রূপসীবাংলা কুষ্টিয়া, ৮ অক্টোবর :
সন্ত্রাস কবলিত রক্তাক্ত জনপথ কুষ্টিয়া। রাত পোহালেই শোনা যায় খুনের সংবাদ। নিহতদের পরিবারের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। মাথা এক স্থানে তো দেহ আরেক স্থানে। গুলি, জবাইসহ বিভিন্ন পন্থায় নির্মমভাবে খুনের ঘটনা ঘটে কুষ্টিয়ায়। যা দেখে বা শুনে শিউরে ওঠে শরীর। চলতি বছরের গত ৯ মাসে কুষ্টিয়া ৫২ খুনের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে গ্রাম্য আধিপত্য বিসত্মার ও সন্ত্রাসী সংগঠনের অমর্ত্মদন্দের জের ধরে। গত ৯ মাসে জেলার সবচেয়ে আলোচিত রোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটে ২৮ আগষ্ট কুষ্টিয়ার কুমারখালির শিলাইদহ ঘাটে।
ওই দিন খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বিশবাসসহ ৩ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পাবনায় একটি হত্যা মামলার হাজিরা শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিলাইদহ এলাকার পদা নদীতে সন্ত্রসীদের উপর্যপুরি গুলি ও ছুরিকাঘাতে তারা মারা যায় চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামসহ ৩ জন। গত ৮ আগষ্ট মিলপাড়া বড় ড্রেন এলাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তির লাশ উদ্ধার করে মডেল থানা পুলিশ, ১০ আগষ্ট দৌলতপুরের ময়রামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইমারুল ইসলামকে টাকার জন্য খুন করে প্রতিপক্ষ, ২৬ আগষ্ট বংশীতলার দরগার মাঠ এলাকায় আসাদুল নামে এক অটোবাইক চালকের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে মডেল থানা পুলিশ, ১ জুন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ায় জমি সংক্রামত্ম পারিবারিক বিরোধের জের ধরে মামাতো ভাইয়ের উপর্যপরি ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন কলেজ ছাত্র তুহিন (২৬)।
সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের নতুন বোয়ালদাহ গ্রামের শহীদ মোলস্নার ছেলে। গত ৯ জুন কুষ্টিয়া শহরের ডিসি কোর্টের পাশে মাঠপাড়ার একটি বাসায় পূর্ব মজমপুরের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম ওরফে কালুকে বটি ও চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১১ জুন দিবাগত রাতে সদর উপজেলার জোতপাড়া-শৈলগাড়ি মাঠে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩২) নামের এক কৃষককে জবাই করে হত্যা করে। ২৮ মে রাতে জেলার খোকসা উপজেলা শহরে একটি পাট ক্রয়কেন্দ্রে ইছাহক আলী (৫৫) নামের এক শ্রমিককে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালিয়া থানার তেতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। খালিশপুর জুটমিলের কর্মচারী হিসেবে খোকসায় অবস্থানকালে তাকে হত্যা করা হয়। ২২ মে কুষ্টিয়া কুমারখালীর পৃথক স্থানে নারীসহ দু’জন খুনের শিকার হন। ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গবরা গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নাজমা (৩৫) নামে এক নারী নিহত ও অমত্মত ২০জন আহত হন। একই দিনে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামের গড়াই নদীর চর থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ মে রাতে কুষ্টয়া শহরের গোসালা এলাকায় শাহিদা খাতুন (৪৫) নামে এক নারীকে গলায় ফাঁস দিয়ে ও মাথায় আঘাত করে খুন করে।
৮ মে রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশববিদ্যালয় থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামের শেখপাড়ায় এক রিক্সা-ভ্যান চালককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করে। ১মে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খলিষাকুন্ডির পাঁচপীরতলা রাসত্মার পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ যুবক কারিবুলের (৪০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি তাকে অপহরণের পর পরিকলিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের মাঠ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) আঞ্চলিক নেতা মোতালেব হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ চরমপন্থীরা তাকে হত্যা করতে পারে বলে পুলিশের আশংকা। ১৩ এপ্রিল তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া কুমারখালীর পান্টি গ্রামের দু’দলের সংঘর্ষে মঞ্জু নামে এক যুবক নিহত ও ২০জন আহত হন। ২১মার্চ রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরের নওপাড়া মাঠে জামাল ডাকাতকে (৫২) গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
১৫ মার্চ রাতে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে স্কুল ছাত্র সানিম (১৬) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ১০ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের ট্রিপল ভেনচার ডট কম লিমিটেড’র ব্রাঞ্চ অফিসের বাথরুম থেকে স্বপন (২৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সর্বশেষ গত সেপেটম্বার মাসে কুমারখালীর চর সাদীপুর এলাকার পদার চর থেকে সংখ্যা লঘুর জবাইকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারী মাসে কুষ্টিয়া মডেল, কুমারখালী, খোকসা, ইসলামী বিশববিদ্যালয়, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর থানায় ৬টি খুন হয়েছে, ফেব্রুয়ারী মাসে ঘটেছে ৩টি খুনের ঘটনা। মার্চ মাসে ৭টি, এপ্রিল মাসে ৫টি, মে মাসে ৬ টি, জুন মাসে ৩টি, জুলাই মাসে ৬টি, আগষ্ট মাসে ৮টি এবং সেপেম্বর মাসে ৭টি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়ার আইন-শৃঙ্খলা আগের-যে কোন সময়ের তুলনায় আনেক ভাল। তবে জেলার শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নতি করতে জেলা পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। তবে এসব খুনের সাথে জড়িত অনেককেই ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নিউজরুম