ বর্গ মাইল, নন্দকুজা ১৫’শ বর্গমাইল, গুমানী ১৬’শ বর্গমাইল, ভাদাই ৯’শ বর্গমাইল, বানগঙ্গা ৮’শ বর্গমাইল, গুড় নদী ৬’শ বর্গমাইল, কমলা ৭’শ বর্গমাইল, রক্তাই ৪’শ বর্গমাইল, দূর্গাদই ৫বর্গমাইল, চিকনাই ৮ বর্গমাইল, বিলসূর্য ৭’শ বর্গমাইল, তুলসীগঙ্গা ২৬’শ বর্গমাইল। খাল-বিল ও নদ-নদীর ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে ওইসব নদ-নদীর সৌন্দর্য।
‘ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’ বই থেকে জানা যায়, এক সময়ে চলনবিলের আয়তন ছিলো নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, নওগাঁর রানীনগর, আত্রাই, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়া জেলার দক্ষিনাঞ্চল মিলে এর অবস্থান ছিলো। ১৯১৪ সালে সিরাজগঞ্জে রেল লাইন স্থাপনের পর থেকে লাইনের উত্তর ও পশ্চিম অংশকেই বলা হয় চলনবিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক রিপোর্টে বলা হয়, চলনবিলের পশ্চিমে নওগাঁ জেলার নাগর নদী অর্থাৎ রক্তদাহ ও লোহাগড়া বিলের পশ্চিমাংশ, উত্তরে বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলার আটঘরিয়া এবং পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলা নিয়ে চলনবিলের অবস্থান।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক জরিপে চলনবিলের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫’শ ৩৫ হেক্টর এবং বিলের আয়তন ছিল প্রায় ৮’শ বর্গমাইল। বর্তমানে ৮টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন এবং ৮টি পৌরসভা ও ১৬’শ গ্রাম রয়েছে।
চলনবিলের ইতিকথার লেখক এমএ হামিদ টি, কে ১৯৬৭ সালে তার এক বইতে লিখেছিলেন, তখন থেকে একশত বছর পূর্বে অর্থাৎ এখন থেকে ১’শ ৪০ বছর পূর্বে জনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে বিলের জলময় অংশের আয়তন ছিল ৫’শ বর্গমাইলের উপরে। ১৯০৯সালে চলনবিলের আয়তন ছিল ১হাজার ৮’শ ৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল সারা বছর পানি জমে থাকতো। পানির স্রোতধারা ও নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে চলনবিলের দৃশ্যপট।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চলনবিল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চলনবিলে ২’শ ৫০ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তিনি বলেন, চলনবিল রক্ষা এবং এর অতীতের চিত্র ফিরিয়ে আনতে এই অঞ্চলের ৭জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে‘চলনবিল উন্নয়ন ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন কাজ করছে।
লেখক
আনোয়ার হোসেন আলীরাজ
নিউজ এডিটর
রূপসীবাংলা নিউজ ডট কম
ই-মেইল: raj.singra@yahoo.com

শেয়ার করুন