রূপসীবাংলা নিউজ ডেস্ক, ০৬ অক্টোবর:
তিসত্মা চুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে জেতানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের ‘স্বার্থ বিসর্জন’ দেয়া হবে না৷ শুক্রবার প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়৷
এতে বলা হয়, সমর্থন প্রত্যাহারের দু’সপ্তাহ পরে তিসত্মা চুক্তি নিয়ে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্র৷ বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশের এক আলোচনাচকে তিসত্মা চুক্তি প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় নগ্রোরন্নয়ন মন্ত্রীী জয়রাম রমেশ বলেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলি ভারতের বিদেশনীতির েেত্র সঙ্গতিহীন ভূমিকা নেয়ার চেষ্টা করছে৷ বিদেশনীতিকে কয়েদ করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে৷ বিষয়টি ভয়াবহ৷’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে জয়ারামের বিষয়টি নিয়ে মৃদু বাদানুবাদ হয় বলেও জানায় আনন্দবাজার৷ এছাড়া জয়রামের মনত্মব্যের পালা জবাবে রাজ্যের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘হাসিনাকে বাংলাদেশে জেতানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিসত্মা চুক্তি করতে হবে, আবার ওবামাকে জেতাতে গিয়ে এফডিআই-কে সমথর্ঞ্চন করতে হবে- এটা হতে পারে না৷’ তিসত্মা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানত্ম চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন চলছে৷ কিন্তু এত দিন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি সরকারের শীর্ষ কতর্ারা৷ মমতা সরে যাওয়ার পর এ বার তাই আর্থিক সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নেও কংগ্রেস যে সাহসী হতে চলেছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েন জয়রাম৷ তার কথায়, ‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে৷ আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির (তিসত্মা চুক্তি) সমাধান হাক৷’ জয়রাম বলেন, ‘বাংলাদেশকে তিসত্মা চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে কথা দেয়া হয়েছে৷ সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের রাখতে হবে৷ দণি এশিয়া তথা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঢাকা যা করেছে তার প্রতিদান দেয়া দরকার৷’ তাত্পর্যপূণর্ ভাবে ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রানপোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও৷ জয়রাম যখন বলছেন, তখন দীনেশ প্রতিবাদ করে বলেন, ‘তিসত্মা চুক্তি জাতীয় বিষয়৷ তাতে আঞ্চলিক সিলমোহর দেয়া ঠিক নয়৷’ জবাবে জয়রাম বলেন, ‘তিসত্মা-চুক্তিকে টেনে আঞ্চলিক বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে৷’ এর পর কথা না-বাড়িয়ে উঠে যান দীনেশ৷ জয়রাম বলেন, ‘আলফা-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছে, তার প্রতিদান না দেয়াটা অকৃতজ্ঞতা৷’ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি৷ তার কথায়, ‘ভারত যদি তিস্তা এবং সীমানত্ম চুক্তি রূপায়ণ করতে পারে, তা হলে আমাদের ভবিষ্যত্ সম্পূর্ণ বদলে যাবে৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কও এক ধাপে অনেকটা এগিয়ে যাবে৷’ গত বছর মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরেই তিসত্মা-চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে শেষ পর্যনত্ম তা করা সম্ভব হয়নি৷ মমতাকে রাজি করানোর জন্য কেন্দ্রের প থেকে একাধিক বার দূত পাঠানো হয়েছে, কিন্তু বরফ গলেনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যে ভাবে চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে, তা রূপায়িত হলে রাজ্যকে অনেক বেশি জল দিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে৷ তিগ্রসত্ম হবে উত্তরবঙ্গ৷ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মমতা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে একটি রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ কিন্তু তার কাজ এখনও শেষ হয়নি৷ এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের নির্বাচন এগিয়ে আসছে৷ তিসত্মা এবং সীমানত্ম চুক্তি করতে না পারায় শাসক আওয়ামী লিগের উদ্বেগ বাড়ছে৷ সে দেশের ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই যে, ভারতের সঙ্গে তিসত্মা বা সীমানত্ম চুক্তি করতে পারলে আওয়ামী লীগ অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারবে৷ সরকারের এক কতর্ার বক্তব্য, তিসত্মা চুক্তি নিয়ে টালবাহানার ফলে বাংলাদেশের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীর হাতই শক্ত হচ্ছে৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও বলেছেন, ‘তিসত্মা নিয়ে বাংলাদেশে এক চূড়ানত্ম আশা তৈরি হয়েছে৷ ভারত যদি তা পূরণ করতে না পারে, তা হলে আমাদের সম্পর্ক খুব বড় রকমের ধাক্কা খাবে৷’
আলীরাজ/ আরিফ নিউজরুম