বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে সরকারের প্রচারণা মিথ্যা: মির্জা ফখরুল

0
264
Print Friendly, PDF & Email

রূপসীবাংলা –
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে আবার ফিরে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যে প্রচার করছেন তা সর্বৈব মিথ্যা ও অপপ্রচার। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চারটি শর্ত দিয়েছে এবং সেসব শর্ত পূরণ হলেই বিশ্বব্যাংক অর্থ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করবে।
তিনি বলেন, ‘‘সরকার বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে বলে যে কথা বলে বেড়াচ্ছে, এতেই প্রমাণিত হয়, এই সরকার সব সময় মিথ্যা কথা বলে। এবং এ জন্যই আমরা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলাম।’’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এ ধরনের বক্তব্যকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্বব্যাংক টাকা দেবে বলে মিথ্যা কথা বলেছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন, তখন বোঝা যায়, সরকার শপথ ভঙ্গ করেছে। এজন্য সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ।
তিনি সরকারের এ মিথ্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বলেন, সরকার এভাবেই মিথ্যাচার করে দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। তিনি ট্রেনের ভাড়া ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন, এর কারণে জনগণের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এটা প্রমাণ করে, এ সরকার জনগণের সরকার নয়।
তিনি বলেন, “পদ্মাসেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ফিরে আসেনি বরং তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার কথা বলেছে। অথচ সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা তাদের যোগ্যতার কারণে বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে বলে যে বক্তব্য দিচ্ছেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার।”
তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সরকারের দায়িত্বশীলদের মুখে এ ধরনের বক্তব্য জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিকৃত বক্তব্যের কারণে বিশ্বব্যাংক ক্ষুব্ধ হয়েছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার তারা ৪টি শর্ত দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। যা পূরণ হলেই কেবল তারা পদ্মাসেতুতে ফিরে আসার চিন্তা করবে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের যোগ্যতার কারণে বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও তাদের বিবৃতির অপব্যাখ্যা।”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংক তাদের বিবৃতিতে ৪টি শর্ত দিয়ে বলেছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠাতে হবে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা ছুটিতে থাকবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অধীনে তদন্ত কাজের জন্য একটি বিশেষ অনুসন্ধানী ও প্রসিকিউশন দল নিয়োগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেলকে সব তথ্য দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, তারা বিশ্বব্যাংক ও সহ-অর্থায়নকারীদের সরকারের তদন্তকাজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে পরামর্শ দেবেন।’’
‘‘নতুন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব শর্তের সন্তোষজনক বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ইতিবাচক প্রতিবেদনের পরই কেবল বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে সামনে এগোবে।’’
‘‘বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের মানুষ একটি স্বচ্ছ সেতু চায়। আমরা যদি এগিয়ে যেতে চাই, আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ওপর জোর দিচ্ছি।” ফখরুল বলেন, কিন্তু সরকার বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করছে, যা দেশের জন্য খুবই লজ্জাজনক। এ সময় বিশ্বব্যাংক এখনো পদ্মাসেতুতে অর্থায়নের নিশ্চয়তা দেয়নি বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
নিউইয়ার্কে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, তার এ ধরনের বক্তব্যে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘শপথ ভঙ্গ করার জন্য সরকারের পদত্যাগ করা উচিত’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ সরকারকে বিদায় দিয়ে শপথ রক্ষা করবে এমন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। সেজন্য নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।”
হলমার্কসহ বেশ কিছু দুর্নীতির বিষয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “বুধবার সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে, এখানে জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা কোনো মামলা করবে না। কোন সাহসে তারা এরকম সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের খুঁটির জোর কোথায়? আসলে সরকারের শীর্ষস্থানীয় লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত বলেই সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরকম সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পেয়েছে।”
সরকার সর্বক্ষেত্রে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ সরকারের দুর্নীতির খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে আমরা বিশ্বের কাছে জাতি হিসেবে আজ লজ্জিত ।”
রেলের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ে সেবার মান একটুও বৃদ্ধি পাবে না। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা লুটপাটের জন্যই সরকার এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু ট্রেন নয়, বিদ্যুত ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। অথচ সরকারের এদিকে কোনো খেয়াল নেই।”
‘সরকার হামলা-মামলা আর গুমে পারদর্শী ’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুর্নীতি আর লুটপাট করে আবারো তাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না। কারণ, দেশের অধিকাংশ জনগণ এখন বিএনপির পক্ষে।”
বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ বিএনপি দুর্বল হলে দেশের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে এ দলটির প্রার্থীরা কিভাবে জয়ী হন? বিএনপি দুর্বল নয়, বরং সরকারের সকল অপকর্ম আর নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে এবং দাবি আদায় করে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।”

শেয়ার করুন