আশরাফুল ইসলাম, বড়াইগ্রাম
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ভরতপুর গ্রামের হেকিম রূস্তুম আলী এখন বেদেনা রূস্তুম৷ ভেষজ ঔষধ বিক্রি করায় এলাকার মানুষের কাছে তিনি হেকিম রূস্তুম বলেই পরিচিত ছিলেন৷ কিন্তু সম্প্রতি তিনি বেদেনা চাষে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় তার পরিচয় বদলে গেছে৷ এখন তিনি বেদেনা রূস্তুম নামেই এলাকায় পরিচিত৷ আর বেদেনা চাষ করে দরিদ্র হেকিম রূস্তুম আলী এখন স্বাবলম্বী৷
বাজারে ঔষুধি গাছগাছালি (ভেষজ দ্রব্যাদি) দিয়ে রোগীর চিকিত্সা করাই ছিল রূস্তুম আলী কাজ৷ বাড়ির আঙিনায় নানা রকম ঔষুধি গাছ চাষ করতেন রূস্তুম আলী৷ স্বপ্ন দেখেন এলাকার হত দরিদ্র মানুষের সু-স্বাস্থ্য নিয়ে৷ কি করা যায়, কিভাবে করা যায় এই নিয়ে মহাচিনত্মা তার মাথায়৷ ২০০৫ সালে একদিন বাজার থেকে ফেরার পথে বেদানা কিনতে গেলে প্রতি কেজি বেদানার দাম হাঁকা হয় ৪’শ টাকা৷ এতো দামের কারণ কারন জানতে চাইলে দোকানী তাকে জানায় বিদেশী ফল, পুষ্টিগুন বেশী ,তাই দামও বেশী৷ তার মনে প্রশ্ন জাগে এতো পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ বেদানা দেশে হয় না, দামও অনেক৷ তিনি সিদ্ধানত্ম নেন , বেদেনার চাষ করার৷ একটি বেদানার চারা কিনে বাড়ীর আঙ্গীনায় রোপন করেন৷ এক বছরের মাথায় ওই গাছে ফল আসে৷ এতে উত্সাহিত হয়ে তিনি আরো ২০টি কলম চারা এনে রোপন করেন৷ সেগুলোতেও ফল আসে দুই বছরের মাথায়৷ পরের বছর ২১ গাছে নিজ হাতে ২০০ কলম বাঁধেন তিনি৷ সেখান থেকে ১৩০টি কলম রোপন করেন, বাঁকি গুলো বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে বিতরণ করেন৷ নিজের ১০ কাঠা জমিতে ১৫৬টি গাছের বেদানা বাগান করে নিয়মিত যত্ন শুরম্ন করেন ৷ গতবছর বেদানা বিক্রি করে সব খরচ বাদে মুনাফা হয়েছিল এক লাখ টাকা৷ তিনি নিজে নিয়মিত বেদানা খান পাশাপাশি প্রতিবেশীদের খাওয়ার সুযোগ দেন৷ দরিদ্রের মাঝে বিনামূল্যে বিতরন করেন৷ বেদানা গুলো আকারে বেশ বড়, স্বাদ আছে বিদেশী গুলোর মতই৷ কোন প্রকার কিটনাশক ব্যবহার হয় না, টাটকা ফলে অধিক পুষ্টি নিশ্চিত হয়৷ তিনি মাত্র ২০০ টাকা কেজিতে বেদানা বিক্রি করছেন৷ যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক৷ সব গুলো গাছে ফল ধরলে প্রতি বছর তিন থেকে চার লাখ টাকার বেদানা বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করেন৷
প্রতিবেশী দিন মজুর আবু সাঈদ জানান, রূস্তুম আলীর বেদেনা খুবই সুস্বাদু৷ তিনি নিয়মিত তার বাগানে পরিচযর্ার কাজ করেন৷ মুজুরির পাশাপশি বেদানা খেতেও দেন৷ এবার তিনিও তার বাড়ির আঙিনায় দুটি চারা লাগিয়েছেন৷
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক ইয়াছিন আলী জানান, রূস্তুম আলীর প্রংশসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন৷ তার সাফল্যে এখন অনেকেই বাড়ির আঙ্গিনায় বেদানা রোপন করছে৷ তার বাগানের কারনেই এলাকার দরিদ্র মানুষ পুষ্টিকর বেদানা ফল খেতে পারছে৷ হেকিম রূস্তুম আলী এখন বেদানা রূস্তুম নামেই বেশী পরিচিত৷ ভরতপুর বস্নকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, রূস্তুম আলীর বাগানের বেদানা আবহাওয়া ও মাটির কারনে একটু টক হয়৷ তবে গুনগত মান ভাল৷
হেকিম রূস্তুম আলী বলেন, আমার ইচ্ছা এত পুষ্টি গুনের ফল বেদেনা যেন গ্রামের মানুষ সহজে এবং সসত্মায় খেতে পারে৷ সবাইকে বলবো বাড়ীর আনাচে কানাচে ফাঁকা স্থানে দু’চারটে করে বেদানার গাছ লাগালেই পারিবারিক চাহিদা পুরণ হয়ে যাবে৷
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন বলেন, রূস্তুম আলীর বেদানা বাগান নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়৷ তার এই উদ্যোগ খুবই ভাল৷ যেকোন প্রয়োজনে তার জন্য আমাদের সহায়তার দ্বার খোলা রাখা হয়েছে৷ দেশের জন্য এমন উদ্যোক্তার খুবই প্রয়োজন৷