রূপসীবাংলা ঢাকা, ৭ অক্টোবর:
শাহজালাল আনত্মজর্াতিক বিমানবন্দরে সাড়ে ১৩ কেজি স্বর্ণ আটকের ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যানিং অপারেটর রেখা পারভীনকে খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে এই রেখা পারভীনই স্বর্ণ চোরাচালানের মূল সযোগী৷ বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই চার দিনের ছুটি নেওয়ার পর ছুটি শেষ হলেও আর কাজে যোগ দেননি রেখা৷ গ্রেফতারের ভয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেই ধারনা করছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ গত ১০ সেপেম্বর স্বর্ণ পাচারের একটি বড় চালান ধরা পড়ার পর এরসঙ্গে জড়িত অভিযোগে চালানটির বাহক মনোয়ারুল হক, পাচারকারী দেব কুমার দাশ ওরফে দেবু, সিভিল এ্যভিয়েশনের সিনিয়র নিরাপত্তা কমর্ী আবুল কালাম এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহ কে গ্রেফতার করেছে৷ আজিজ শাহ বিমান বন্দর থেকে স্বর্ণের চালানটি বাইরে বহন করার দায়িত্বে ছিলেন৷ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ৪জনই স্বর্ণ পাচারের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন৷
উলেস্নখ্য, গত ১০ সেপেম্বর দুপুরে হযরত শাহজালাল আনত্মজর্াতিক বিমানবন্দরে দুবাই এর একটি ফাইটের টয়লেটে বিশেষ কায়দায় পলিথিন মোড়ানো একটি প্যাকেটে ১১৭টি সোনার বার উদ্ধার করে বিমান বন্দর আর্মড পুলিশের এএসপি মিনহাজ৷ যার আনুমানিক মুল্যে ৭ কোটি ২ লাখ টাকা৷ এসময় মোব্জনোয়ারুল হক নামে এক যাত্রীকে আটক করা হয়৷ এঘটনায় ওই দিনই বিমান বন্দর থানায় বিশেষ মতা আইনে মামলা করে এপিবিএন কতর্ৃপ৷ মামলা তদনত্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে৷ পরে গোয়েন্দা পুলিশ ১১ সেপেম্বর মনোয়ারকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷ গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রিমান্ডে মনোয়ারুল স্বর্ণের আমদানিকারক হিসেবে চদ্রিমা সুপার মার্কেটের স্বর্ণ ব্যাবসায়ী দেব কুমার দাশের কথা উলেস্নখ করেন৷
তার নির্দেশনাতেই দুবাই থেকে চালানটি আনা হয় বলেও জানান মনোয়ার৷ মনোয়ারের বরাত দিয়ে সূত্রটি আরও জানায়, চালানটি আনার জন্য তাকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই টাকা পাঠান দেব কুমার৷ সেই টাকায় দুবাইয়ে স্বর্ণ কিনে একদিন পরই তা নিয়ে আসেন ঢাকায়৷ এজন্য তাকে ফাইটের রিটার্ন টিকেট ছাড়াও পারিশ্রমিক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা৷ দেবকুমারের জন্য এভাবে প্রায়শই চালান আনতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান মনোয়ার৷ জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে নিয়মিত এই চোরাচালানে তাকে বিমান বন্দরে সহযোগিতা করে আসছেন সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীন৷ মনোয়ারের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ সাংবাদিকদেরকে জানায়, রেখা পারভীন বিমান বন্দরের প্রবেশ পথ থেকে বিমানে ওঠা পর্যনত্ম লোক দিয়ে সহযোগিতা করে চোরাচালানগুলো পার করে দেন৷ ১৮ সেপেস্বর আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেন৷ তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ উত্তরা এলাকা থেকে ১৯ সেপেম্বর দেব কুমার দাশ কে গ্রেফতার করে৷ ২০ সেপেম্বর আদালত তার ৬দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে৷ ডিবি জিঞ্জাসাবাদে দেব কুমার সোনা চোরাচালানের কথা স্বীকার করেন এবং তার সাথে রেখা পারভীনসহ নিরাপত্তা কমর্ী কালাম ও এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহ এর সম্পৃক্ততার কথা বলেন৷ গত ২ অক্টোবর আদালতে এই স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন দেব কুমার৷ এর আগে গত ২১ সেপেম্বর ডিবি পুলিশ বিমান বন্দরের গোল চত্ত্বর থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কমর্ী আবুল কালাম কে গ্রেফতার করে৷ পরে আদালতের মাধ্যমে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়৷ গোয়েন্দা সূত্র জানায় আবুল কালামও রিমান্ডে জানায়, রেখা ও আজিজ তাকে দিয়ে স্বর্ণ পাচারের কাজ করিয়ে বিনিময়ে রেখা প্রতি চালানে মোটা অংকের টাকা দিতেন৷ ২৯ সেপেম্বর কালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন৷ এদিকে, স্বর্ণপাচারের গোয়েন্দা সংন্থা এনএসআই সংশিস্নতার প্রমান পাওয়ায় ওই সংস্থার কতর্ৃপ ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহ কে চাকরী থেকে বরখাসত্ম করে ২৫ সেপেম্বর ডিবি পুলিশের কাছে হসত্মানত্মর করে৷ ডিবি হেফাজতে আব্দুল আজিজ শাহ বিমান বন্দরের বোর্ডিং ব্রিজ থেকে স্বর্ণ পাচারের কথা স্বীকার করেন এবং ২৭ সেপেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন৷ গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় ঘটনার মূল হোতা সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ, গত কয়েক দিনে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি৷ তবে ২/৪ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ডিসি-ডিবি দাবি করেন৷ রেখা পারভিনের ব্যাপারে অনুসন্ধানে জানা যায়, সিভিল এভিয়েশনের সামান্য লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীন বিমান বন্দরে চাকরি করে অবৈধ সোনা চোরাচালানে সিন্ডিকেট কে সহযোগিতা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন৷ লাগেজ স্ক্যান অপারেটর হয়েও উত্তরায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় দুটি ফাট গাজীপুরে ১২ কাঠার জমি ছাড়াও নিজে চড়ে বেড়ান কালো একটি এলিয়ন গাড়িতে৷ গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার দিন থেকে রেখা চার দিনের ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর থেকে গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রেখা৷ তবে তাকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ডিবি পুলিশ৷ এবিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জানান, স্বর্ণের চালানটি আটকের ঘটনায় ডিবি পুলিশ সর্বাত্মক পযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনার সাথে জড়িত রেখা পারভীন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে৷ রেখা পারভীনকে গ্রেফতার করা গেলে সোনা পাচারের সাথে জড়িত বড় একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানিয়েছেন৷
নিউজরুম