মোফাজ্জল হোসেন, নওগাঁ প্রতিবেদক:
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় হাটচকগৌরী উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক ইচ্ছা পুরনের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, শিক্ষক প্রহৃত, ছাত্র অসন্তোষ এবং চলমান পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে এই ঘটনার উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হসত্মক্ষেপে পরিস্থিতি সাময়িক প্রশমিত হলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসহ ক্লাশ বর্জনের সিদ্ধামেত্ম অটুট রয়েছে।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঐ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে প্রায় ৩ মাস আগে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির আওতায় বর্তমানে নতুন গভর্নিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ৬ অক্টোবর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রক্রিয়া গ্রহন করা হয়। এর আগেই যারা দাতা সদস্য হিসাবে নির্বাচন করতে আগ্রহী এমন ৫ জনের নিকট থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা গ্রহন করা হয়। টাকা গ্রহণের পর তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক এনামুল হক নিজের কাছে অনেকদিন টাকাগুলো রেখে দেন। এ নিয়ে কথা উঠলে এর মধ্যে মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে বাঁকী ২০ হাজার টাকা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য পদের জন্য ৩০ জন প্রার্থীর নিকট থেকে জনপ্রতি ৬শ টাকা করে নেয়া হলেও তাদের কোন রশিদ দেয়া হয়নি।
এদিকে দাতা সদস্যদের মধ্যে কাউকে কোন সংবাদ না দিয়ে যোগসাজস করে কেবলমাত্র হানিফ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে সংবাদ দিয়ে তার মনোনয়নপত্র জমা করান। অপরদিকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ইসমাইল হোসেন এবং দাতা সদস্য হিসাবে লুৎফর রহমান তাদের দাতা হিসাবে চাঁদার অর্থ জমা দিতে এলেও তা বিশেষ মহলের চাপে গ্রহণ করা হয়নি। এনিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই এক পর্যায়ে গতকাল বুধবার (১০অক্টোবর) দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রধান শিক্ষক কাগজপত্র নিয়ে মহাদেবপুরে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রিজাইডিং আফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামের উদ্দেশ্যে বেলা ১১টায় রওয়ানা হন। এ সময় ঐ স্কুলের সহকারী লাইব্রেরীয়ান ও ক্যাটালগার আতোয়ার রহমান মামুন প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে কাগজপত্র জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে অফিসের ভিতর নিয়ে যায় এবং জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন এবং এর কারন হিসাবে মামুন জানান যে আগ্রহী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসমাইল হোসেন তার পিতা এবং আগ্রহী দাতা সদস্য লুৎফর রহমান তার শ্বশুর। প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে ফাইলপত্র ছিনিয়ে নেয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে যোগসাজসে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী দাতা সদস্য উক্ত হানিফ উদ্দিন তার দলবল নিয়ে গিয়ে স্কুলে আক্রমন চালায়। এতে কতিপয় শিক্ষক কর্মচারীরা গেটে তালা লাগিয়ে দেন। হানিফের নেতৃত্বে একদল লোক স্কুলের প্রধান গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হককে বেধড়ক মারপিট করে। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা পরীক্ষা বর্জন করে শ্রেনীকক্ষ থেকে একযোগে বেড়িয়ে এসে হানিফকে ধাওয়া করে। এতে সেখানে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে হানিফ সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং শিক্ষকদের সাথে এক সমঝোতা বৈঠক করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত দেন যেহেতু হানিফ শিক্ষককে মারপিট করেছে সে কারনে আসন্ন গভর্নিং বডিতে তাকে কোনক্রমেই অন্তর্ভূক্ত করা হবে না। অন্য সমস্যা সমূহের সমাধানের জন্য আগামী ১৫ অক্টোবর সোমবার বিকালে ইউএনও’র অফিসে একটি বৈঠক আহবান করেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহবান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারপিটের প্রতিবাদে পরীক্ষাসহ ক্লাশ বর্জনের সিদ্ধামেত্ম অটল থাকে।
প্রতিবেদক মোফাজ্জল হোসেন সম্পাদনা আলীরাজ/ আরিফ