রূপসীবাংলা সিংড়া, ০৯ অক্টোবর:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার দুর্গম পল্লীর বাখুন্দা গ্রামে ইব্রাহীম খলিফা নামে এক দরিদ্র কৃষক রাগের বসতে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় গ্রামের প্রধানদের হিল্লে বিয়ের রাজী না হওয়ায় ইব্রাহীম খলিফার পরিবারকে এক ঘরে করে রাখার বিধান জারী করেছেন গ্রাম প্রধানরা। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। আর এঘটনায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বাখুন্দা গ্রামে শিশু থেকে বৃদ্ধদের মুখে মুখে রব উঠেছে।
সিংড়া থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাখুন্দা গ্রামের মৃত: উমেদ আলীর ছেলে ইব্রাহীম খলিফা গত ১সেপ্টেম্বর তার ছেলে আলী আজমের পড়া লেখার ব্যাপারে শাসন করার সময় স্ত্রী জোসনা বেগম বাঁধা দেয়। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহের এক পর্যায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইব্রাহীম খলিফা তার স্ত্রী জোসনা বেগমকে দুই তালাক দেয়ার ঘোষনা দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় কতিপয় লোকজন পূর্ব বিরোধের জের ধরে ইব্রাহীম খলিফা তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে এবং অবৈধ ভাবে সংসার করার অভিযোগ আনে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে ইব্রাহীম খলিফা আইনজীবির মাধ্যমে নাটোরে নোটারী পাবলিকের ওই তালাক প্রত্যাহার করে কলেমা পড়ে এবং স্বামী স্ত্রী রূপে এক সঙ্গে বসবাস করতে থাকে। এ অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর ইব্রাহীম খলিফা গ্রামের মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল সহ একই গ্রামের প্রধান ওসমান প্রামানিক, আব্দুল খালেক, ও আল আমিন তাকে মসজিদে থেকে বের করে দেয়। এরপর প্রধানরা ঘোষনা করেন হিল্লে বিয়ে না করালে সালিশ বিচারের মাধ্যমে অবৈধ মেলা মেশার কারণে ইব্রাহীম খলিফা এবং তার স্ত্রীকে এক ঘরে করে রাখা সহ ইসলামী শরিয়ত মতে দোররা মারা হবে। এ ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর ইব্রাহীম খলিফা বাদী হয়ে এঘটনার প্রতিকার দাবি করে সিংড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইব্রাহীম খলিফা অভিযোগ করেন তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। হিল্লে বিয়েতে রাজী না হলে তার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকরা সরোজমিনে গিয়ে দেখতে পায় থানা পুলিশের উপস্থিতিতে শালিসে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ও গ্রাম প্রধানরা কৃষক ইব্রাহীমের স্ত্রীকে হিল্লে বিয়ে দেয়ার ফন্দি করছে। আর সালিশে ওই কৃষককে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানায়, ইতোপূর্বে একই গ্রামে তালাকের ঘটনায় ৪টি হিল্লে বিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এই গ্রাম্য মাতবরদের তৈরি নিয়ম ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় কৃষক ইব্রাহীমের উপর অন্যায় করা হচ্ছে।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইব্রাহীম খলিফাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া বা এক ঘরে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তদমত্ম চলছে। তদমত্ম সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে নাটোরের জাঠিয়ান মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মাদ আব্দুল হান্নান জানান, কেউ ক্রোধান্বিত হয়ে এক সংগে তিন তালাক দিলে তালাক হয়না। তাছাড়া হিল্লে বিয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় আইনে বৈধ নয়।
নিউজ প্রতিবেদক, সম্পাদনা আলীরাজ / আরিফ