২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ,মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম । ১১ দিনের এই কার্যক্রম চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ও জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি জেলা।
ইলিশ ও জাটকা ধরার পাশাপাশি সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বেশ কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানা গেছে।
এর অংশ হিসেবে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ১১ দিনে ইলিশ মাছের প্রজননস্থলে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন একত্রে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। এ সময় বিমানবাহিনীর বিশেষ দল আকাশপথে টহল দেবে। এই পদক্ষেপগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে মা ইলিশ রক্ষা পাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
সরজমিনে অনুসন্ধান করে এবং স্থানীয় সাধারণ জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রশাসনের পক্ষে কাগুজে অভিযান চললেও একটি প্রভাবশালী মহলের ইশারায় রাতের আঁধারে চলছে ইলিশ সংগ্রহ ও বিপণন। চোরাই পথে এসব মাছ ভারতে পাচার করা হচ্ছে। সাধারণ জেলেরা মাছ ধরতে না পারায় বাজারে ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। সুযোগ বুঝে আড়তদাররা তাদের মুনাফা লোটার কাজটি কষে ধরেছে। মাছের অভাব সৃষ্টির অজুহাতে দেড়গুণ/দু-গুণ দামে মাছ বিক্রি করছে তারা।
দেশের বাজারে ইলিশ মাছের দাম নিয়ে বরাবরই অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়তে বাড়তে ইলিশ চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ক্রেতার নাগালের বাইরে। অভ্যন্তরীণ বাজারে ইলিশের দাম কমানোর জন্যই ইলিশ রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে সেই বন্ধ রাখা ইলিশের দাম খুব একটা কমাতে পারেনি। এমনকি মোট ইলিশ উৎপাদন সম্পর্কেও এখন সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রচুর ইলিশ এখন সরকারের অগোচরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন, নদ-নদীতে ইলিশ ও জাটকার উৎপাদন বাড়লেও পাচার হয়ে যাওয়ার কারণে তা সরকারের হিসাবে আসছে না। ইলিশ পাচারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্রেতাদের ওপর। সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ রফতানি বন্ধ করা হলেও তার সুফল ভোগ করতে পারছে না ক্রেতারা। অন্যদিকে সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে।
বর্তমান সময়ের বড় সমস্যা হলো ইলিশের জাটকা নিধন বন্ধ করতে না পারা। পাশাপাশি ডিমওয়ালা মাছ ধরাও বন্ধ করা যায়নি। এই না পারা ইলিশের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
এখন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। সামনে পূর্ণিমা ৩০ সেপ্টেম্বর। পূর্ণিমার রাতসহ আগের ও পরের রাতে ইলিশ মাছ নদীর মোহনায় ডিম পাড়ে। এ সময় যে কোনো মূল্যে মা ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে। সরকার থেকে এরই মধ্যে উদ্যোগ এসেছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রতি বছর মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে পারে না। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মা ইলিশ বাজারে চলে আসে।
সরকারি হিসাবমতে, জাটকা নিধন বন্ধ অভিযানে প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এই অভিযান ইলিশের উৎপাদন বাড়ায়নি। ২০১০-১১ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার টন। পরের অর্থবছরেও একই পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে চালানো অভিযান কেন কাক্সিক্ষত সফলতার মুখ দেখে না তার কারণগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
মাছ ধরার সঙ্গে যারা জড়িত তারাই এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত নয়। যারা ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারা এই সময়টাতে বিকল্প কী কাজ করবে তার ব্যবস্থা না করে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাবে না। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে যদি জেলেদেরও যুক্ত করা যায় তাহলে বিকল্প সমাধান পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো অভিযানের জন্য কিছু বেশি টাকা প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু সফল অভিযানের জন্য এটা জরুরি।
প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে পারলে ইলিশের মোট উৎপাদন বাড়বে। তার সুবিধা ভোগ করতে পারবে দেশের ক্রেতারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এবারের অভিযান কাক্সিক্ষত সাফল্য পাবে এমন প্রতীয়মান হয়নি। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ইলিশের চোরাচালান বন্ধ করা।
রূপসীবাংলা –